গবেষণার ফল যাতে লাইব্রেরিতে বন্দী না থাকে: রাষ্ট্রপতি

বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকাঃ বুধবার ২৫ অক্টোবর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে আচার্য হিসেবে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, দেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষার গুণগতমান এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি । এ জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
ভারতের নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সতীর্থের ‘শিক্ষায় বিনিয়োগের রিটার্ন নয়গুণ’ উক্তিটি উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, গুণগত শিক্ষার পাশাপাশি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ রিটার্ন অর্জন সম্ভব। পাঠদানের মধ্যে শিক্ষকের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ না রেখে শিক্ষার্থীদের প্রতি আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মহাম্যান্য রাস্ট্রপতি বলেন, শিক্ষক যখন তাঁর মহান আদর্শ থেকে দূরে চলে যান, তখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে জ্ঞান অর্জন ও বিতরণে শিক্ষকমণ্ডলী নিবেদিত থাকবেন, জাতি তা প্রত্যাশা করে।
আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার ওপর বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, গবেষণার ফল যাতে লাইব্রেরিতে বন্দী না থেকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে লাগে তা নিশ্চিত করতে হবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, খুলনা অঞ্চলে রয়েছে জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী সুন্দরবন ও সামুদ্রিক সম্পদ সমৃদ্ধ বিশাল উপকূল। আমি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এ জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় মূল্যবান সম্পদ বিষয়ে গবেষণা জোরদারের আহ্বান জানাই।

রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের পর দীর্ঘদিন ধরে পরাজিত শক্তি তরুণদের নানাভাবে বিপথগামী করার চেষ্টা করেছে এবং এখনো তা অব্যাহত রেখেছে। তরুণ প্রজন্ম যাতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে এবং দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে পারে, সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নবীন গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশ ও সমাজ তোমাদের এ পর্যায়ে এনেছে। তোমাদের অর্জিত জ্ঞান ও মেধা দিয়ে দেশের কল্যাণ করতে পারলে সেই ঋণ শোধ হবে।

এর আগে বেলা তিনটায় শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে সমাবর্তনের কার্যক্রম শুরু হয়। সমাবর্তন উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাস সাজানো হয়। বেলা সাড়ে তিনটায় রাষ্ট্রপতির অনুমতিক্রমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতের চাহিদার চেয়ে উচ্চশিক্ষার চাহিদা বেশি। তবে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান থেকে বের হলেও উচ্চশিক্ষা লাভ অনেক সময় হয়ে ওঠে না। শিক্ষার একটি স্তরে বৃত্তিমুখী শিক্ষা চালু করতে পারলে উচ্চশিক্ষার ওপর অহেতুক চাপ কমত। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কেবল পাঠদানের ক্ষেত্র নয়, নতুন জ্ঞান সৃষ্টিই তার বড় কাজ। তাই গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ থাকতে হবে, গবেষণার ফল প্রকাশ করতে হবে, সবাই দেখবে আমরা নতুন কী করলাম।

অনুষ্ঠানে উপাচার্যের ভাষণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফায়েকউজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে দাবি জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক বিভাগ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠ গবেষণার জন্য কেনো জায়গা পাচ্ছে না। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২০০ একরের বেশি জমি, সেখানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমি মাত্র ১০৫ দশমিক ৭৫ একর। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ ও মাঠ গবেষণার জন্য আরও কমপক্ষে ৫০ একর জমি দরকার।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বিশেষ অতিথির ভাষণে বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কানাডা, জাপানসহ আরওকয়েকটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও গবেষণার ধারা অব্যাহত রাখতে ইউজিসির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে।

সমাবর্তনে আড়াই হাজার গ্র্যাজুয়েটকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এ ছাড়া একজনকে পিএইচডি ডিগ্রি এবং কৃতিত্বের জন্য ১৪ জন শিক্ষার্থীকে গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়।

নতুন হল উদ্বোধন: সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ সময় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফায়েকউজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান ও খুলনা-২ আসনের সাংসদ মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ