আজকের যানজটের নেপথ্যে

Trafic Jam যানজটআজমী আনোয়ার, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ রাজধানীর মানুষ আজ সোমবার প্রচণ্ড যানজটের মধ্যে পড়েছেন। যানজটে কার্যত থমকে যায় মহানগর। দুর্ভোগের শিকার হন যাত্রীরা। সড়কে পরীক্ষামূলক ডিজিটাল সংকেত ব্যবস্থা চালু এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিআইপি) চলাচলই আজকের যানজটের কারণ বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এবং প্রত্যক্ষদর্শী, যাত্রী ও ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আজ সকাল থেকে প্রচণ্ড যানজট দেখা দেয়। ভিআইপি সড়কেও একই চিত্র।

যানজটের কারণে সড়কে তৈরি হয় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। এতে কখনো গাড়ির চাকা ছিল থমকে, কখনো ঘুরেছে ধীর গতিতে।

যানজটের কবলে পড়ে রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন যাত্রী ও চালকেরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁরা সড়কেই কাটান। এমনই একজন ভুক্তভোগী ব্যাংক কর্মকর্তা রোকেয়া বেগম। চার ঘণ্টায় মিরপুর থেকে মতিঝিল যাওয়ার পর তিনি বলেন, ‘গাড়ি তো আজ চলেই না। এ কেমন শহর? ’

উত্তরা থেকে তিন ঘণ্টায় ধানমন্ডি এসেছেন জানিয়ে আরেক ভুক্তভোগী নাহিদ হোসেন বলেন, আজ যানজট অসহনীয় রূপ নিয়েছে।

বিশেষ করে ভাড়ায়চালিত বিভিন্ন যানবাহনের চালকেরা এ প্রতিবেদকের কাছে যানজটের বিষয়ে তাঁদের ক্ষোভ জানান। তাঁদের আশঙ্কা, আজ খরচই উঠবে না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কাকলী থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ভিআইপি সড়কে পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল সংকেত ব্যবস্থা চালু এবং সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক উপলক্ষে ভিআইপিদের চলাচলের জন্য আজ রাজধানীতে বেশ যানজট।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে গত শুক্রবার থেকে সংশ্লিষ্ট সড়কে যান চলাচলে পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল সংকেত বাতি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেস বা ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনাবল এনভায়রনমেন্ট প্রকল্পের অধীনে দুই সিটি করপোরেশন ও ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ যৌথভাবে এই কার্যক্রম শুরু করে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার ভাষ্য, নতুন পদ্ধতি চালুর দিন সংশ্লিষ্ট সড়কে তেমন যানজট হয়নি। পরদিন শনিবার বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়। গতকাল রোববার ছিল সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস। এদিন শহরজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। আজ যানজট প্রকট আকার ধারণ করে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সূত্র জানায়, আজ সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক থাকায় প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চলাচলে সড়কে নিরাপত্তা দিতে হয়েছে। সড়ক উন্মুক্ত রাখতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে যানজট সৃষ্টি হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ডিজিটাল সিগন্যাল পদ্ধতির বিরূপ প্রভাব। এ দুটি বিষয় মিলিয়ে যানজটের পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে।

ট্রাফিক বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভাষ্য, সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের জন্য সড়ক উন্মুক্ত করতে এক ঘণ্টা লেগে গেছে।

ডিএমপি সূত্র জানায়, পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় আজ সকালে যানজট পরিদর্শনে বের হন কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। এ সময় তিনি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা ডিজিটাল সিগন্যাল পদ্ধতিকে ম্যানুয়াল করার নির্দেশ দেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ম্যানুয়াল পদ্ধতি বহাল রাখার কথাও বলা হয়েছে।

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশের পর আজ সকাল সোয়া নয়টার পর থেকে সংশ্লিষ্ট সড়কে ডিজিটালের বদলে ম্যানুয়াল সিগন্যাল পদ্ধতি পুনরায় চালু করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মোসলেউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূলত ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করতে গিয়ে এই যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া শুধু তো যানবাহনের কারণেই যানজট হয় না, অন্য কারণও আছে।
ট্রাফিক বিভাগ থেকে জানা গেছে, কাকলী থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ভিআইপি সড়কে ১১টি সিগন্যাল পয়েন্ট আছে। আছে রেলক্রসিং।

যানজট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেস প্রকল্পের প্রধান ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘ডিজিটাল সিগন্যাল বাতির পদ্ধতিটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। এর সমস্যাগুলো কীভাবে কাটানো যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ