পৌর নির্বাচন একটি প্রহসনে পরিণত হয়েছেঃ মির্জা আলমগীর
সাইফুর রহমান, প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকাঃ পৌরসভা নির্বাচন সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব । পৌর নির্বাচন একটি প্রহসনে পরিণত হয়েছে।‘এখন পর্যন্ত ১৫৭টি পৌরসভার ক্ষেত্রে এই ধরনের চিত্র এসেছে। তবে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এসে পৌঁছেনি। তবে সেটি ২০০টির বেশি হবে।’
বুধবার ,৩০ ডিসেম্বর বিকেল ৪ টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন ।
১৫৭টিরও বেশি পৌরসভার সহস্রাধিক কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে ওইসব কেন্দ্রে পুনর্নির্বাচন দাবি করেছে বিএনপি।
তিনি বলেন, পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের হামলা, মামলা, প্রভাববিস্তার, জাল ভোট, ভোটারদের ভোট প্রয়োগে বাধা দেওয়া প্রমাণ করে এই নির্বাচন ছিলো প্রহসনের, সাজানো এবং আগে থেকেই নির্ধারিত।
‘সহস্রাধিক কেন্দ্র থেকে এজেন্টকে প্রশাসনের সামনে বের করে দেওয়া হয়েছে, প্রায় সকল কেন্দ্রেই তারা জাল ভোট দিয়েছে, সাধারণ ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে যেতে না পারে সেজন্য বোমাবাজি ও সন্ত্রাস চালানো হয়েছে। যেসব এলাকায় এইভাবে ভোট জালিয়াতের মহোৎসব চলেছে, সেইসব ক্ষেত্রে ভোট বাতিল করে পুনরায় সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করছি।’
‘ভোট চলাকালীন ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন ও স্যোশাল মিডিয়ায় ভোটের যে চিত্র দেখেছি, তাতে গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের অত্যন্ত ঘৃণিত ও সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের চেহারা যদি এই হয়ে থাকে, তাহলে সেই গণতন্ত্র অত্যন্ত ভয়াবহ।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ভোট গণনা তাদের মতো করে নিতে পারে। রেজাল্ট পরিবর্তন করে নিতে পারে। কারণ বহু জায়গায় আমাদের এজেন্ট নেই।’
ভোট গণনার আগ পর্যন্ত কেন্দ্রে থাকতে নেতাকর্মী ও ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান মির্জা আলমগীর।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না বলেও দাবি করেন মির্জা আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এই সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে দিতে চায় না। কারণ তারা জানে, অবাধ নির্বাচন হলে তাদের ভরাডুবি হবে। যেহেতু জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, সেই কারণ কোনো অবাধ নির্বাচন তারা এই দেশে হতে দেবে না।’
নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চিত্র তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচন শান্তিপূর্ণ বা উৎসবের লেশমাত্র ছিলো না। মারামারি, সংঘর্ষ, গোলাগুলি, সহিংসতা পুরো নির্বাচনকে একটি ট্র্যাজেডিতে পরিণত করেছে। নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা এবং সরকারের প্রতি অবিচল আনুগত্য নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরেকবার ধ্বংস করলো।’
‘ব্যালট ছিনতাই, প্রকাশ্যে সিল মারা, কেন্দ্র দখল করা এবং সহিংসতার মধ্য দিয়ে বেশিরভাগ পৌরসভায় কেন্দ্রগুলো দখল করে নেওয়া হয়। আশঙ্কার সঙ্গে আরেকবার লক্ষ্য করলাম, নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করা হলো।’
গণতন্ত্র বিশ্বাস করে বলেই সরকারের ‘চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র’ সত্ত্বেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আশ্বাস দিয়েছিলো, নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে করবে। যদিও সেই আশ্বাসে বিএনপির বিশ্বাস ছিলো না। সেটা এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।’
বিএনপির প্রার্থী-সমর্থকদের হয়রানি করতে সরকার সবধরনের কাজ করেছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘প্রথম থেকে সাংবাদিকরা যাতে এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারে, সেজন্য ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। এবারই প্রথম কেন্দ্রের ভেতরে যেতে শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এসব কিছুই প্রমাণ করে নির্বাচন প্রহসন ছিলো, সাজানো ছিলো এবং আগে থেকেই নির্ধারিত ছিলো। সেইভাবে তারা কাজ করেছে।’
পৌর নির্বাচনে যেসব গণমাধ্যমকর্মী হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের প্রতি সহানুভুতি জানান তিনি।
মির্জা আলমগীর অভিযোগ করেন, ‘বিএনপির প্রার্থী সমর্থকরা যাতে ভোট কেন্দ্রে যেতে না পারে, সেজন্য পুলিশসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হুমকি এবং সশস্ত্র অবস্থায় ভোট কেন্দ্রের পাশে পাহারা দেয়। অনেক জায়গায় রাতেই ভোট দিয়ে বাক্স ভরে ফেলে।’
সরকার নিজের জনপ্রিয়তা ‘দেখানোর জন্য’ দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচন দিয়ে এতে প্রভাব বিস্তার করেছে বরে দাবি করেন মির্জা ফখরুল।
বিভিন্ন পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীদের ভোট বর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোট বর্জনের কোনো কথা বলা হয়নি। স্থানীয়ভাবে হয়তো কেউ বর্জন করেছে। জেনেছি সেই সংখ্যা আট জনের মতো হবে। কিন্তু কেন্দ্র থেকে নির্দেশ ছিলো বর্জনের সিদ্ধান্ত যেন না নেওয়া হয়। অনিয়ম হলে নির্বাচন স্থগিত করে পুনঃভোট চাওয়ার কথা বলা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ড. আবদুল মঈন খান, ড. ওসমান ফারুক, আবদুল হালিম, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মোহাম্মদ শাহাজাহান, ফজলুল হক মিলন, আসাদুজ্জামান রিপন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।