অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে প্রতিনিধি দল আসছে আজ:
আজমি আনোয়ার,বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (৯ অক্টোবর): ঢাকায় আসছে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন অ্যান্টি মানি লন্ডারিংয়ের (এপিজিএমএল) সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল। আজ শুক্রবার প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় পৌঁছবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সংস্থাটির এ প্রতিনিধিরা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেবেন। এসব পর্যায়ে বৈঠক ভিত্তিতে বাংলাদেশে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে অগ্রগতি যাচাইয়ের মূল্যয়ন প্রতিবেদন দেবে সংস্থাটি।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪১টি দেশ নিয়ে গঠিত এপিজিএমএলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফটিএফ) আদলে ১৯৯৭ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে প্রতিষ্ঠিত হলেও সংস্থাটির সদর দপ্তর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। প্রকৃতপক্ষে এফটিএফের আঞ্চলিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে এপিজিএমএল।
সূত্র জানিয়েছে, প্রায় দুই সপ্তাহের এ সফরে তারা স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) আর্থিক লেনদেনে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলবেন। এসব বৈঠকের পরে রুটিন ওর্য়াক হিসেবে বাংলাদেশে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে অগ্রগতি যাচাইয়ের মূল্যয়ন প্রতিবেদন দেয়া হবে।
এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে মিউচুয়াল ইভ্যালুয়েশন বলা হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে তৃতীয় পর্যায়ের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলছে।
এ মূল্যায়নে নেতিবাচক ফল উঠে আসলে এফটিএফের অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসের অর্থায়নে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় পুনরায় ঢুকে যেতে পারে বাংলাদেশ। এতে আন্তর্জাতিক পরিম-লে ভাবমূর্তি সংকটে পড়তে হতে পারে। গত কয়েক বছর ধরে সন্ত্রাস দমন ও অর্থ পাচার রোধে সরকারের সাফল্য বেশ আলোচিত হলেও সাম্প্রতিক সময়ের বিদেশি হত্যাকান্ডে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের ফলে এ আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, সফর নির্বিঘ্ন করতে এপিজিএমএল প্রতিনিধি দলকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আইনি কাঠামোতে দুর্বলতা থাকায় বাংলাদেশের নাম শুরু থেকেই ছিল এফটিএফের ধূসর তালিকায়।
এর নিচেই কালো তালিকাভুক্ত অর্থাৎ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অবস্থান। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ধূসর তালিকা থেকে প্রত্যাহার করা হয় বাংলাদেশের নাম। এর মধ্য দিয়ে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ।
পুনরায় ঝুঁকির তালিকায় পড়ার আশঙ্কার ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও বিএফআইইউর উপ-প্রধান ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান সাধারণ পর্যায়ে রয়েছে। কারণ আমরা এ বিষয়গুলোতে যথেষ্ট কাজ করছি। তাই আমরা আশা করছি এপিজেএমএলের আগামী মূল্যায়নও স্বাভাবিকই থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, তবে কোনো কারণে যদি ডার্ক-লিস্টে (ধূসর তালিকা) পড়ে যাই তবে তা দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব বয়ে আনবে। তখন আমরা থার্ড পার্টি ছাড়া এলসি খুলতে পারবো না, বিদেশি ঋণ পাবো না, বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমস্যা হবে।