সোহেল রানার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আজমী আনোয়ার, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নির্ধারিত সময়ে সম্পদের হিসাব না দেওয়ায় সাভারের ধসে পড়া রানা প্লাজার কর্ণধার সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বুধবার দুপুরে দুদকের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা করেন।
এর আগে গত সোমবার রানার বিরুদ্ধে ‘নন-সাবমিশন’ মামলার অনুমোদন দেন দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান।
গত ২ এপ্রিল কাশিমপুর কারাগারে আটক সোহেল রানার কাছে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ পাঠায় দুদক। আইন অনুযায়ী, নোটিশ পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে আইনজীবীর মাধ্যমে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব দুদকে জমা দিতে হয়। অবশ্য এ সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে ব্যর্থ হলে আরও সাত কার্যদিবস সময় বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ আইনে রয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, নোটিশ পাওয়ার নির্ধারিত সময়ে সম্পদ বিবরণী জমা না দিয়ে স্ত্রীর মাধ্যমে সময় বাড়ানোর আবেদন করেন সোহেল রানা। আইন অনুসারে তাঁর এ আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় বলে দুদকের আইন শাখা মতামত দিয়েছে। আইন শাখা থেকে রানার বিরুদ্ধে নন-সাবমিশন মামলা দায়েরের সুপারিশ করা হয়।
নির্মাণ ত্রুটির কারণে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজায় ভয়াবহ ধসের ঘটনা ঘটে। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ওই বছরের ২৯ এপ্রিল বেনাপোল থেকে সোহেল রানাকে থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
ভবন ধসের পরদিনই সোহেল রানার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের ঘোষণা দিয়ে ২৮ এপ্রিল দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে কমিশন। ওই বছরের ১৫ মে অনুসন্ধান দল সোহেল রানার সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ জারির সুপারিশ করে। কিন্তু সোহেল রানা কারাগারে থাকায় আইনি জটিলতায় সেটা সম্ভব না হওয়ায় প্রায় দুই বছর পর চলতি বছরের ২ এপ্রিল কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ জারি করা হয়।
অন্যদিকে, নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণের অভিযোগে রানার বাবা, মা ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৫ জুন মামলা করেছিল দুদক। ওই মামলায় রানাকে আসামি করা হয়নি।
জানা গেছে, রানার বেশির ভাগ সম্পদই তার বাবা ও মায়ের নামে। প্রায় ১৭ কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ বছরের ১২ এপ্রিল রানার বাবা আব্দুল খালেক ও মা মর্জিনা বেগমের বিরুদ্ধে দুটি আলাদা মামলা করেছে দুদক। তাঁদের স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে সাভার বাসস্ট্যান্ডে ধসে যাওয়া ভবনের ৫০ শতাংশ জমি, সাভার বাজার রোডে আট তলা বাণিজ্যিক ভবন, বাজার রোডের বি-৬৯/১ ঠিকানায় পাঁচ তলা আবাসিক ভবন, রানা প্লাজার পেছনে সুমি টাওয়ার নামে ছয় তলা আবাসিক ভবন, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে জয়মন্ডপ নামক জায়গায় দোতলা বাড়ি, রানা ব্রিকস, এমএকে ব্রিকস নামের দুটি প্রতিষ্ঠান ও রানা অয়েল মিল। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, এক্সিম ব্যাংকের সাভার বাজার শাখায় ৩৫ লাখ টাকার এফডিআর, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাভার শাখায় তিনটি হিসাব এবং ব্র্যাক ব্যাংক সাভার বাসস্ট্যান্ড শাখায় দুটি হিসাবে থাকা অর্থ।
রানা প্লাজার ছয় তলা ভবনটি নকশা বহির্ভূতভাবে ১০ তলা পর্যন্ত নির্মাণে রানার প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। রানার বাবা আব্দুল খালেক ভবনের মালিক হলেও ভবনটির পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করতেন রানা। তার নামেই ছিল ভবনটি। ভবন ধস ও এক হাজার ১৭৫ জন পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর পেছনে রানার প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।