যেকোনো আত্মত্যাগে আমি প্রস্তুত: প্রধানমন্ত্রী

sheikh hasina shekh শেখ হাসিনামনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালি জাতির জন্য যেকোনো ধরনের আত্মত্যাগে তিনি প্রস্তুত আছেন। সব বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আজ শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক কমিটির দেওয়া সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির জনক সব সময় একটি কথা বলতেন, তাঁর কথা কোট করেই আমিই বলতে চাই, “মহৎ অর্জনের জন্য মহান ত্যাগ চাই। ” যেকোনো অর্জনের জন্য ত্যাগের মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কী অর্জন করেছি সেটি বড় কথা নয়। বাংলাদেশকে আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে হবে। আমি মৃত্যুকে ভয় করি না। জন্ম যেহেতু হয়েছে, মৃত্যু তো হবেই। স্বজনদের হারিয়েই তো বেঁচে আছি।’
স্থলসীমান্ত চুক্তিকে রাজনৈতিক সফলতা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্থলসীমান্ত চুক্তি করতে তৃতীয় কোনো দেশের সহায়তা লাগেনি। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই আমরা এ সমস্যার সমাধান করেছি। এটি আমাদের রাজনৈতিক সফলতা।’ তিনি বলেন ভারতীয় সংসদে সব দল নির্বিশেষে সবাই স্থলসীমান্ত চুক্তির পক্ষে ভোট দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে অনেকে “বটমলেস বাস্কেট” বলেছিলেন। আমি আজ সে কথার জবাব দিয়ে বলতে চাই, ঝুড়ি এখন তলাবিহীন হয়, উন্নয়নে ভরপুর।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের এত আত্মত্যাগ। এত আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ তাঁকে দেওয়া সংবর্ধনা সম্পর্কে বলেন, ‘দেশের মানুষের জন্য কাজ করায় আমাকে যে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে এর প্রাপ্য কেবল আমার নয়, এটা বাংলার মানুষের প্রাপ্য।’
শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর বহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করি। ২০০৯ সালে আবার সরকার গঠন করে দেশের উন্নয়নে কাজ শুরু করি। আমি বাংলার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। তাই এ সংবর্ধনা আমার প্রাপ্য নয়, এ সংবর্ধনা বাংলার মানুষের প্রাপ্য।

এর আগে বিকেল সোয়া চারটার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোহরাওয়ার্দীর সংবর্ধনা মঞ্চে পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রী আসতেই জাতীয় সংগীত বাজানো হয় অনুষ্ঠানস্থলে। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি কবি শামসুল হক।

বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে শেখ হাসিনার স্মারক হিসেবে নৌকা প্রতীক তুলে দেওয়া হয়। এর পর অভিজ্ঞানপত্র পড়ে শোনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অভিজ্ঞানপত্রে বলা হয়, শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দেশ সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে। এ জন্য জাতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি অনেকের কাছে আদরের হাসিনা। অনেকের কাছে আপা, অনেকের কাছে নেত্রী। আপনি এ দেশের জনগণের মানুষের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর পর এত শ্রদ্ধা, ভালোবাসা কেউ পায়নি। সে জন্য আমরা বারবার আপনার কাছে ফিরে আসি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসে বলেছিলেন তিনি অসমাপ্ত করতে এসেছেন। তিনি কথা রেখেছেন। দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য প্রতিটি মুহূর্ত কাজ করে যাচ্ছেন। আতিউর রহমান ২০০৯ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়কে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধে জয়ের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকের গর্ভনর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী আমার মোবাইল ফোনে ‘ওয়ার্ক ফর দা পুওর’ লিখে খুদে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেটি আমার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ ছিল।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান ক্রিকেটসহ ক্রীড়াঙ্গনে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সব ধরনের সহযোগিতার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় আধুনিক ক্রীড়া অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। তাঁর অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে যে অবস্থায় খেলা হয়, তিনি খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। হারলেও মনোবল না হারাতে বলেন। এটা পরবর্তী জয়ে অবদান রাখে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, তিনি যখন নির্বাসনে ছিলেন তখনো একটা সংস্কৃতি ছিল। তা হলো ভয়ের সংস্কৃতি, শঙ্কার সংস্কৃতি। কিন্তু তিনি তা অতিক্রম করে দেশে ফিরেছেন। সাহসের সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছেন। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে তিনি বিচারের সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ ছাড়া আরও বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শিক্ষাবিদ অনুপম সেন, অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান প্রমুখ।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ