দেশে শুরু হয়েছে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য: নিজামউদ্দিন

মনির হোসেন, বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের যে ভিশন দিয়েছেন তা লক্ষ্য করে দেশ অগ্রসর হচ্ছে মধ্যম আয়ের দেশের দিকে। ফলশ্রুতিতে দেশে শুরু হয়েছে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য। স্টেক হোল্ডারদের সহযোগিতা ও আধুনিক ব্যবস্থাপনার কারণে সাত বছরে চট্টগ্রাম বন্দর এক ঘণ্টার জন্যও বন্ধ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন।
রোববার, ৩ জানুয়ারি দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওতে ‘চট্টগ্রাম বন্দরের ২০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং রেকর্ড সাফল্য সনদ হস্তান্তর ও সংবাদ সম্মেলন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন চেয়ারম্যান। অনুষ্ঠানে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান সনদ তুলে দেন চেয়ার‌ম্যানের হাতে।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের যুগান্তকারী সব পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। গ্রহণ করা হয়েছে পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর, এলএনজি টার্মিনাল, হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প। তাই বাড়ছে বন্দরের গতিশীলতা, বাড়ছে বন্দরে পণ্যের ওঠানামাও। এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০৪৩ সালে দেশে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ডিমান্ড হবে ১০ দশমিক ৬ মিলিয়ন টিইইউস (২০ ফুট দীর্ঘ)। সুতরাং দেশের প্রবৃদ্ধির জন্যই চট্টগ্রাম বন্দর দ্রুততর তার সক্ষমতা করছে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর আঞ্চলিক বন্দর হিসেবে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোসহ ভুটান, নেপালসহ আশপাশের দেশের পণ্য পরিবহন করতে সক্ষম হবে। গত তিন বছরে বন্দরের সংরক্ষিত এলাকার প্রায় ৭৫ ভাগ সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। ভ্যাসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (ভিটিএমআইএস) প্রবর্তনের ফলে বন্দর চ্যানেলে জাহাজ চলাচল আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি হ্রাস পেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর ‘সবুজ’ তালিকায় স্থান পেয়েছে।

জি-টু-জি ভিত্তিতে এনসিটির জন্য ১০টি শিপ-টু-শোর গ্যান্ট্রিক্রেন (এসটিএস) এবং ২০টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রিক্রেন (আরটিজি) সংগ্রহ, ৭ নম্বর খালের পাশে ১০ একর জায়গায় কনটেইনার ইয়ার্ড ও একটি জাহাজের বার্থ নির্মাণ, নিউমুরিং এলাকায় বন্দরের ৩৪ একর জায়গায় ওভার ফ্লো ইয়ার্ড নির্মাণ, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণ এবং বে টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান চেয়ারম্যান।

বন্দরবিশারদদের ভবিষ্যৎবাণী চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়িয়ে গেছে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিবেদনে বলেছিল, ২০১৬ সালে বন্দরে ১৯ দশমিক ৫৬ লাখ টিই্ইউস কনটেইনার এবং ৪২ দশমিক ৪৭ মেট্রিকটন খোলাপণ্য (জেনারেল কার্গো) হ্যান্ডলিং করতে হবে। কিন্তু ‍এক বছর আগেই ২০১৫ সালে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ২০ দশমিক ২৫ লাখ টিইইউস কনটেইনার এবং ৫১ দশমিক ৩৮ লাখ মেট্রিকটন খোলাপণ্য হ্যান্ডলিং করে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে কনটেইনারের প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ এবং কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি ২৬ শতাংশ। যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের নৌবাণিজ্যের প্রায় ৯৮ শতাংশ কনটেইনার ও ৯২ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডলিং হচ্ছে দাবি করে চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৭৭ সালে এসএস টেনাসিটি নামক জাহাজে ছয়টি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সূচনা হয়েছিল। তখন কনভেনশনাল ওয়েতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হতো। ১৯৯২ সালে চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) নির্মাণের কাজ শেষ করে অপারেশনে আনা হয়। ২০০৫ সালে চারটি কী গ্যান্ট্রিক্রেন স্থাপন করা হয়। ক্রমবর্ধমান চাপের প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে এনসিটি নির্মাণের কাজ শেষ হলেও নানান জটিলতায় তা পুরোদমে চালু করা যায়নি। সর্বশেষ ২০১৫ সালে সরকারের সহযোগিতায় বন্দর কর্তৃপক্ষ এনসিটি চালু করতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ পরিচালিত হয় বন্দরে। ইতিমধ্যে প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় কনটেইনার ধারণক্ষমতাও।

এ সময় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এমএ লতিফ, অ্যাডভোকেট মমতাজ বেগম, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব অশোক মাধব রায়, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী, ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ