ফোন থেকে শুরু করে মাদকও পাচ্ছে, প্রধান কারা কর্তৃপক্ষঃ
সাইফুর রহমান,সিনিয়ার রিপোর্টার, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (৮ অক্টোবর) :কারাবন্দিরা কৌশলে টেনিস বলের ভেতরে, চোরাই পকেটে মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে মাদকও পাচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশের কারা কর্তৃপক্ষের প্রধান সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের কয়েকটি নজির তুলে ধরেন তিনি। তবে কারা মহাপরিদর্শক ইফতেখার দাবি করেছেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় বন্দিরা বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। যোগাযোগের যে অভিযোগ রয়েছে, তার সুযোগ ঘটে বন্দিদের আদালতে নেওয়ার সময়।কারাগারে থেকে বিভিন্ন অপরাধীরা বাইরের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ বহুদিনের।বছর খানেক আগে ত্রিশালে জঙ্গিদের পালানোর ঘটনায়ও পরিকল্পনাটি কারাগারেই হয়েছিল বলে অভিযোগ।
রাজধানীর নাজিম উদ্দিন সড়কে কারা অধিদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে কারা কর্তৃপক্ষের তল্লাশিতে পাওয়া মোবাইল ফোন সেট, সিম কার্ড সাংবাদিকদের দেখানো হয়।
সৈয়দ ইফতেখার টেনিস বল, ব্যাগ, ওষুধের কৌটা দেখিয়ে বলেন, “বাহির থেকে দেখলে মনে হবে টেনিস বল। কিন্তু বলের ভেতর মাদক, সিম রয়েছে। বলগুলো বাহির থেকে কারাগারের ভেতরে নিক্ষেপ করা হয়েছে।”
ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, “মনে হচ্ছে ব্যাগটি খালি। আসামির স্বজনরা কাপড় পাঠিয়েছেন তার বন্দির জন্য। কিন্তু ব্যাগের তলানিতে আরেকটি ফলস’ পকেট রয়েছে। ওই পকেটে থেকে মোবাইল পাওয়া গেছে।”
ছোট ওষুধের কৌটা দেখিয়ে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, “ওষুধ পাঠিয়েছে বন্দির স্বজন। কিন্তু কৌটার ছিপির মধ্যে ফলস’ জায়গা করে মোবাইল ফোনের সিমকার্ড দেওয়া হয়েছে।”
এসব দেখিয়ে তিনি বলেন, “কারাগারে থেকে যে বন্দিরা বাহিরে যোগাযোগ করে না, তা একেবারে অস্বীকার করছি না। তা নাহলে কারাকর্তৃপক্ষের তল্লাশিতে মোবাইল ফোন, সিমকার্ড পাওয়া যেত না।”
কারাকতৃপক্ষ জড়িত থাকার আভিযোগে সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, যাদের বিরুদ্ধে আভিযোগ এসেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থার অংশ হিসেবে দুই জন কর্মকরতার বিরুদ্ধে বাভাগীয় মামলা বিচারাধীন আছে। সাত জনকে বরখাস্থ করা হয়েছে। এবং যে গুলো প্রমাণিত হয় সে গুলো-ই ব্যাবস্থা নেওয়া হয়।
তবে কারাগার থেকে আদালতে যাওয়ার সময় মাঝপথে বন্দিরা বাইরের কারও সঙ্গে বেশি যোগাযোগ করে বলে দাবি করেন কারা মহাপরিদর্শক।কারাগারে বন্দিরা কারা কর্তৃপক্ষের অধীন থাকলেও আদালতে আনা-নেওয়ার দায়িত্বটি থাকে পুলিশের হাতে।
বরাবরই এধরনের ঘটনা ঘটলে কারাকতৃপক্ষ বলেন আদালত হতে আসার পথে এবং পুলিশ বলে কারাগারের আভ্যান্তরে ঘটেছে, এ অবস্থা নিরসনের জন্য কারাকতৃপক্ষ এবং পুলিশ যৌথভবে কোন উদ্যেগ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা? সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কারাপ্রধান এ ব্যাপারে কোন মন্তাব্য করেন নি।
কারাপ্রধান ইফতেখার বলেন, “যখন বন্দি কারাগারে ঢোকেন। তাদের ব্রেন তো বাহিরে রেখে আসতে পারি না। পরিকল্পনা করতে পারে। তবে বন্দিদের আদালতের নেওয়ার পথেই সাধারণত বাহিরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ বেশি হয়।
“একজন আসামিকে সকালে আদালতে নেওয়া হয়। প্রায় সারাদিন আদালতে থাকে। আবার কোনো কোনো আসামিকে অন্য জেলায়ও নিতে হয়।”
‘বন্দি কল্যাণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমাজে কারাবন্দিদের পুনর্বাসন’ বিষয়ক ওই সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের লোকবলের কথাও তুলে ধরেন কারা মহাপরিদর্শক।“আমাদের লিমিটেশন’ রয়েছে। লিমিটেশন হল জনবল। আমাদের কারারক্ষীরা সাপ্তাহিক ছুটিও পায় না।”তিনি জনান, বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৮ কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৩৪ হাজার ৬৮১ জন হলেও বন্দি রয়েছে ৭১ হাজার ২৪১ জন, যা দ্বিগুণেরও বেশি।এসব বন্দির মধ্যে ৭০ শতাংশর মামলা বিচারাধীন। বাকি ৩০ শতাংশ কয়েদি বলে জানান কারাপ্রধান।