অর্থ ফেরত আনতে গঠন হচ্ছে টাস্কফোর্স
নিউজ ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা: আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরত আনার চেষ্টায় নামছে সরকার। এ লক্ষ্যে গঠন করা হচ্ছে বিশেষায়িত একটি টাস্কফোর্স। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে দু-একদিনের মধ্যেই এ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বিশেষত ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে অর্থ উদ্ধার সম্ভব হবে বলে মনে করছে সরকার। বিশেষ করে ফিলিপাইনের ব্যাংকিং চ্যানেলে যদি বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ থেকে থাকে, তবে তা ফেরত পাওয়া যাবে। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই বিশেষায়িত টাস্কফোর্সটি গঠন করা হচ্ছে। টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে থাকতে পারেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব। সদস্য হিসেবে থাকবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট আরো দুটি অফিসের প্রতিনিধিরা।
সূত্র বলছে, চুরি যাওয়া ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই বিশেষায়িত এ টাস্কফোর্সের প্রথম কাজই হবে চুরি যাওয়া অর্থ কী অবস্থায় আছে, তা নির্ণয়ের চেষ্টা করা। বিশ্বের কোন কোন দেশে এ অর্থ পাচার হয়ে থাকতে পারে, তাও চিহ্নিত করবে টাস্কফোর্স। পাশাপাশি অর্থ উদ্ধারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে তারা।
ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) রয়েছে। তাই চুরি যাওয়া অর্থ ফিলিপাইনে থাকলে তা উদ্ধারের ব্যবস্থা করবে এ টাস্কফোর্স। এসব কাজের জন্য টাস্কফোর্সকে কোনো ধরনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা অনুসন্ধানে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তবে টাস্কফোর্সের কাজ হবে কেবল অর্থ উদ্ধার করা। টাস্কফোর্স গঠনের পর তার কার্যপরিধি ঠিক করা হবে। তার পর শুরু হবে কাজ। এজন্য টাস্কফোর্সের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, শ্রীলংকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করতে হতে পারে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, খোয়া যাওয়া অর্থের সিংহভাগই ফিলিপাইনে রয়েছে। ফিলিপাইন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এ অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করা হবে। এজন্য প্রয়োজনে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) সহযোগিতাও চাওয়া হতে পারে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি খোয়া যায় রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ফিলিপাইনে যায় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। শ্রীলংকায় বাকি ২ কোটি ডলার। শ্রীলংকায় যাওয়া অর্থ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ফেরত পাওয়া গেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে। তবে ফিলিপাইনে প্রবেশ করা অর্থের কিছু অংশ আবার চলে গেছে সে দেশের বাইরে। এ ঘটনার ৪০ দিন পর ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পাশাপাশি সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটিও বিষয়টি তদন্ত করছে।
এদিকে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সহযোগিতা চেয়ে এরই মধ্যে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ও সে দেশের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিকে চিঠি দিয়েছেন গভর্নর ফজলে কবির।