বেশি দামে গম, সরকারের ক্ষতি ১০০ কোটি টাকা
মেহদী আজাদ মাসুম, বিশেষ প্রতিনিধি, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : প্রয়োজন নেই, তবুও বাজার দরের চেয়ে ১০ টাকা বেশি দিয়ে ১ লাখ টন গম ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। আর এমন উদ্যোগের ফলে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মন্ত্রী-সাংসদ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের স্বার্থে সরকার এই গম ক্রয় করতে যাচ্ছে। মন্ত্রী-সাংসদ ও নেতাদের চাহিদাপত্র দেওয়ার পর সরকার অতিরিক্ত গম সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়। বাজারে প্রতি কেজি গমের দাম ১৮ থেকে ২০ টাকা। আর সরকার কিনছে ২৮ টাকা দরে। প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা মুনাফার কারণে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা সরকারি গুদামে গম সরবরাহে বেশ উৎসাহী হয়ে উঠেছেন।
সূত্র আরো জানায়, সরকারি গুদামে বর্তমানে ৩ লাখ ১৫ হাজার টন গম রয়েছে। খাদ্য বিভাগের দৈনিক খাদ্যশস্যবিষয়ক প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, রাশিয়া থেকে আনা গম পরিবহন খরচসহ দেশের বাজারে পড়ে ১৯ টাকা কেজি। কিন্তু সরকার কৃষকের নাম করে ওই গম ২৮ টাকা কেজি দরে কিনছে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নতুন করে এক লাখ টন গম কেনায় সরকারের বাড়তি ১০০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে।
জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব হোসেন এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, বাজারদরের সঙ্গে গমের সংগ্রহমূল্যের পার্থক্য ১০ টাকা। এটা অস্বাভাবিক। সাধারণত এ পার্থক্য হয় দুই থেকে তিন টাকা। অতিরিক্ত মুনাফার কারণেই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত হয়ে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।
সূত্র জানায়, সরকারি গুদামে গম সংগ্রহ বাড়াতে সরকারদলীয় ৮০ জন নেতা খাদ্যমন্ত্রীর কাছে চাহিদাপত্র বা ডিও লেটার পাঠিয়েছেন। তাদের মধ্যে ছয়জন মন্ত্রী, ৬০ জন সাংসদ এবং অন্যরা সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাংসদের মনোনীত ব্যক্তিরা গম সরবরাহ করছেন বলে জানা গেছে। কয়েকটি এলাকায় আবার সাংসদেরা নিজেই গম সরবরাহ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে গম সংগ্রহ করছি। সাংসদ ও চেয়ারম্যানরা তার এলাকায় বরাদ্দ রাখার জন্য চাহিদাপত্র পাঠাতেই পারেন। এটা দোষের কিছু না। তবে আমরা কৃষক ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে গম নিচ্ছি না।’
গম সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো মন্ত্রীরা হলেন ভূমিমন্ত্রী ও পাবনা-৪ আসনের সাংসদ শামসুর রহমান শরীফ, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, নওগাঁ-৪ আসনের সাংসদ বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। নওগাঁ-২ আসনের সাংসদ ও হুইপ মো. শহীদুজ্জামান সরকারও এই তালিকায় রয়েছেন।