এক-এগারোর বিচারে কমিশন গঠনের কথা ভাবছে সরকার:ইনু
নিউজ ডেস্ক, এবিসিনউজবিডি, ঢাকা: এক-এগারো সময়কালীন ক্ষমতাশালীদের বিচারে বিভিন্ন মহল থেকে ওঠা কমিশন গঠনের দাবিটি সরকার ভেবেচিন্তে দেখবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
বৃহস্পতিবার,২৫ ফেব্রূয়ারি সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ইনু বলেন, এক-এগারো সৃষ্টিকারীদের বিচারের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে যে কমিশন গঠনের প্রস্তাব উঠেছে, এটা সরকার শুনেছে, সরকার পরে এটা ভেবেচিন্তে দেখবে।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, পঁচাত্তর থেকে বিরাশি- জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্যান্টনমেন্টে কসাইখানা বানানোর ঘটনা, এখানেও কমিশনের ব্যাপার আছে। কমিশন করলে একটি কমিশন হতে পারে, সেটা সরকার বিবেচনা করবে।
কমিশন গঠনের ব্যাখায় ইনু বলেন, পঁচাত্তর থেকে বিভিন্ন সামরিক শাসনকালে যে বিভিন্ন দুষ্কর্ম, মানবাধিকতার লঙ্ঘন, নির্যাতন, অত্যাচার-নির্যাতন, দুর্বৃত্তির ঘটনা ঘটেছে, তা সামগ্রিক বিবেচনায় শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি রাখে।
মন্ত্রী বলেন, মহাজোট সরকারের গত ও বর্তমান আমলে রাষ্ট্র-সরকার-প্রশাসন থেকে মুক্ত সংবাদপত্র, মুক্ত গণমাধ্যম, মুক্ত সাংবাদিকতা, মুক্ত মত প্রকাশের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ বা হয়রানি করা হয়নি। বরং এই আমলে সংবাদপত্র, গণমাধ্যম, সাংবাদিকরা স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে এবং সবচেয়ে বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে।
গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো নীতি বা পদক্ষেপ নেই দাবি করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “দেশে বর্তমানে ২ হাজার ৮৩৪টি পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে, যার বেশির ভাগই সরকারের সমালোচনামুখর। সংসদীয় কমিটি টিআইবির নিবন্ধন বাতিলের সুপারিশ করেছে, যা তাদের এখতিয়ারভুক্ত; তবে সরকার এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।”
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকার সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞাপনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে না। সরকারি বিজ্ঞাপন সবাই পাচ্ছে। বেসরকারি বা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।”
সরকার ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর সঙ্গে বৈরিতা করছে- এ ধরনের আলোচনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “কেউ কেউ এমন বললেও সত্যি হলো এই যে, ওই দুই সংবাদপত্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন আন্তরিকভাবে। কোনো বৈরিতা নেই।”
তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, “ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এক-এগারো সময়কালের ঘটনার বিবরণ মাত্র। এখানে কোনো অত্যুক্তি নেই, বিষোদগার নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা সেই সময়ে সেনা-সমর্থিত সরকার কর্তৃক রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মচারী এমনকি গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর যে নির্যাতন-হয়রানি হয়েছিল, তারই পরিষ্কার চিত্রটি দেখতে পাই। এখানে কোনো হিংসা-প্রতিহিংসার বিষয় নেই।”
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “গণতন্ত্রে একটি সংবাদপত্র বা একজন সম্পাদক বা সাংবাদিক রাজনীতিকদের সমালোচনা করতে পারেন। একজন রাজনীতিক কি সংবাদপত্র বা কোনো সাংবাদিক বা সম্পাদকের যৌক্তিক সমালোচনা করার অধিকারও রাখেন না? কোনো রাজনীতিক সংবাদপত্র বা সাংবাদিক বা সম্পাদকের সমালোচনা করলেই এত শোরগোল তোলা হয় কেন?”
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী এক-এগারো পরবর্তী সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের কয়েকজন সম্পাদক বা সাংবাদিক নিয়ে যে কথা বলেছেন, সেটা তো সত্য ঘটনাই বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী কি সত্য কথাও বলার অধিকার রাখেন না?”
রাজনীতিক ও গণমাধ্যমের পরস্পরের যুক্তিসংগত সমালোচনায় গণতন্ত্রের ক্ষতি কিংবা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হয় না বলে উল্লেখ করে এই জাসদ নেতা বলেন, “তবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনীতিকদের চরিত্র হননের অপপ্রয়াস কিংবা যুক্তি ছাড়া গণমাধ্যমের সমালোচনা গণতন্ত্রের ক্ষতি করে, গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি এ থেকে উৎসাহ পায়।”
জাসদের সভাপতি বলেন, “রাজনীতিক ও সম্পাদকের ন্যুনতম নৈতিক মান বজায় রাখা উচিত। একজন রাজনীতিক যদি নৈতিকতার বিবেচনায় সমালোচিত হতে পারেন, একজন সম্পাদকও নৈতিকতার বিবেচনায় সমালোচিত হতে পারেন।” তিনি বলেন, কোনো সম্পাদকের পক্ষে-বিপক্ষে সমালোচনা গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ নয়। গণমাধ্যমের ওপর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করার অভিপ্রায় সরকারের নেই।