বাংলাদেশ অনেক ভালোভাবে এগোচ্ছে: কৌশিক বসু
নোমান রিয়েন, বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকাঃ সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর এক কর্মশালায় বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলেছেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করে , পরিকল্পনা মাফিক এগোলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে( ১২ ডিসেম্বর) ঢাকায় এসে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইউএন-ডিইএসএ ‘র ‘সামগ্রিক অর্থনেতিক স্থিতিশীলতা, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’ শীর্ষক আয়োজিত এই দুই দিনের কর্মশালায় যোগ দেয়।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. আবুল কাশেম।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএন ডিইএসএ’র হামিদ রশীদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরুপাক্ষ পাল স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
কৌশিক বসু বলেন, “উড়ন্ত সূচনার জন্য বাংলাদেশ এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বাংলাদেশের অর্থনীতি সুন্দরভাবে এগোচ্ছে। আমি বাংলাদেশের অগ্রগতি বা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়ে খুবই আশাবাদী।”
“আগামীতে যেকয়টি দেশকে দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে দেখা যাবে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে থাকবে। এজন্য বিশ্বব্যাংকের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কও নতুন গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে এখন কাজ করছে, যেটি বাংলাদেশ আগে থেকেই শুরু করেছে।”
“তবে উন্নয়নের সামগ্রিক দায়িত্ব সরকার নিতে পারে না। এজন্য এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে সরকার যে কাজটি করতে চায় সেটি বেসরকারি খাত করতে পারে। এজন্য সে অনুযায়ী নীতি প্রণয়নও করতে হবে। সেই নীতি হতে হবে দেশের প্রতি দরদ ও পেশাদারিত্বের সংমিশ্রণে; যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি থাকে।”
হামিদ রশীদ বলেন, “সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা শুধু মূল্য স্থিতিশীলতা নয়। আর্থিক খাত ও মুদ্রা খাতে স্থিতিশীলতা থাকতে হবে। বর্তমানে পুরো বিশ্বেই সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা নেই। খাদ্যমূল্য অস্থিতিশীল, মূলধন স্থানান্তরিত হচ্ছে। প্রকৃত খাতের সাথে আর্থিক খাতের বিচ্ছিন্নতা দেখা যাচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় জোর দিতে হবে।”
পরে বিকালে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তার হেয়ার রোডের বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন ভারত সরকারের সাবেক এই অর্থনৈতিক উপদেষ্টা।
বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বিশ্ব ব্যাংকের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।
“বাংলাদেশের উন্নয়ন বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমার খুবই ভালো আলোচনা হল। কিছু পর্যবেক্ষণ অর্থমন্ত্রী তুলে ধরেছেন, কিছু আমি তুলে ধরেছি। বাংলাদেশ অনেক ভালোভাবে এগোচ্ছে।
“এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রতিবছর। আমাদের বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব সামনের বছর প্রবৃদ্ধি গিয়ে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে। ৬ দশমিক ৭ শতাংশ আজকের পৃথিবীতে, যেখানে চারিদিকে গ্রোথ স্লো ডাউন পড়ে গেছে ‘ইটস কোয়াইট রিমার্কঅ্যাবল পারফরম্যান্স’।
“আমাদের এইটুকু আলোচনা হল, এখানেই থেমে গেলে চলবে না। বাংলাদেশের ৮ শতাংশ গ্রোথেও পৌঁছানো সম্ভব, কিছু বছরের ভেতরেই পৌছানো সম্ভব।”
কৌশিক বসু বলেন, “জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ বর্তমানে বেশ উচ্চ, ২৯ শতাংশ। এটাকে শতকরা ৩৩, ৩৪ ভাগে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব নয় একেবারেই। তিন বছরের মধ্যে যদি একটা টার্গেট করা হয় যে, বাংলাদেশের ইনভেস্টমেন্টকে ওইখানে (৩৩ বা ৩৪ শতাংশে) নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশের গ্রোথ ৮ শতাংশ খুবই সম্ভব। এবং সেটা হলে বাংলাদেশ বিশ্বের চার-পাঁচটা দেশের মধ্যে পড়ে যাবে। যারা ইন দ্য ফ্রন্ট লাইন অব গ্রোথ।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠছে। আমরা (বিশ্বব্যাংক) আইডা (আইডিএ) বলে যে লোন দেই, বাংলাদেশ এখন সেখানে। বাংলাদেশের সাথে আমাদের (বিশ্ব ব্যাংকের) সম্পর্ক হয়ে দাঁড়াচ্ছে যেটাকে পার্টনারশিপ বলা যেতে পারে। কেননা বাংলাদেশ এখন আর লো ইনকাম কান্ট্রি নেই। এই বছর কিছু মাস আগে থেকে লো মিডল ইনকাম কান্ট্রিতে পড়ে গেছে।”
“ভারত এখন লোয়ার মিডল ইনকামে। লোয়ার মিডল ইনকাম কান্ট্রির সাথে সম্পর্কটা ভেরি ডিফারেন্ট ওভার লো ইনকাম কান্ট্রি। অনেকটা পার্টনারশিপের মতো।”
অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার কথা তুলে ধরে কৌশিক বসু বলেন, “আমার বিশ্বাস এই নতুন বিশ্ব ব্যাংক, বাংলাদেশেরও এই নতুন সিচুয়েশনের সঙ্গে স্ট্রংগার রিলেশনশিপ, পার্টনারশিপ ডেভেলপ করবে।”