ডায়াবেটিসের তিন ওষুধে সতর্কতা !
স্বাস্থ্য ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ডায়াবেটিসের নতুন তিনটি ওষুধ সম্পর্কে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ওষুধ হিসেবে ক্যানাগলিফলোজিন, ড্যাপাগলিফলোজিন ও এমপ্যাগলিফলোজিন নামের তিনটি নতুন ওষুধ এখন বাজারে পাওয়া যায়। এই ওষুধ সেবনে রক্তে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে এমনকি রোগীর শরীরে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) সতর্ক করেছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তদন্তও করছে ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা টাইপ-টু ডায়াবেটিসের যে তিনটি ওষুধ নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে তার মধ্যে দুটি সম্প্রতি ভারতের বাজারে এসেছে। এফডিএ এখন এই ওষুধ সেবনে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে তার নজরদারি শুরু করেছে। সংস্থাটি দাবি করেছে, নতুন এই তিনটি ডায়াবেটিসের ওষুধ অ্যাসিডোসিস তৈরি করছে যা মারাত্মক হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। কারণ এগুলো রক্তে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা মারাত্মক বিরূপ প্রভাব তৈরি করতে পারে।
ডায়াবেটিসের এই তিনটি ওষুধ এসজিএলটি-টু ইনহিবিটর নামের নতুন একটি শ্রেণির মধ্যে পড়ে যা রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে ব্যবহার করা হয়। এ ওষুধ কিডনিকে পথ হিসেবে ব্যবহার করে প্রস্রাবের মাধ্যমে চিনি বের করে দেয়। অন্যান্য টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ওষুধ কিডনির পরিবর্তে অগ্ন্যাশয়কে পথ হিসেবে ব্যবহার করে।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ এই তিনটি ওষুধকে এখনো নিষিদ্ধ করেনি। তবে চিকিৎসকদের এই ওষুধ ব্যবহারে সতর্ক করে দিয়েছে। এ ধরনের ওষুধ দেওয়ার আগে অ্যাসিডের মাত্রা নির্ণয় করে নিতে পরামর্শ দিয়েছে। এ ধরনের ওষুধ সেবনের পরে যদি শ্বাসকষ্ট, বমি, পেটব্যথা, নিদ্রাহীনতার মতো উপসর্গ দেখা দেয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটি সতর্ক করে বলছে, ডায়াবেটিসের ওষুধের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলবে এবং এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনার দরকার হবে কিনা তা জানানো হবে। তবে এখনই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের ওষুধ সেবন ছেড়ে না দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে তারা।
ভারতেও ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় এখন এ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়। ক্যানাগলিফলোজিন, ড্যাপাগলিফলোজিন ওষুধ দুটি সম্প্রতি ভারতে ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। দেশটির চিকিৎসকেরা বলছেন, এখনো এই ওষুধ সেবনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলাফল তারা জানতে পারেননি।
ভারতের শীর্ষ এনডোক্রিনোলজিস্ট ডা: অনুপ মিশ্র বলেন, ‘এগুলো সম্ভাবনাময় ওষুধ তাই আমরা এই ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিই। কিন্তু এফডিএ সতর্ক করার পর এই ওষুধ সেবনের রোগীর কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না সে বিষয়টির ওপর খেয়াল রাখব।’
২০১২-১৩ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতে ডায়াবেটিসের এই তিনটি ওষুধ সহজলভ্য। এই ওষুধ তিনটির অনুমোদন পেতে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। কিন্তু ওষুধ বাজারে আসার খুব কম সময়ের মধ্যেই নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে এই ওষুধ নিয়ে সতর্ক বার্তা পাওয়া দুর্লভ ঘটনা।
গবেষকেরা বলেন, অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ। তখন রক্তে চিনি বা শর্করার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। ইনসুলিনের ঘাটতিই হলো এ রোগের মূল কথা। টাইপ-টু বহুমূত্র রোগের পেছনে থাকে মূলত ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’। টাইপ-টু রোগীর শরীরে যে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়, শরীর তা ব্যবহার করতে পারে না। চিকিৎসকদের পরামর্শ হচ্ছে, টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে জীবনধারায় আগে থেকেই পরিবর্তন আনতে হবে। সুষম ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন হ্রাস ইত্যাদির মাধ্যমে ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।