রেশমা উদ্ধারে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডের সংবাদ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবম ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সোহরয়ার্দী রেশমা উদ্ধারে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলী সানডে মিররের সংবাদকে মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, এই পত্রিকাটি সারা বিশ্বে সুনাম অর্জনকারী বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে তথা প্রতিরক্ষা ও গার্মেন্ট শিল্প তথা অর্থনীতিকে ধ্বংশের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছে।
বুধবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে সাভার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আয়োজিত এক জনাকীর্ন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সানডে মিরর পত্রিকার প্রতিবেদন ও রেশমা উদ্ধার নিয়ে ষড়যন্ত্রকারিদের সতর্ক করে দিয়ে আইএসপিআর’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ফাউল খেলবেন না। ফাউল খেললে নিজের গায়ে আঘাত লাগতে পারে।’
বুধবার তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
রেশমা উদ্ধার নিয়ে সানডে মিররের প্রতিবেদনটি নির্জলা মিথ্যা উল্লেখ করে জিওসি বলেছেন যারা এই বিষয়টির সাথে জড়িত তাদের বিচারের ব্যবস্থা করা উচিত।
মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের দায়ে ওই পত্রিকা ও সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক সায়মন রাইটের বিরুদ্ধে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার দায়ে ক্ষতিপুরণ মামলা করার জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান তিনি। একই সঙ্গে সংবাদ প্রকাশের ব্যাপারে বাংলাদেশের যে সকল ব্যক্তি জড়িত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান।
জেওসি বলেন, “সেনা বাহিনী দেশে নয়, সারা বিশ্বের সর্বত্র সম্মান, সর্যাদায় সমাদৃত হচ্ছে। তখন জাতির আস্তাস্থল সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার জন্য বিভিন্ন ধরণের বক্তব্য বিভিন্ন স্থান থেকে উত্থাপিত হচ্ছে।
এ ষড়যন্ত্র শুধু রেশমাকে নিয়ে হচ্ছে তা নয়, যখন থেকে রানা প্লাজায় উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে তখন থেকে হচ্ছে।”
ব্লগের প্রকাশিত তথ্যের উল্লেখ করে জিওসি বলেন, “একটি ব্লগে লেখা হয়েছে ‘নবম পদাতিক ডিভিশনকে এই উদ্ধার অভিযান থেকে সরায়ে দেন, না হলে পরবর্তীতে বিপদে পড়তে পারেন।’ তার মানে ওই সব ব্যক্তি যারা রেশমার গল্প সৃষ্টি করেছে, তারাই এসব করছে।”
তিনি বলেন, “রেশমার গল্প সানডে মিররের প্রকাশিত হওয়ার পরে আবার একটি ব্লগে মেসেজ দিয়েছে যে, ‘আগেই বলেছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনী আপনাকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে।’ সূতরাং উদ্দেশ্য সেনাবাহিনীর ঐতিহ্য, কমান্ড স্টাকচারের মধ্যে আঘাত করা। সেনাবাহিনীকে আঘাত করা। সেনাবাহিনীর ভাবর্মূর্তি নষ্ট করা।”
জিওসি বলেন, “সানডে মিররের একটি মিথ্যা তথ্যে সেনাবাহিনীর ভাবর্মূর্তি সম্পর্কে বলা হচ্ছে সেনাবাহিনীর ভাবর্মর্তি নষ্ট হচ্ছে। সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি কচুর পাতার পানির ওপর টলটল করে ভাষে না যে কারোর পায়ে আঘাত লাগলে তা খসে পড়ে যাবে।”
জেওসি জানান, দেশের ভাবমুর্তি নষ্ঠ করার জন্য এ দেশের একটি মহল এ প্রতিবেদনটি প্রকাশের ব্যবস্থা করেছে। মিররের সাংবাদিক ভিজিট ভিসায় এ দেশে এসে মিথ্যা মনগড়া সংবাদ প্রকাশ করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হিসেবে যাদের উদ্বৃতি দেওয়া হয়েছে তাদের ২ জনকে টাকার লোভ দেখানো হয়েছিল মিথ্যা সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য। মিথ্যা মনগড়া কাহিনী সাজিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার দায়ে মিররের এই সাংবাদিক সায়মন রাইট এর আগে অপরাধ করে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শিরোনাম হয়েছিলেন। মন্দ সাংবাদিকতার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনি গ্রেফতারও হয়েছিলেন। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট চলাকালে এই ঘটনা ঘটে। ‘নিউজ তৈরির’ জন্য অর্থের লেনদেনের অভিযোগে তিনি গ্রেফতার হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বহিষ্কৃত হন। সে সময় তার কর্মকান্ডকে ‘কু-সাংবাদিকতা’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
জিওসি সাংবাদিকদের সহাযোগিতা চেয়ে বলেন, “বাংলাদেশকে রক্ষা করেন। বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশীদের মর্যাদা নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে জিওসি সরওয়ার্দী জানান, গত ২৪ এপ্রিল সাভারের নয় তলা ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এ ঘটনায় এক হাজার ১৩১ জন নিহত হন। ভবন ধসের ১৭ দিন পর গত ১০ মে ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে রেশমাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়, যা সারা বিশ্বেই আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এরপর গত ২৩ জুন দৈনিক আমার দেশ তাদের অনলাইনে সংস্করণে “রানা প্লাজা ট্রাজেডি: রেশমা ‘উদ্ধার’ নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১ জুলাই লন্ডনভিত্তিক ট্যাবলয়েড সানডে মিরর রেশমা উদ্ধারের ঘটনা ‘সাজানো’ বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। মিররের বরাত দিয়ে বাংলাদেশর আটটি দৈনিকে ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উদ্ধার ঘটনার প্রায় দীর্ঘ ৫০ দিন পর ‘সানডে মিরর’ নামে বৃটিশ ট্যাবলয়েড পত্রিকা রেশমা উদ্ধার সংক্রান্ত যে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করে, তা উদ্ধারকারীদের মনে চরম আঘাত দিয়েছে। তাদের ত্যাগ, সততা ও মানবতা বোধ প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
জিওসি আরো জানান, এমনকি এ ধরণের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশনের ফলে রেশমার মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কেননা, তার ট্রমা এখনও সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত হয়ে যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আইএসপিআরের পরিচালক শাহিনুল ইসলাম, ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থপনা সচিব, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন।