জাতীয় পার্টি ‘ভুয়া’ বিরোধী দল : ড. রিপন
সাইফুর রহমান, সিনিয়ার রিপোর্টার, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা: দেশে বিদেশে নানাভাবে বিতর্কিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত দশম জাতীয় সংসদে একটি ‘ভুয়া’ বিরোধী দল সৃষ্টি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন। আজ মঙ্গলবার ২৭ অক্টোবর বিএনপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। দশম সংসদ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পর্যবেক্ষণকে ক্ষমতাসীন দল এখনও চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি- এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন।
তিনি বলেন, সরকারের উচিৎ হবে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে বিরাজমান সংকট মোকাবেলায় সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া। সংলাপ ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই। সরকারকে সংলাপের পথে আসতেই হবে।
শুধু আমরাই দাবী করিনি যে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল বিতর্কিত। নির্বাচনের পরপরই বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মিত্ররাও এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টার দায়িত্ব নিয়েই সে কথা পূণর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন ‘টিআইবি’র ভাষায় জাতীয় সংসদ -পুতুল নাচের নাট্যশালায় পরিণত হওয়ায় এবং এখানে কোন প্রকৃত বিরোধী দল না থাকায় টিআইবি’র কঠোর সমালোচনা করেছেন শাসকদলীয় নেতা জনাব মাহবুবুল আলম হানিফ এবং দশম সংসদের চীফ হুইপ। কিন্তু তারা টিআইবি’র পর্যবেক্ষণকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেননি। এবং বলতেও পারেননি যে, টিআইবি অসত্য পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। বরং টিআইবি এ সংসদ নিয়ে সত্য উন্মোচন করায় তাদেরকে বিরোধী দলের এজেন্ট পর্যন্ত বলে অসৌজন্য মন্তব্য করেছেন। আমরা এর নিন্দা করি।
ড. রিপন বলেন, আমরা মনে করি, সব কিছুতে সরকার ষড়যন্ত্র না খুজে উচিৎ হবে দেশের বর্তমান সংকট উত্তরণ এর পথ বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সবার মধ্যে ঐক্যমত সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নেয়া এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছুতে সকল বিরোধীদল ও বিশিষ্ট নাগরিক সমাজের সাথে একটি সংলাপ প্রক্রিয়া সূচনা করা।
আমরা আরো মনে করি বর্তমান দশম জাতীয় সংসদে যে প্রক্রিয়ায় একটি ফেক বিরোধী দল সৃষ্টি করা হয়েছে তা সংসদীয় রাজনীতির জন্য একটি বাজে নজীর হয়ে থাকবে। এই ফেক অপজিশন (ভু‚য়া বিরোধী দল) রেখে বর্তমান জাতীয় সংসদকে পাঁচ বছর পর্যন্ত টেনে নেয়ার সংকল্প আদৌ বুদ্ধিমানের কাজ বলে গণ্য হবেনা বলে উল্লেখ করেন । এবং তিনি এও বলেন, এই তথাকথিত বিরোধী দলকে যতই সুবিধা দিয়ে রিষ্ট-পুষ্ট করা হোক না কেন তারা দেশ-বিদেশে প্রকৃত বিরোধী দল হিসেবে কোনদিনই সীকৃতি পাবেনা। সংসদের এই কথিত বিরোধী দল আত্মপরিচয়ের সংকটে শুরু থেকেই নিমজ্জিত। সরকারের জন্য তা এখন ক্রমেই বড় মাপের বোঝা হয়ে উঠেছে। এই বাস্তবতাটি শাসকদল যতই দ্রুত উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন ততই তাদের জন্য মঙ্গল।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি না মানায় আমাদের দল ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী নির্বাচন বয়কট করা সত্বেও এবং পার্লামেন্টে আমাদের দলের উপস্থিতি না থাকলেও শাসকদল ও তার মিত্ররা আমাদের সমালোচনায় মূখর থেকেছেন যা ছিল অনভিপ্রেত ও অসংসদীয় বটে।
ড. রিপন টিআইবি প্রশঙ্গে আরো বলেন, এটি অত্যন্ত হাস্যউদ্দীপক যে, যখনি টিআইবি সরকারের সমালোচনা করে তখনই তাদের আয়ের উৎস’র তদন্ত দাবি করা হয়। সরকারে তো তারাই আছেন তাহলে তদন্ত করছেন না কেন? বহুবারই এ ধরনের দাবি তুলেছেন তারা কিন্তু দেশবাসী পরে এর কি হলো তা জানেন না। যারা টিআইবি’র আয়ের উৎস জানতে চান-তারা পাবলিক ফিগার হিসেবে নিজেদের সচ্ছতার স্বার্থে কেন জনগণকে অবহিত করেন না যে, তারা ইতিমধ্যে কিভাবে কি পরিমান ধন সম্পদের মালিক হয়েছেন?।
আমাদের দল মনে করে, বর্তমান জাতীয় সংসদ নিয়ে ‘টিআইবি’ যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা কিঞ্চিতই মাত্র। তবে আমরা মনে করি, সংসদে ফেক অপজিশন নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলার কারণে-দেশে সুশাসন নেই, জবাবদিহীতাও নেই। আর সে কারনে সরকারী দলের লোকেরা দেশে নৈরাজ্য বিস্তার করছে এবং তাদের লাগাম টানার শক্তি সরকার ক্রমেই হারিয়ে ফেলছেন।
এধরনের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অসংখ্য এমপি লিটন, আব্দুর রহমান বদিদের জন্মের পাশাপাশি ফ্রাঙ্কেনষ্টাইনের দানবরাও ক্রমেই শক্তিমান হয়ে উঠছে-যা সমাজ-রাজনীতির জন্য বড়ই অশনিসংকেত হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ড. রিপন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, -বিতর্কিত নির্বাচনে গঠিত এই পার্লামেন্ট অনতিবিলম্বে ভেঙ্গে দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা।
আমরা আবারো দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবী পূণর্ব্যক্ত করছি।পাশাপাশি বিরোধী দলকে হয়রানীর উদ্দেশ্যে দেয়া সকল মামলা প্রত্যাহার করে বন্দী নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে সকল সংকট মোকাবেলায় একটি জাতীয় সংলাপ প্রক্রিয়ার পরিবেশ তৈরীর জন্য সরকারের প্রতি আমরা জোর দাবী জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, সহ দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তকদির হোসেন জসিম, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামছুল আলম তোফা, স্বেচ্ছাসেবক দলের দফতর সম্পাদক মো. আক্তারুজ্জামান বাচ্চু প্রমুখ।