সিটি নির্বাচনে সর্বোচ্চ ২১ গুণ বেশি ব্যয় প্রার্থীদের : টিআইবি

TIB টিআইবিমনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীরা নির্বাচন কমশিনের (ইসি) বেঁধে দেওয়া ব্যয়সীমা মানেননি। অনুমোদিত নির্বাচনী ব্যয়ের তুলনায় সর্বোচ্চ একুশ গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করেছেন তাঁরা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে।

‘ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০১৫: প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন আজ সোমবার প্রকাশ করা হয়। সকালে সংস্থার ধানমন্ডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় বলে সংস্থাটি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা উত্তরের জন্য নির্ধারিত ৫০ লাখ টাকার সীমার বাইরে তিনজন মেয়র প্রার্থী ২০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত বেশি ব্যয় করেছেন। ঢাকা দক্ষিণের তিনজন মেয়র প্রার্থী নির্ধারিত ৩০ লাখ টাকার সীমার বিপরীতে ১ কোটি ৪৬ লাখ থেকে ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেছেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জন্য নির্ধারিত ৩০ লাখ টাকার বিপরীতে তিনজন মেয়র প্রার্থীদের একজন সর্বোচ্চ ৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি জানায়, অধিকাংশ প্রার্থীর বিভিন্ন আচরণবিধি লঙ্ঘন, প্রার্থী কর্তৃক অনুমোদিত সীমার তিনগুণের বেশি ব্যয় এবং নির্বাচন কমিশনের দৃঢ় ভূমিকার অভাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষপাতিত্বের কারণে গত ২৮ এপ্রিল সমাপ্ত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনুমোদিত নির্বাচনী ব্যয়ের তুলনায় সাত, এগারো বা একুশ গুণ বেশি অর্থ ব্যয়িত হয়েছে। নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করে ব্যাপক ভোট জালিয়াতি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনেও ব্যর্থ হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের সারাংশ উপস্থাপন করেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার রেযাউল করিম। গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার দিপু রায় ও তাসলিমা আক্তার।
গবেষণায় বিভিন্ন পর্যায়ের ৮৭২ জন তথ্য দাতার কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, দলীয় সমর্থন পেতে চট্টগ্রামের মেয়র প্রার্থীরা ২০ লাখ টাকা থেকে ৭ কোটি টাকা সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, দলীয় তহবিল এবং ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতাদের দিয়েছেন। মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে এই অবৈধ অর্থ প্রদানে প্রার্থী নিজে ছাড়াও অর্থদাতা হিসেবে স্থানীয় ঠিকাদার, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের একাংশ জড়িত ছিলেন। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীরা উভয় ক্ষেত্রেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তুলনায় অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেছেন।
গবেষণার সুপারিশে খাত অনুযায়ী ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ, নির্বাচনী ব্যয় পরিবীক্ষণের বিধান ও ব্যয় সংক্রান্ত দাখিলকৃত রিটার্ন যাচাই বাছাই এবং প্রার্থীর হলফনামায় প্রদত্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী আইনের ব্যাপক সংস্কার ও তা হালনাগাদের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রচারণায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকে নির্বাচনী বিধির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। যোগ্যতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্বপালনে সক্ষম ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জোর দাবিও জানায় টিআইবি।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, আইনে নির্দলীয় নির্বাচনের কথা বলা হলেও বাস্তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এই দ্বৈত নীতির কারণেই নির্বাচনে নানা অনিয়ম দেখা যায়। এ‌ ক্ষেত্রে নির্বাচনী আইনটি পরিবর্তন করে দলীয় করা যেত পারে, যাতে দলীয় প্রার্থী ছাড়া অন্য কেউ মনোনয়ন না পায়। এতে আর্থিক অনাচার ও অনিয়মের সুযোগ কমে আসবে। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রবর্তনেরও দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তিনটি সিটি করপোরেশনের ১৩৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টি ওয়ার্ডকে দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে নমুনা এলাকা নির্ধারণ করে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ জন মেয়র এবং ১০১ জন সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। তবে এই গবেষণার পর্যবেক্ষণ সব প্রার্থী ও কেন্দ্রের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য নয়।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ