দাম্পত্য কলহের কারনে আত্মহত্যা মিতা নূরের
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বেশ কিছুদিন ধরেই স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ চলছিল অভিনেত্রী মিতা নূরের, দুদিন আগে যা থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়।
সোমবার ভোরে রাজধানীর গুলশানে তাদের অ্যাপার্টমেন্টের বসার ঘরে মিতা নূরের ঝুলন্ত লাশ পায় পুলিশ। লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, মিতা আত্মহত্যা করেছেন বলেই তাদের ধারণা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সোহেল মাহমুদ সোমবার বিকালে এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটা আত্মহত্যা।”
গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, স্বামী শাহনূর রহমান রানার সঙ্গে মিতার কলহ চলছিল। তাদের কলহের কারণ ছিল নিকেতনে রানার অফিসের ‘কোনো একটি বিষয়’।
ওসি রফিকুল বলেন, দুদিন আগে এই দম্পতির কলহের বিষয়টি পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। পরে পুলিশের মধ্যস্ততায় গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১০৪ নম্বর রোডে লেকভ্যালি অ্যাপার্টমেন্টে নিজেদের বাড়িতে ফেরেন তারা।
“গতকাল (রোববার ) সারাদিনই মিতা নূর বাসায় ছিলেন। রাতেও আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। দুপুরে তারা একসঙ্গে খেয়েছেন। রাতে ডিনার শেষে একসঙ্গে ঘুমাতেও গেছেন।”
ওসি জানান, সোমবার ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে শাহনূর থানায় ফোন করেন। তার খবর পেয়ে এক অফিসারকে নিয়ে দ্রুত লেকভ্যালি অ্যাপার্টমেন্টে যান তিনি। সেখানে বসার ঘরেই একটি সিলিং ফ্যানের সঙ্গে মিতা নূরের গলায় ওড়না প্যাঁচানো লাশ পান তারা।
এরপর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সদস্যরাও ওই বাড়িতে যান। লাশ নামানোর পর আলামত সংগ্রহ করেন তারা। দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এদিকে মিতানূরের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে স্বজনদের পাশাপাশি নাট্য অঙ্গনের কর্মীরা গুলশানের ওই বাড়িতে জড়ো হন।
অভিনেতা তারিক আনাম খান বলেন, “এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। হঠাৎ কীভাবে এটা ঘটলো আমরা বুঝতে পারছি না।
অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীকে এ সময় চোখ মুছতে দেখা যায়। অভিনেত্রী ও সাংসদ তারানা হালিমও ছুটে আসেন মিতা নূরকে শেষবারের মতো দেখতে।
মিতার মা মরিয়ম সরকার জানান, তার মেয়ের সঙ্গে শাহনূরের বিয়ে হয় ২৪ বছর আগে। তাদের দুটি ছেলের মধ্যে সাদমান নূর প্রিয় ও লেভেলের ছাত্র। আর সেজাত নূর পৃথি পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে।
মরিয়ম তার মেয়ের ‘আত্মহত্যার’ কোনো কারণ খুঁজে না পেলেও মিতার বাবা ফজলুর রহমানকে উদ্ধৃত করে একটি টেলিভিশনের খবরে বলা হয়,স্বামী শাহনূরের সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া হতো।
সোমবার দুপুরে মিতার লাশ মর্গে পাঠানোর সময় শাহনূর বাড়িতেই ছিলেন। তবে তার সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা বলতে দেয়নি পুলিশ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিনেত্রী মিতার মরদেহের ময়নাতদন্তের পর ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সোহেল মাহমুদ এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর যতোগুলো লক্ষণ থাকে তার সবগুলোই তার দেহে পাওয়া গেছে।”
এছাড়া শরীরের বাইরে বা ভিতরে কোনো ধরনের জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাপ্তাহিক নাটক ‘সাগর সেঁচা সাধ’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মিতা নূরের অভিষেক হয়। ১৯৯২ সালে আফজাল হোসেনের নির্দেশনায় অলিম্পিক ব্যাটারির বিজ্ঞাপনে মডেল হয়ে ব্যাপক পরিচিত পান। এরপর তাকে নিয়মিত বিভিন্ন নাটকে দেখা যায়।
টিভি নাটকে অভিনয় ও মডেলিংয়ের পথ ধরে ২০১১ সালে নাট্য নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন মিতা নূর। ওই বছর ‘চৌঙ্গালি’ নামের একটি খণ্ড নাটক নির্মাণ করেন তিনি।