রাজনীতি ছাড়তে পারেন সৈয়দ আশরাফ !
মেহদী আজাদ মাসুম, বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সব চেয়ে কঠিন সময় অতিবাহিত করছেন। নিষ্ক্রিয়তায় দপ্তরবিহীন হওয়ার পর প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা নিয়ে হিসেব-নিকেশ কষছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য মনে করছেন, ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের পদটি নিয়ে আর হয়তো সক্রিয় হতে চাইবেন না সৈয়দ আশরাফ। পদ ছাড়ার পাশাপাশি সরে দাড়াতে পারেন রাজনীতি থেকেও।
‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি, দপ্তরবিহীন মন্ত্রী’ এসব নিয়ে গত দু’দিনে মুখ খোলেননি সৈয়দ আশরাফ। মন্ত্রণালয় হারানোর পর এই দিন (বৃহস্পতিবার) পূর্ব নির্ধারিত যুবলীগের ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানেও সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নেরই জবাব দেননি সৈয়দ আশরাফ। তবে তার দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সহযোগিরা বলছেন নানা কথা। সৈয়দ আশরাফ রাজনীতিতে আরো নিষ্ক্রিয় হয়ে পররবেন, এমন আভাষ দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সৈয়দ আশরাফের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, ‘ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের পদটি টিকিয়ে রাখা সৈয়দ আশরাফের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে তিনি এখানে এসেছিলেন। এখন আর হয়তো তিনি এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে অগ্রসর হতে চাইবেন না। দলের পদই নয়, গুডবাই জানাতে পারেন রাজনীতিকেও।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর অন্যতম সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সৈয়দ আশরাফকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে দলকে বেশি সময় দেওয়ার বিষয়টি সামনে নিয়ে বলেন, ‘হয়তো প্রধানমন্ত্রী মনে করেছেন, সৈয়দ আশরাফ অতিরিক্ত ভার বহন করছেন। দলে আরও বেশি সময় দেওয়ার জন্য হয়তো দপ্তরবিহীন করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন এবিসিনিউজকে বলেন, ‘এখন দলে আরও বেশি সময় দিতে পারবেন সৈয়দ আশরাফ। তার নেতৃত্বগুণ, সততা ও দলের প্রতি অনুরাগ নিয়ে কারোরই কোনো প্রশ্ন নেই। তবে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ফলে সৈয়দ আশরাফ দলে বেশি ভূমিকা রাখতে পারবেন, এমন প্রচার কিন্তু তার জন্য অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি করবে।’
সরকারের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গত ৭ জুলাই (মঙ্গলবার) একনেকের সভায় ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ উত্থাপন করা হয়, যা সাংসদের ইচ্ছে পূরণ প্রকল্প নামে পরিচিত। প্রত্যেক সাংসদকে এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হবে। সৈয়দ আশরাফ এই প্রকল্পের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানিয়েছিলেন, এই প্রকল্পের বেশিরভাগ অর্থই বেহাত হবে। সভায় সাংসদদের (ইচ্ছা পূরণ প্রকল্পের) জন্য ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ অনুমোদন দেওয়া হয়। সৈয়দ আশরাফ সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৮ এপ্রিলের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে সরকারের নির্দেশনা যাওয়া নিয়েও সৈয়দ আশরাফ অসন্তুষ্ট ছিলেন। এটি পদ্ধতিগতভাবে সঠিক না হওয়ায় আগের প্রস্তাব ফেরত এনে পরে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নতুন করে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়। জেলা পরিষদে সরকারের মনোনীত প্রশাসক দেওয়াসহ আরও কিছু নীতিনির্ধারণী বিষয়ে আশরাফের স্বতন্ত্র একটা মনোভাব ছিল।
সৈয়দ আশরাফ আগামী ১৫ জুলাই লন্ডনে যাচ্ছেন। সেখানেই তিরি তাপরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ উদযাপন করবেন। দলের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ আশরাফের ঘনিষ্ঠরা এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, আশরাফের স্ত্রী ও মেয়েরা লন্ডনে থাকেন। তিনি পরিবারের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, গত ৯ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সৈয়দ আশরাফকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এই দিন বিকেলে মন্ত্রিপরিষদের এক প্রেসনোটে এই অব্যহতির কথা জানান হয়। সৈয়দ আশরাফ দপ্তরবিহীন মন্ত্রী থাকবেন বলেও প্রেস নোটে উল্লেখ করা হয়।