সিরিয়ায় রুশ-মার্কিন যুদ্ধ চলছে:
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (১৪ অক্টোবর): যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় নতুন সরকার গঠন ও আইএস নির্মূল অভিযানের ছদ্মনামে মূলত রাশিয়া বনাম যুক্তরাষ্ট্র ছায়াযুদ্ধ চলছে। একপক্ষ চাইছে সিরিয়ায় ক্ষমতাসীন সরকারই থাকবে। অন্য পক্ষ চাইছে সিরিয়ায় নতুন শাসনব্যবস্থার সূচনা। নিজেদের এ উদ্দেশ্য হাসিলে সরকার বিদ্রোহীদেরকে আরও শক্তিশালী করতে একপক্ষ সমানে অস্ত্র গোলাবারুদ সরবরাহ করছে। অন্যপক্ষ আবার সেসব সরকার বিরোধীদের ওপরই হামলা শুরু করেছে। সিরিয়া যুদ্ধ নিয়ে সরেজমিন প্রতিবেদনে মঙ্গলবার এ বিষয়টি স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে জনপ্রিয় মার্কিন দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাক্ষাৎকার ও সিরিয়ায় পশ্চিমাদের যুদ্ধ কৌশলের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কমান্ডার ও জঙ্গি নেতাদের সাক্ষাৎকার অনুসারে, সিরিয়ার সরকারপক্ষীয় সেনারা এই প্রথমবারের মতো বেশ দাপটের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। কারণ রাশিয়ার সরাসরি বিমান হামলার পর থেকে তাদের কাছেও অনেক ভারি অস্ত্রশস্ত্র পৌঁছে গেছে। তার ওপর আবার রুশ বাহিনীর বিমান হামলা। আসাদবিরোধী বিদ্রোহী জঙ্গি নেতাদের কথায়, একদিনেই তারা অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। মার্কিন বিমান থেকে বিদ্রোহীদের উদ্দেশে নতুন করে অস্ত্র ফেলানোয় হালে অনেকটা পানি ফিরে পেয়েছে আসাদ বিরোধীরা। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সাল থেকেই সিরীয় মুল্লুকে মার্কিন অস্ত্রের আনাগোনা শুরু হয়।
রাশিয়ার দূতাবাসে রকেট হামলা
সিরিয়ার রাজধানীতে মঙ্গলবার রাশিয়ার দূতাবাসে দুটি রকেট আঘাত হেনেছে। এতে চারদিকে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। সিরিয়ায় মস্কোর বিমান হামলার প্রতি সমর্থন প্রকাশের জন্য রাশিয়ার দূতাবাসের সামনে কয়েকশ’ লোক জড়ো হওয়ার প্রেক্ষাপটে এ হামলা হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির সাংবাদিকরা জানান, সিরিয়ায় মস্কোর বিমান হামলার প্রতি সমর্থন প্রকাশের জন্য দামেস্কের মাজরা এলাকায় রাশিয়ার দূতাবাসের সামনে প্রায় ৩শ’ লোক জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকে। তাদের হাতে এ সময় রাশিয়ার পতাকা এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিনের ছবি ছিল। ঠিক সেই সময় দুটি রকেট দূতাবাসে আঘাত হানে। এতে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সের উদ্ধৃতি দিয়ে দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এলদার কুরবানভ বলেন, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ১০টা ১৫ মিনিটে দুটি রকেট দূতাবাসে আঘাত হানে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, রাজধানীর পূর্বাঞ্চল থেকে রকেট দুটি নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের এ এলাকায় ঘাঁটি রয়েছে।
বিমান থেকে অস্ত্র ফেলছে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়াতে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের বিমান থেকে অস্ত্র ফেলে সহায়তা দিচ্ছে মার্কিন সেনাবাহিনী। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হাসাকেহ প্রদেশে বিদ্রোহীদের ৪৫ টনেরও বেশি গোলাবারুদ সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। পেন্টাগনের মুখপাত্র জানিয়েছে, বেশ ক’টি মার্কিন সি- সেভেন্টিন বিমান এই অস্ত্র ফেলার কাজে অংশ নিয়েছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে হালকা অস্ত্র, গোলাবারুদ ও গ্রেনেড। যুদ্ধবিমান দিয়ে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ওই বিমানগুলোকে। এর আগে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে প্রশিক্ষণ দেয়ার একটি ব্যয়বহুল প্রকল্প বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যার খরচ ধরা হয়েছিল প্রায় ৫০ কোটি ডলার। কিন্তু এখন প্রশিক্ষণের বদলে সেই অর্থ ইতিমধ্যেই যুদ্ধের ময়দানে বেশ অগ্রসর হয়েছে এমন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জন্য অস্ত্র সরবরাহে ব্যবহার করা হবে। পেন্টাগন বলছে, বিমানের মাধ্যমে ফেলা অস্ত্রগুলো সফলভাবে সংগ্রহ করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যরা। তবে কাদের এই অস্ত্র দেয়া হল তা অবশ্য গোপন রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, সিরিয়াতে ইসলামিক স্টেটের অবস্থানের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান।
সুত্রঃযুগান্তর