সাকা চৌধুরী-মুজাহিদের রিভিউ আবেদন দাখিলঃ
সিনিয়ার রিপোর্টার, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (১৪ অক্টোবর): মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে আভিযুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ
বুধবার (১৪ অক্টোবর) আপিল বিভাগে পৃথকভাবে আবেদন দু’টি দাখিল করা হয়েছে। সকাল দশটা ১০ মিনিটে মুজাহিদ ও বেলা ১২টা ১০ মিনিটে সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদন জমা দেওয়া হয়।
মুজাহিদের আইনজীবী শিশির মনির জানান, মোট ৩৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ৩২টি যুক্তি দেখিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চাওয়া হয়েছে। রিভিউয়ের পেপারবুক দাখিল করা হয়েছে তিন শতাধিক পৃষ্ঠার।
অন্যদিকে সাকা চৌধুরীর আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম আলফেসানি জানান, মোট ১০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি দেখিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়েছেন তারা।
দু’জনেরই প্রধান আইনজীবী হিসেবে সর্বোচ্চ আদালতে রিভিউ আবেদন দু’টির শুনানিতে আসামিপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, যিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা।
দুপুরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি রিভিউ দু’টির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবেন বলে জানান শিশির মনির।
মুজাহিদের রিভিউ সম্পর্কে শিশির মনির বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ২২ মাস ধরে তদন্ত করে আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির কোনো তালিকায় তার (মুজাহিদ) নাম খুঁজে পাননি। কিন্তু এ বিষয়ে আপিল বিভাগ কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে চূড়ান্ত রায়ে মুজাহিদকে আলবদর কমান্ডার বলছেন। এটা স্পষ্ট নয়। রিভিউয়ে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়া আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, একাত্তরের ২৩ বছরের একজন ছাত্র ও বেসামরিক ব্যক্তি কিভাবে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর প্রধান হন?
তিনি বলেন, এ রকম আরো কিছু বিষয় আছে। সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আশা করি, তিনি অভিযোগ থেকে রেহাই পাবেন।
একই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সাকা চৌধুরীর আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম আলফেসানিও।
অন্যদিকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আপিল মামলাগুলোর মতোই রিভিউ আবেদনগুলোর শুনানিতেও রাষ্ট্রপক্ষে নেতৃত্ব দেবেন।
গত ১৬ জুন আলী একাত্তরের কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদ ও গত ২৯ জুলাই চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার সংক্ষিপ্তাকারে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ পৃথক পৃথকভাবে এ রায় দেন। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
পরে ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের এই দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। পরদিন ০১ অক্টোবর তাদেরকে আপিল বিভাগের রায় অবহিত করে কারাগার কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে পড়ে শোনানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা তাদের মৃত্যু পরোয়ানা।
নিয়ম অনুসারে সে থেকে নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই রিভিউ আবেদন করলেন মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরী।
যদি এ আবেদন খারিজ হয়ে যায় এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-২। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীন, বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়ার সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ১১ আগস্ট আপিল করেন মুজাহিদ।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হন মুজাহিদ। পরে ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
অন্যদিকে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-১। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন বিএনপির এই নেতা।
২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হন সাকা চৌধুরী। পরে একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।