বিদেশি হত্যায় বিএনপি-জামায়াতের মদদ আছে : প্রধানমন্ত্রী

মনির হোসেন মিন্টু, বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা(৪ অক্টোবর)  : ইতালি ও জাপানি নাগরিক হত্যাকাণ্ডে বিএনপি-জামায়াতের হাত থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে নিশ্চয় উদ্দেশ্য আছে।’

যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে আজ রোববার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি-জামায়াত জোটের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ঘটনার পেছনে নিশ্চয় তাদের মদদ আছে। আমাদের অর্জনগুলো ম্লান করানোর জন্য এই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়। এটার পেছনে নিশ্চয় একটা উদ্দেশ্য আছে। তাদের হাত আছে।’ তবে বিদেশি নাগরিকদের হত্যায় যারা জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার ও বিচার হবে বলেও আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

news_img (1)দুজন বিদেশি নাগরিক হত্যার বিষয়ে সমকাল সম্পাদক গোলাম সারোয়ারের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুজন বিদেশি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের হত্যার স্টাইলটা একই রকম। ইতালি নাগরিককে চারটি গুলি মারা হয়েছে। একটা গুলিও মিসফায়ার হয়নি। চারটা গুলিই তাঁর লাগল। তার মানে কি এটা সুপরিকল্পিত। আমি তার আগে একটু স্মরণ করাতে চাই, এর আগে বিএনপির এক নেতার বক্তব্য। এর পরে তার রিঅ্যাকশন। সেগুলো যদি মিলিয়ে দেখেন—তাহলে জিনিসটা খুব স্পষ্ট হয়ে যায়।’

প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল না আসার প্রসঙ্গে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল যে আসল না, অস্ট্রেলিয়ায় কী ঘটল? সেখানেও সঙ্গে সঙ্গে দুজনকে গুলি করে মারল। আমি জানি না, আমাদের মিডিয়াগুলো হাইলাইটস করেছে কি না। অস্ট্রেলিয়া কী জবাব দেবে। যেসব দেশ বাংলাদেশে একজন হত্যার পর রিঅ্যাকশন দেখাল, তারা অস্ট্রেলিয়ার এই হত্যাকাণ্ড এবং আমেরিকার স্কুলে গুলি করে হত্যা করার পর কী করল। তারা কী সেখানে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে, এখানে রেড অ্যালার্ট হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ায় দুজনকে মারা হলো, তারা সেখানে কী করেছে। আমরা একটা ঘটনা ঘটলে বেশি সেনসেটিভ হয়ে যাই। অর্জনগুলো যেন শ্যাডো হয়ে গেল। অর্জনগুলো হারিয়ে গেল। আমরা এত মানসিক দৈন্যে কেন ভুগি।’

তিনি বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটেছে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। যারা এগুলো ঘটাবে…অবশ্যই এখানে পরিকল্পিত কিছু তো আছেই। আপনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন। তারাই ’৭৫-এর পর ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল। আজকে তাদের যখন আমরা বিচার করছি। তার কিছু রিঅ্যাকশন তো হবেই। এখানে কিছু গণসচেতনতা দরকার।’
দলের লোকজনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানেই থাকি। এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ, যখন যে ঘটনা ঘটছে খবর পাচ্ছি। ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছি। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কাজেই আমি আপনাদের বলব—সব অর্জন একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল এই ঘটনায়; এই যদি আপনাদের চিন্তা-ভাবনা হয়, তাহলে আমার মনে হয় ওই বিএনপি-জামায়াত রাজাকারদের যে উদ্দেশ্য—সেটাই সফল।

সৌদি আরবের নাগরিক খালাফ হত্যার বিচার করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালাফ হত্যার বিচার করছি। তাদের (সৌদি আরব) বিচারিক ব্যবস্থা এবং আমাদের বিচারিক ব্যবস্থা তো আলাদা। তারা তো পেলেই গলা কেটে দেয়। আমরা তো তা করতে পারি না। তখন তো আপনারাই চিল্লাবেন। গেল গেল সব গেল। মানবাধিকার লঙ্ঘন হলো। খুনিদের মানবাধিকার নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এটাই হলো আমাদের দেশের চরিত্র।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা, মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে বিদেশি সরকার প্রধানদের মনোভাবের বিষয়ে এটিএন বাংলার এডিটর ইন চিফ মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের করা প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, নেদারল্যান্ডসের রানি, সুইডেন ও বেনিনের প্রধানমন্ত্রী কেউ এসব বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেননি।

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, মন্ত্রী যাঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কেউ বাংলাদেশে সংকট বা ইলেকশন এসব বিষয়ে আলোচনাই করেন নাই। বরং বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকেই তারা সাধুবাদ দিয়েছেন। বাংলাদেশই ওখানে অন্য রকম ফোকাল পয়েন্ট ছিল। বাংলাদেশ কীভাবে করে, কীভাবে এত উন্নতি করল।’ অনেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার প্রস্তাবও দিয়েছেন বলে জানান তিনি। বাংলাদেশে সফররত ব্রিটিশ সাংসদ অ্যান মেইনও বাংলাদেশে কোনো সংকট দেখতে পাচ্ছেন না বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা গ্রুপ আছে—যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং সেটা তারা করতে থাকবে। আজকে আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পেরেছি, এটাই অনেকের পছন্দ না। কেউ কেউ মতামত দিয়ে ফেললেন—আর্মি নাকি আমার পুরো কন্ট্রোলে। এ জন্য আর্মি কিছু করতে পারছে না। যিনি এটা বলেছেন, তিনি কি আর্মিকে নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। কিন্তু গাছ থেকে ফল পড়ে নাই। যে যেভাবে ব্যাখ্যা দিক, বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন আমাদের সব থেকে অগ্রগণ্য।’

বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনাকে বিদেশিরা ভালোভাবে নেয়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব আর তারা চুপ করে বসে থাকবে, এটা ভাবলেন কি করে? তারা তো তাদের প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকবেই।’
বাংলা নববর্ষে উৎসব ভাতা চালু করা নিয়ে একজন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই উৎসবে সবাই যোগ দেয়। সার্ব জনীনভাবে এই উৎসব পালন হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়ে পয়লা বৈশাখে আমরা উৎসব বোনাস দিয়েছি।’
এ সময় তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা সংবাদপত্রের মালিকরা ঠিকমতো দেবেন তো বোনাসটা? টেলিভিশন, সংবাদপত্র, মানে ইলেকট্রনিক মিডিয়া আর সংবাদপত্রের মালিকরা বোনাসটা দিয়ে দিলে আমি খুশি হব। আশা করি, এটা দেবেন সবাই।’ পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেতে কবি সুফিয়া কামাল নিয়ে তাঁর একটি সংগ্রামের কথাও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

দল এবং সরকারের দূরত্ব ঘুচানো নিয়ে একাত্তর টিভির প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবুর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা গাছ যখন বেড়ে ওঠে, সে কাছের শিকড় থাকে। আপনি গাছটা দেখেন, ফুলটা দেখেন, ফলটা দেখেন। কিন্তু শেকড়টা দেখেন না। শিকড়ের দিকে কিন্তু কেউ তাকিয়ে দেখেন না। আজকে বলেন আমার রেটিং। আমার রেটিং যাই হোক না কেন, আমার শিকড় হচ্ছে আমার দল। এটা কিন্তু ভুললে চলবে না। আজকে আমি যা কিছু করছি, নিশ্চয় আমার দলের জন্যই করতে পারছি। দলই আমাকে সভানেত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছে। দলের সহযোগিতা আছে, সমর্থন আছে বলেই আমি এত দূর উঠতে পেরেছি।’ সরকারের রেটিংও ভালো বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

গাইবান্ধার আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলামের গুলি করে শিশুকে রক্তাক্ত করার ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা বিশাল সংগঠন, সে সংগঠনে কিছু ঘটতেই পারে। কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি কি না সেটাই বড় কথা। আমরা কিন্তু ঘটনা ধামাচাপা দেই না, প্রশ্রয়ও দেই না। কালকে (শনিবার) আসার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটা নিয়ে আলাপ করেন। সাথে সাথে আমি বললাম, এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আপনি সেটা বিবেচনা করেন। এটা তদন্ত করতে হবে। যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়েছি। তার পিস্তলের লাইসেন্স ক্যানসেল করেছি। মামলা দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থা নিচ্ছি। ওখানে সংগঠন টিকিয়ে রাখা কঠিন। কারণ ওখানে জামায়াতে ইসলামি মানুষ খুন করছে। এই খুন-খারাবির মধ্যে দলের মধ্যে কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছি।
দুইজন বিদেশি নাগরিক হত্যায় আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠন জড়িত থাকার বিষয়ে সাংবাদিক মুন্নী সাহার এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতালিয়ান নাগরিককে হত্যার পর শিকাগো থেকে সোশ্যাল স্ট্যাটাস আসে– আইএস এর সঙ্গে জড়িত। তার সম্পৃক্ততা এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ঘটনা তো তদন্ত করতে হবে। আমাদের গোয়েন্দারা কোনো সূত্র এখনো পায়নি। তখন কে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে দিল আর আমাদের গ্রহণ করতে হবে? কেন করতে হবে?’ তিনি বলেন, ‘এখানে মিডিয়ারও ভূমিকা আছে। আপনারা খুঁজে বের করুন। এখানে গোয়েন্দা সংস্থা আছে..তারপরেও মিডিয়া এত প্রশ্ন না করে অনেক সময় কিছু খুঁজে বের করতে পারে। গুলশানে একটা ঘটনা ঘটল, সেটা নিয়ে শিকাগো থেকে কেন স্ট্যাটাস আসল? আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এখনো জানতে পারে নাই, তাহলে হোম মিনিস্টার কি করে স্বীকার করে। রংপুরের ঘটনার সঙ্গে যোগসূত্র কি। মিডিয়া এগুলো খুঁজে বের করুন, কী করে এটা হলো।’

পাকিস্তানে নারী ক্রিকেট দল পাঠানো প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারী ক্রিকেট দল খেলতে গিয়ে তো অনেক সাহসের পরিচয় দিয়েছে। যাবে না কেন? পাকিস্তান একটা দেশ। ক্রিকেট খেলায় তাদের ভালো নাম আছে। পৃথিবীতে নামকরা যে কয়টা টিম আছে, তারা এর মধ্যে একটি। আপনি একজন মেয়ে হিসেবে সাধুবাদ জানান। আপনারা ভয় পেয়ে, হ্যাঁ ওখানে কেন গেল, এ প্রশ্ন তোলা তো ঠিক না। এ প্রশ্ন তুলবেন কেন? আমাদের মেয়েরা সেখানে গিয়ে সাহস দেখাল। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, তাঁদের পরাজিত করেছি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক তো বাদ দিইনি, কেটে ফেলিনি। খেলাধুলা বা যেকোনো অনুষ্ঠানে আমরা যাব এবং গর্বের সঙ্গে যাব। বিজয়ী জাতি হিসেবে যাব। খেলার যে রেজাল্টই হোক যাব, ব্যস।’
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ মন্ত্রিপরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য, আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ