এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু

প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,

ঢাকা : দেশের ১০ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ। প্রথম দিন সকাল ১০টায় সাধারণ, কারিগরি ও মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেবে ১২ লাখ ১৮ হাজার ৬২৮ শিক্ষার্থী। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবার গত বছরের তুলনায় প্রায় দেড় লাখ বেশি। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এবার ছয় লাখ ৫৪ হাজার ১১৪ জন ছাত্র এবং পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার ৫১৪ জন ছাত্রী। লিখিত পরীক্ষা চলবে ৯ জুন পর্যন্ত। ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১১ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত।

৩ এপ্রিল (রবিবার) সকালে রাজধানীর সিদ্বেশ্বরী গার্লস কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সারাদেশের দুই হাজার ৪৫২টি এবং বিদেশের ৭টি কেন্দ্রে একযোগে হবে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি, মাদ্রাসা বোর্ডের আলিম, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি বিএম ও ডিআইবিএস পরীক্ষা।

এবার পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসসহ সকল অপরাধ ঠেকাতে পাবলিক পরীক্ষাসমূহ অপরাধ আইন ১৯৮০ এর ৪ ধারা কঠোরভাবে প্রয়োগের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আইন অনুসারে পরীক্ষা শুরু আগে প্রশ্ন সংক্রান্ত কোন কাগজ বা ধারণাদায়ক কোন প্রশ্ন প্রণীত কাগজ যে কোন উপায়ে ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের অপরাধে ৪ বছর পর্যন্ত কারাদ- কিংবা অর্থদ- বা উভয় দ-ের বিধান আছে।

একই সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৭ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন যা মিথ্যা, যার দ্বারা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয় বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয় তাহলে এ ধরনের অপরাধের জন্য ৭ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদ- এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদ-ের বিধান রয়েছে।

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সারাদেশের পরীক্ষা তদারকি করা হবে। প্রতিটি কেন্দ্রের সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সরাসরি যুক্ত থেকে মোট পরীক্ষার্থীর উপস্থিতি, অনুপস্থিতি ও বহিষ্কারসহ সার্বিক তথ্য আদান-প্রদান করবে। পরীক্ষা সংক্রান্ত যে কোন তথ্যসেবা পেতে বা অভিযোগ জানাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে (০২৯৫৭৬৭৮০, ০১৭৭৭৭০৭৭০৫, ০১৭৭৭৭৭০৭৭০৬ নম্বরে, এছাড়া () এই ঠিকানায় যোগাযোগ করা যাবে।

আজ প্রথমদিন বাংলা আবশ্যিক প্রথম পত্র, সহজ বাংলা প্রথম পত্র, বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রথম পত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এবার পরীক্ষায় প্রথমে বহুনির্বাচনী ও পরে সৃজনশীল বা রচনামূলক (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। উভয় পরীক্ষার মধ্যে ১০ মিনিট সময়ের ব্যবধান থাকবে। সকালের পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রথমে বহুনির্বাচনী- ১০টায় শুরু হয়ে ১০টা ৪০ মিনিটে শেষ হবে। ১০ মিনিট বিরতি দিয়ে ১০টা ৫০ মিনিট থেকে তত্ত্বীয় পরীক্ষা শুরু হবে। বিকেলের পরীক্ষার ক্ষেত্রে দুইটা থেকে দুইটা ৪০ মিনিট পর্যন্ত বহুনির্বাচনী, ১০ মিনিট বিরতি দিয়ে দুইটা ৫০ মিনিট থেকে তত্ত্বীয় পরীক্ষা শুরু হবে।

২০১২ সালে শুধু বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা সৃজনশীল পদ্ধতিতে হয়েছে। গেল বছর পর্যন্ত ১৩টি বিষয়ের মোট ২৫টি পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর নতুন ৬টি বিষয়ের ১১টি পত্রসহ ১৯টি বিষয়ের ৩৬টি পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এবারও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। এ ধরনের পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবে। তবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (অটিস্টিক এবং ডাউন সিনড্রোম বা সেরিব্রালপালসি আক্রান্ত) পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেয়া হবে। এ ধরনের শিক্ষার্থীরা অভিভাবক, শিক্ষক বা সাহায্যকারী নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।

এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ‘নকলমুক্ত’ পরিবেশে পরীক্ষা নেয়ার আশা প্রকাশ করে বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ালেও আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ার দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার মান বেড়েছে। তবে আমরা যাকে বিশ্বমানের বলি সেখানে পৌঁছতে আরও সময় লাগবে। সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, আমরা এর ফল পাচ্ছি।

প্রশ্ন ফাঁসে শিক্ষকদের জড়িত থাকার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, যারা এসবের সঙ্গে (প্রশ্ন ফাঁস) যুক্ত থাকেন তারা পুলিশি ও গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে আছেন। এবার কোন শিক্ষক কোনভাবেই কোন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় সহযোগিতা করতে পারবেন না। তা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন অনুযায়ী সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, দুই হাজার ৪৫২টি কেন্দ্রে আট হাজার ৫৩৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে। গতবারের চেয়ে ২২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৩৩টি পরীক্ষা কেন্দ্র বেড়েছে। এ বছর এইচএসসিতে আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে ১০ লাখ ২০ হাজার ১০৯, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিমে ৯১ হাজার ৫৯১, কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (বিএম) এ এক লাখ দুই হাজার ১৩২ এবং ডিআইবিএসে চার হাজার ৭৯৬ জন পরীক্ষা দিচ্ছে।

শিক্ষামন্ত্রী সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে বলেছেন, আশাকরি পরীক্ষা-পরীক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সবার নিকট আনন্দদায়ক ও উৎসবমুখর হবে। সম্পূর্ণ নকলমুক্ত ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পরীক্ষা সফলভাবে অনুষ্ঠানে আপনাদের সহযোহিতা কামনা করছি।

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ