প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১/১১-এ ডেইলি স্টারে যা ছাপা হয়

নিউজ ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা: আটককৃত কিছু রাজনীতিবিদের কথিত স্বীকারোক্তির নামে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ভয়াবহ সব মনগড়া অসত্য রিপোর্ট প্রকাশ করে ডেইলি স্টারসহ কয়েকটি সংবাদপত্র। কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঢালাওভাবে দিনের পর দিন মিথ্যা তথ্য ছাপানো হয়। বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ নানাভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। তবে সম্প্রতি নিজের দোষ স্বীকার করে বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। তিনি গত সপ্তাহে একটি টিভি টকশোতে এ বিষয়ে নিজের দায় স্বীকার করে নেয়ায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এর বিচার দাবিসহ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়, যা অব্যাহত আছে। এমনকি মঙ্গলবার দেশের কয়েকটি স্থানে বিচার দাবি করে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, আরও মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। প্রতিটি জেলা থেকে কমপক্ষে ১টি করে মামলা হতে পারে।

এদিকে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে অভিযোগ উত্থাপন করে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে ওই সময় ডেইলি স্টার ও একটি প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নামে। তারা মূলত ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা বাস্তবায়নের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করে। এ রকম ভয়াবহ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে পত্রিকা দুটিতে ধারাবাহিকভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করা ছাড়াও মন্তব্য প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে যাতে সেনা সমর্থিত সরকার গ্রেফতার করতে পারে সেজন্য প্রেক্ষাপট তৈরিতে এভাবে মদদ দেয়া হয়। ফলে শেখ হাসিনাকে দীর্ঘ ১১ মাস কারাবরণ করতে হয়।
ডেইলি স্টারে যা ছাপা হয় : ওই সময় শুধু এক মাসেই ডেইলি স্টার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অন্তত পাঁচটি সংবাদ প্রকাশ করে। যার সবই ছিল শতভাগ অসত্য। রিপোর্টগুলো প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালের জুন মাসের ২, ৩, ১৩, ১৪ এবং ২২ তারিখে। এর মধ্যে ‘ভেতর ও বাইরের চাপে হাসিনা’ শীর্ষক ২ জুন প্রকাশিত সংবাদের সারমর্ম ছিল, দলের ভেতরে এবং বাইরে শেখ হাসিনার পদত্যাগের চাপ বাড়ছে। সরকার তার মিগ-২৯ কেলেংকারি এবং পল্টন হত্যা নিয়ে তদন্ত করছে। আর এদিকে দলের অনেক সিনিয়র ও মাঝারি পর্যায়ের নেতা আওয়ামী লীগ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগও চাচ্ছেন। তার দলের অনেক নেতা তাকে এড়িয়ে চলছেন। মাত্র গুটিকয়েক জুনিয়র নেতা তার সঙ্গে আছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের ভেতরে সংস্কারের দাবিও তীব্রতর হচ্ছে। সংস্কারপন্থীরা শেখ হাসিনার বিকল্প নিয়েও আলোচনা শুরু করেছেন।
৩ জুন ছাপা সংবাদের শিরোনাম ছিল- ‘হাসিনা বিত্তবানদের কাছে টাকা নিতেন’। কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র ও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, শেখ হাসিনা বিভিন্ন ছুতায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিতেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের স্বীকারোক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনা ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত নিতেন এবং টাকার বিনিময়ে অনেককে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। আর ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টুর বরাতে বলা হয়, ‘হাইটেক ফ্রিগেট’ কেনার সময় কোরিয়ান কোম্পানি ‘দাইয়ো’ শেখ হাসিনাকে এক কোটি টাকা ঘুষ দেয়, যা একটি অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট করা হয়।
‘হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি চাঁদাবাজি মামলা’ শিরোনামে ১৪ জুন ছাপানো হয় আরেকটি রিপোর্ট। এতে বলা হয়, গুলশান থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন ইস্ট কোস্ট প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজম জে চৌধুরী। মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনার সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে ছাপা হয়, রাশিয়ান পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ‘টেকনো প্রোম এক্সপোর্ট’-এর লোকাল এজেন্ট ইস্ট কোস্ট প্রাইভেট লিমিটেড সিদ্দিরগঞ্জ পাওয়ার প্লান্টের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’-এর জন্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের মাধ্যমে তিন কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন শেখ হাসিনা।
২২ জুন ছাপানো সংবাদে বঙ্গবন্ধু কন্যার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়। ‘সেলিম শেয়ারড এক্সটোরেশন উইথ হাসিনা’ শীর্ষক সংবাদে বলা হয়, শেখ সেলিম ইস্ট কোস্ট প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে তিন কোটি টাকা চাঁদা নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। শেখ সেলিম আজম জে চৌধুরীকে চাপ দিয়ে এ টাকা আদায় করেন বলে উল্লেখ করা হয়।
এভাবে ডেইলি স্টার ওয়ান-ইলেভেন সরকারের বড় একটি সময়জুড়ে সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালায়। প্রসঙ্গত, ৩ ফেব্র“য়ারি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর যাচাই ছাড়া প্রকাশ করা আমার সাংবাদিকতার জীবনে, সম্পাদক হিসেবে এটি একটি বিরাট ভুল। সেটা আমি স্বীকার করে নিচ্ছি। তখন ডিজিএফআই শেখ হাসিনার ঘুষ নেয়া ও দুর্নীতির খবর সরবরাহ করেছিল।’
 

 

 

সুত্রঃ যুগান্তর

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ