অপরাধীরা আওয়ামী লীগের, গ্রেফতারে অনিহা পুলিশের
মেহদী আজাদ মাসুম, বিশেষ প্রতিনিধি, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলামকে ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে গুলি, বিএল কলেজে শিক্ষককে মারধর, মাগুরায় মায়ের পেটে শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়ার মত আলোচিত ঘটনার মূল অপরাধীদের কেউই গ্রেফতার হয়নি। মামলা হলেও আসামিরা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোয়ার বাইরে। অভিযোগ উঠেছে, এসব ঘটনার অপরাধীরা সবাই সরকার সমর্থিত, আার সে কারনে গ্রেফতারে অনিহা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
গত ২৮ জুলাই মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মুগদা থানার মানিকনগর বিশ্বরোডের এলাকায় ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল বাসিত খানের কার্যালয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল বাসিত খান নিজেই শফিকুলকে বাসা থেকে ডেকে নেন। তার দু’পায়ে চারটি গুলি করা হয়েছে। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ ঘটনায় মুগদা থানায় মামলা হলেও ঘটনার মূল নায়ক ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে আসামি করতে অপারগতা ছিল পুলিশের। এমন অভিযোগ করেন শফিকুলের চাচাতো ভাই আবু বকর সিদ্দিক। তিনি বলেন, থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ অভিযোগ পত্র থেকে কাউন্সিলরের নাম বাদ দিতে বলেন। কাউন্সিলর বাসিত খান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।
গত ৩০ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনার সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক সহকারী অধ্যাপককে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের ঘটনায় এই দিন রাতে দৌলতপুর থানায় মামলা হলেও এই রিপের্ট লেখার সময় পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
জানা গেছে, বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র দীপংকর টার্ম পেপারে তত্ত্বাবধায়ক শিক্ষকের নাম ভুল লেখায় সহকারী এই অধ্যাপক বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে বিভাগে এসে ভুল সংশোধন করে যেতে বলেন। এতে ক্ষুব্দ হয়ে দীপংকর ও খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক উজ্জ্বল একদল সন্ত্রাসী নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে এসে ওই সহকারী অধ্যাপককে মারধর শুরু করেন। এসময় মারধরের শিকার সহকারী অধ্যাপক দৌড়ে বিভাগীয় প্রধানের কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা তাঁকে সেখান থেকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। অন্য শিক্ষকদের বাধার মুখে সহকারী অধ্যাপক রক্ষা পান। পরে ছাত্রলীগের ওই কর্মীরা বিভাগের চেয়ার-টেবিল, আলমারি ভাঙচুর করে। এই দিন (৩০ জুলাই) রাতেই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে ছাত্রলীগ নেতা দীপংকর, উজ্জ্বল ও দিদারের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১৫ জনকে আসামি করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন।
গত ২৩ জুলাই মাগুরায় মায়ের পেটে শিশু গুলিবিদ্ধের ঘটনা ঘটে। শহরের দোয়ারপাড়া এলাকায় ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন আন্ত:সত্ত্বা নাজমা বেগম। গুলি মায়ের পেটে শিশুর শরীরও এফোঁড়-ওফোঁড় করে ফেলে। ঘটনার সময় গুলিতে আহত হন নাজমার চাচা শ্বশুর মমিন ভূঁইয়া। একদিন পর (২৪ জুলাই) তিনি মারা যান। মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশুটি এখন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন।
গুলিবিদ্ধ‘শিশুটির পিঠ দিয়ে গুলি ঢুকে বুক দিয়ে বেরিয়ে গেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। শিশুটির হাতে-গলায় জখম। চোখটা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ডান চোখের ভেতর রক্ত জমা।
আলোচিত এ ঘটনার এক দিন পর মাগুরা সদর থানায় শিশুটির চাচা রুবেল ভূঁইয়া জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সেন সুমনসহ ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন। পুলিশ এ মামলার প্রধান আসামিসহ একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি। স্বজনদের অভিযোগ, আসামিরা সবাই সরকার সমর্থিত ছাত্রলীগের নেতা, তাই পুলিশ তাদের ধরছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, ‘আসামিদের পুলিশ ধরছে না, এমন অভিযোগ ঠিক নয়। একথা সত্য, হয়তো একটু সময় লাগছে। তবে কেউই ধরা-ছোয়ার বাইরে থাকবে না।’