প্রধানমন্ত্রী ১২৫টি উপজেলায় ইউআইটিআরসিই উদ্বোধন করেন
বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,ঢাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ১২৫টি উপজেলা আইসিটি ট্রেনিং এন্ড রিসোর্স সেন্টার ফর এডুকেশন (ইউআইটিআরসিই) উদ্বোধনী করে বলেছেন, তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তোলার অংশ হিসেবে দেশের সকল উপজেলায় আইসিটি রিসোর্স সেন্টার গড়ে তোলা হবে।
বুধবার,২ মার্চ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কেন্দ্রগুলো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ব্যুরো ও পরিসংখ্যানের (বেনবেইস) উদ্যোগে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সারাদেশের সকল উপজেলায় আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার ফর এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার গড়ে তোলার অংশ হিসেবে ১ম পর্যায়ে এদিন সারাদেশে ১২৫টি ট্রেনিং সেন্টার উদ্বোধন করা হল। এর মাধ্যমে ২০১৭ সালের মধ্যে সারাদেশের ১ লাখ শিক্ষককে আইসিটিতে মাস্টার ট্রেনিং প্রদান করা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষা পদ্ধতি সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর হবে। এজন্য ১২৫টি ইউআইটিআরসিই’র আজ উদ্বোধন হলো, দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ১৬০টি সেন্টার নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সমগ্র দেশের ৪৮৯টি উপজেলাতেই এই কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নকে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যেই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা কেবল শহর বা রাজধানীকে কেন্দ্রিক করে উন্নয়ন করতে চাই না। উন্নয়নকে গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে গেছি, সকলের সমান উন্নয়ন করতে চাই।’
তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। সমগ্র দেশে ৫ হাজার ২৭৫ ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে ২শ’ ধরনের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। দেশের ৮ হাজার পোস্ট অফিসকেও ডিজিটাল করার উদ্যোগ গ্রহণে মানুষের নানা সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবার সাথে সাথে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন রিপাবলিক অব কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত অং সিউয়েন ডো। ইউআইটিআরসিই’র প্রকল্প পরিচালক এবং ব্যানবেইস’র পরিচালক ফসীউল্লাহ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি নির্ভর করে গড়ে তুলতে ডিজিটাল ক্লাস রুম করে দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ২৬ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ রুম করে দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের অন্তত একটি করে হলেও আমরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাম রুম করে দেব।
তিনি মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম স্থাপনে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, আপনারা যে যেই স্কুলে লেখাপড়া করেছেন সে স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম স্থাপনে একটি করে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মাল্টি মিডিয়া প্রজেক্টর দিয়ে হলেও সহযোগিতা করুন। আপনার স্কুলকে আপনিই দিন। যে স্কুলে লেখাপড়া করেছেন সেই স্কুলের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে হলেও আপনাদের এগিয়ে আসা দরকার।
তিনি আরো বলেন, আগে মনে আছে কম্পিউটার কিনতে অনেক টাকা লাগত। পার্টির জন্য একটা কম্পিউটার কিনেছিলাম, অযাপল কম্পিউটার, ডিজিটাল প্রিন্টার প্রায় ৩ লাখ টাকায়। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়াম লীগই প্রথম তথ্য প্রযুক্তির সন্বিবেশন ঘটায় বলেও মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন ১৬ কোটি মানুষ ১৩ কোটি মোবাইল সীম ব্যবহার করে, অনেকে দুই-তিনটাও ব্যবহার করে। বাংলাদেশের মানুষ একটু আলাপ প্রবণ বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, কল সেন্টারের মাধ্যমে মানুষ ২ শতাধিক সেবা ঘরে বসেই পাচ্ছে। স্বাস্থ্য সেবাও মোবাইলের মাধ্যমে হচ্ছে।
মোবাইলে এস এম এস আদান-প্রদান ও অপারেটিং দক্ষতাও দেশকে নিরক্ষর মুক্ত করতে ভূমিকা রাখছে বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত দেশে কোন বৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা ছিল না। আমরা ডিগ্রি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ,প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সচিব সুরাইয়া বেগম’সহ মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ,বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবৃন্দ, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, আন্তর্জাতিক সহযোগী সংগঠনের কর্মকর্তা বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি শুধু দৈনন্দিন কাজেই প্রয়োজনীয় নয়, বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে ও দুর্নীতিমুক্ত করতেও একে ডিজিটালাইজড করা দরকার।
প্রধানমন্ত্রী আরা বলেন, তাঁর ছেলে এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটার শিক্ষক সরকারের তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শেই প্রযুক্তির উন্নয়নে বর্তমান সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিই, তখন লোকে ঠাট্টা করতো। কিন্তু এখন আর কেউ ঠাট্টা করতে পারেনা। কারণ সরকার গঠনের সময়কার সমস্যাগুলো আমরা কাটিয়ে উঠেছি।’
তিনি বলেন, ‘সারাদেশে ১শ’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে ১৪ হাজার ৩ শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। দেশের ৭৬ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানে সোলার প্যানেল দিয়ে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, সাধারণ জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। সুতরাং ডিজিটাল বাংলাদেশ কি তা প্রমাণ হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের শিশুরা অনেক বেশি মেধাবী। তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিতে প্রযুক্তির ব্যবহারকে সহজলভ্য করার উদোগ নিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, বিজ্ঞান বিষয় পড়ার ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষার্থীদের অনীহা ছিল। আমরা সরকারে আসার পর পরিকল্পনা করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামই করবো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১২৫টি উপজেলায় ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার স্থাপনে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেনবেইসে ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এখন বিষয় ভিত্তিক মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট নির্মাণের কাজ চলছে। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সার্ভার রুম স্থাপন সহ উপজেলা থেকে নির্বাচিত শিক্ষকদের মাসব্যাপী তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
এখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরা অন্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া ছাড়াও আউট সোর্সিয়ের মাধ্যম নিজেদের ভাগোন্নয়ন করতে পারবেন। একইসঙ্গে স্থানীয় নাগরিকদের একসেস টু ইনফরমেশন নিশ্চিত করার পাশাপাশি এসব কেন্দ্র থেকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
ভবিষ্যতে উপগ্রহ স্থাপন করা হলে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্গম এলাকা যেখানে কেউ চিন্তা করতে পারেনি ইন্টারনেট সার্ভিস থাকতে পারে। সেখানেও ইন্টারনেট সেবাকে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
২৫ হাজার ওয়েব পোর্টাল নিয়ে তৈরী দেশের ‘তথ্য বাতায়ন’ এক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
‘ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার স্থাপন দেশের জন্য মাইল ফলক’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছে, দেশের উন্নয়ন করেছে।
তিনি বলেন, আজ বিশ্বে বাংলাদেশ একটা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আছে। আমাদের আর কারও কাছে হাত পেতে চলতে হবে না। আমরা বীরের জাতি, আমরা বিজয়ী হবো। আর এভাবেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউআইটিআরসিই’র উদ্বোধন শেষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, রাজশাহীর পবায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন।