থামছে না কোমলমতি শিশু নির্যাতন!
আনোয়ার আজমী, বিশেষ প্রতিনিধি, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : থামছে না শিশু নির্যাতন! ছোট-খাট অপরাধের অভিযোগ তুলে নির্যাতন করে হত্যা করা হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের।
দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, চিকিৎসক, অভিভাবক ও শিশুরা এসবের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষে ফেটে পড়লেও যেন কোন কিছুতেই থামছে শিশুদের প্রতি পৈচাশিক নির্যাতন। সিলেট, খুলনা ও বরগুনায় পৈশাচিক নির্যাতনে শিশু হত্যার পর ১৭ আগষ্ট রাজধানীর হাজারীবাগে ছাত্রলীগের থানা সভাপতি রাজা মিয়া নামে কিশোরকে বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন হাজারিবাগ গিয়ে জানা যায়, ১৭ বছর বয়সী রাজা মিয়া নামের এই কিশোরকে মোবাইল চুরির অভিযোগ তুলে হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আরজু মিয়া তার বাসায় নিয়ে বর্বর নির্যাতন চালায়। বেধড়ক পিটুনি ও নির্যাতনের পর অজ্ঞান হয়ে পরা রাজাকে পরিবারের সদস্যরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজা হত্যায় জড়িত সন্দেহে আরজু মিয়াকে রাত ৯টায় র্যাব আটক করেছে বলে শোনা গেলেও এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে সন্ধ্যায় স্থানীয় ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, ছাত্রলীগ কর্মী সুমন ও সুজনকে আটক করেছে বলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবিসিনিউজবিডিকে নিশ্চিত করেছেন।
হাজারীবাগ থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার সকালে মোবাইল চুরির অভিযোগে আরজু বাসায় নিয়ে যায় রাজাকে। সেখানে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।’
হাজারীবাগের ৪৬ গণকটুলিতে থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আরজুর বাসা। তার বাবার নাম আবদুল হক। তাদেরই প্রতিবেশী রাজা মিয়া। রাজার ফুফু রতœা বেগম জানান, রাজাকে মোবাইল ও ল্যাপটপ চুরির কথা বলে আরজু তাদের তিন তলা বাড়ির দোতলায় নিয়ে মারধর করে।
রাজার বোন রেশমা জানান, তার ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি ১১টার দিকে আরজুর বাসায় যান। সেখানে গিয়ে আরজুর মায়ের পা চেপে ধরে ভাই রাজার প্রাণভিক্ষা চান। তাকে ছেড়ে দিতে কাকুতি-মিনতি করেন। এরপরও রাজাকে ছাড়াতে না পেরে রেশমা চলে আসেন।
বিকাল ৪টায় রাজা অচেতন হয়ে পড়লে তাকে বাসায় রেখে চলে যায় আরজু। এ সময় রাজাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক জানিয়েছেন, দুই পা, দুই হাত ও কপালে গুরুতর জখমের চিহ্ন আছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে নেয়া হয়েছে।
রাতে রাজাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। মৃত্যুর খবর শুনে প্রতিবেশীসহ শত শত মানুষ তাদের বাসায় ভিড় জমান। রাজার বোনদের বুকফাটা আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠে। তার বোনরা বারবার ভাইকে ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে চিৎকার করে কাঁদছিলেন। ৩ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে রাজা সবার ছোট। রাজার বাসাও ৪৬ গণকটুলিতে। তার বাবার নাম বাবুল মিয়া। তিনি চোখের অসুস্থতার কারণে কয়েকদিন থেকে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি আছেন। হাসপাতালে থেকেই তিনি ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পান।
৮ জুলাই চুরির অপবাদ দিয়ে সিলেটে শিশু রাজনকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে ও খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। এর পর ৩ আগস্ট খুলনার টুটপাড়ার রাকিব (১৩) নামের এক শিশুকে কমপ্রেসর মেশিনে দিয়ে মলদ্বারে বাতাস ঢুকিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। একই দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কম্পাউন্ডে লাগেজের ভেতর পাওয়া যায় আনুমানিক ৯ বছর বয়সের এক শিশুর লাশ। ১৩ এপ্রিল রাজধানীর খিলক্ষেতের মস্তুল এলাকায় কবুতর চুরির অপবাদ দিয়ে ১৬ বছরের কিশোর নাজিম এবং বরগুনায় রবিউলকে বর্বর নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।