তনু হত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল সারা দেশ

তাসনীয়া আজাদ লাভলী, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের সোহাগ বঞ্চিত সোহাগী জাহান তনু’র হত্যাকারীদের আটক ও বিচারের দাবিতে সারা দেশ এখন উত্তাল। বিক্ষুব্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী তৎপরতার কথা বললেও পাঁচ দিনেও তনু হত্যা মামলার কোন অগ্রগতি হয়নি। সনাক্ত হয়নি আসামিরা। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে গত ২০ মার্চ (রোববার) রাতে হত্যা করা হয়। ময়নামতি সেনানিবাসের পাহাড় হাউজের লাগোয়া কালভার্টের কাছাকাছি ঝোপে রাত ১০টায় তার লাশ পাওয়া যায়। তনু কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেনের মেয়ে।

শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’র সড়কে ছাত্র-ছাত্রীরা মানববন্ধনের পর বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সচেতন নাগরিকরা এ হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।

তনু হত্যার বিচারের দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ৬৮টি মানবাধিকার সংস্থার জোট সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি মানববন্ধন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মূকাভিনয়ের মাধ্যমে তনু হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন কুমিল্লার সাংস্কৃতিক কর্মীরা। নগরের কান্দিরপাড় এলাকায় বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনার সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মীরা অবিলম্বে তনুর হত্যাকারীদের বিচার দাবি করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।

তনুর বাবা ইয়ার হোসেন শুক্রবার মুঠোফোনে এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, ‘আমি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী। সেদিন আমার ডিউটি ছিল বেলা দুইটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত। রাত সোয়া দশটায় সাইকেলে করে বাসায় ফিরলাম। দেখি, তনুর মা মেঝেতে মন খারাপ করে বসে আছে। বলল, মেয়ে বাসায় ফেরেনি। আমার প্রতিবেশী ক্যান্টনমেন্ট বালক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিকদার কামাল। আমি বাসা থেকে বের হয়ে আগে তাকে বিষয়টি জানাই। এরপর টর্চলাইট নিয়ে মেয়ের খোঁজে বের হই। বেশি দূর যাইনি। বাসার কাছেই একটি কালভার্ট আছে। আমি কালভার্টের পাশে টর্চলাইটের আলো ফেললাম। দেখি আমার মেয়ের একটি জুতা পড়ে আছে। আমি চিৎকার দিয়ে কালভার্টের পাশের নিচের অংশে নেমে যাই। আমার গলা শুনে ছোট ছেলে রুবেল বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। ১৫ থেকে ২০ গজ দূরে ওর মোবাইলটা পড়ে ছিল। আমি খুঁজতে খুঁজতে এগোই। একটু উঁচু জায়গায় জঙ্গল ও গাছগাছালির মধ্যে তনুকে পেলাম। গাছের তলায় ওর মাথা দক্ষিণ দিকে আর পা উত্তর দিকে পড়ে আছে। মাথার নিচটা থেঁতলে গেছে। পুরো মুখে রক্ত আর আঁচড়ের দাগ। আমরা পাঁচজন মিলে ওকে সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) নিয়ে যাই।’

ইয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে দুইটা টিউশনি করত। এক দিন পর পর যেত। সাড়ে চারটার দিকে যখন বেরোত, ওর মা আনোয়ারা বেগম এগিয়ে দিত। ফেরার পথেও ওর মা কিছু দূর গিয়ে নিয়ে আসত। ওই দিন তনু ওর মাকে বলেছিল, সে একাই আসতে পারবে। এখানে থেকে আমার মেয়েটা স্কুল ও কলেজের পড়াশোনা শেষ করেছে। আমি এখানে ৩১ বছর চাকরি করি। সাত-আট বছর ধরে কোয়ার্টারে থাকি। নিরাপদ এলাকা। কারা ওকে মেরেছে? এখন এ নিয়ে কী বলব? আল্লাহ দেখেছেন। আমি এর ন্যায় বিচার চাই।’

গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর কুমিল্লা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তনুর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন বলেছেন, ‘তার এক খালাতো বেনকে তনু জানিয়েছিলেন, ক্যান্টনমেন্টের এক সৈনিক তনুকে বিরক্ত করতো।’

তনুর বাবা কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের নামে একটি হত্যা মামলা করেন। তনু ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের নাট্যকর্মী ও একজন সংস্কৃতিকর্মী ছিলেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ