গতানুগতিক শিক্ষায় আধুনিক দেশ গড়া অসম্ভব
চট্টগ্রাম ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : শিক্ষার মূল লক্ষ্য হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে প্রস্তুত করা। তারা যেন নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশকে বিশ্ব মর্যাদার আসনে পৌঁছে দিতে পারে। তবে প্রচলিত ও গতানুগতিক শিক্ষা দিয়ে তা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ । ’
২ এপ্রিল (শনিবার) দুপুরে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের হাটহাজারীস্থ রিসার্চ অ্যান্ড ফার্ম বেইজড ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, এজন্য বর্তমান যুগের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিশ্বমানের জ্ঞান, প্রযুক্তি, দক্ষতা ও শিক্ষা দরকার। যাতে তরুণ প্রজন্ম বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। দেশ এখন সে লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে। ’
হাটহাজারী সদরের ১০ একর পাহাড়ি ও ঢালু জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে এই সম্প্রসারিত ক্যাম্পাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) দেবময় দেওয়ান।
বিশ্ব র্যাংকিংয়ে উপরের দিকে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় না থাকার হতাশার কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ হতাশা দূরীকরণে দেশের উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে একটি অ্যাক্রেডিটেশন (স্বীকৃত) কাউন্সিল গঠন করার হয়েছে। এ কাউন্সিলের কাজ হচ্ছে মনিটরিং করা, কোয়ালিটি ইমপ্রুভ করা, পর্যাবেক্ষণ করা, পরিমাপ করা। যে কাউন্সিল সরকারি ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করবে।
মন্ত্রীসভায় সেই কাউন্সিল অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘শুধু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় করলে হবে না, আমাদের সকল বিশ্ববিদ্যালয় একইভাবে করতে হবে। তাই আমরা অ্যাক্রেডিটেশন (স্বীকৃত) কাউন্সিল গঠন করেছি। ইতিমধ্যে আমরা একনেকে উপস্থাপন করেছিলাম। গত সোমবার মন্ত্রিসভা সেটা অনুমোদন দিয়েছে। আগামী সংসদ অধিবেশনে এটি পাশ হবে। এটা করতে পারলেই বুঝতে পারবো জগতে আমাদের কোনো (বিশ্ববিদ্যালয়ের) স্থান আছে কিনা। এই কাউন্সিল শিক্ষা কার্যক্রম যাচাই করে এ বিষয়ে স্বীকৃতি দেবে। ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বমানের তালিকায় স্থান করে নিতে পারবে।
বর্তমান সরকারের আমলে অদৃশ্যভাবে অনেক বড় অর্জন হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের ২০১৫ সালের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলে মেয়ে সমতা আনার টার্গেট দেওয়া হয়েছিল। পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র আমরাই সেই লক্ষ্যমাত্রার তিনবছর আগে ২০১২ সালেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেছি। বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে মেয়েদের হার ৫১ শতাংশ এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের হার ৫৩ শতাংশ। এই সমতার ফলে মেয়েরাও বড় বড় চ্যালেঞ্জ নিতে পারছে। বর্তমানে ৯৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ শিশু স্কুলে নাম লিখিয়েছে। তাদের মধ্যে নিয়মিত ৯৬ শতাংশ শিশু স্কুলে যায়। যুদ্ধ হোক, বন্ধ হোক বছরের প্রথমদিনই শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া হবে।’
মেয়েরা অনেকদূর এগিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছোটকালে দেখেছি ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে যেত মা-বোনেরা। মেয়ের উচ্চতা দেখতে সেখানে গিয়ে বলতো মা একটু দাঁড়াও তো দেখি, চুলটা একটা ছাড়ো তো দেখি। এখন সময় পাল্টেছে। ছেলেরা সাবধান ! এখন আর সে সময় নেই। এখন মেয়েরাই ছেলে দেখতে যাবে। আমাদের মেয়েরা অনেকদূর এগিয়েছে।’
নতুন গবেষণা ক্যাম্পাসকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত অংশ উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এটি একটি কার্যকর গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা এখান থেকে উন্নতমানের শিক্ষা অর্জন করে তা তাদের বাস্তব কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ফুড প্রসেংসিং না থাকার কারণে প্রতিবছর অনেক ফল নষ্ট হয়ে যায়। সারাবছর একটা ফল পাওয়া যায় না। আমি আশা করবো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ক্ষেত্রে গবেষণা করে ফল নষ্ট হওয়া থামাবে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় একটি সরকারি বিদ্যালয় ও সরকারি কলেজ থাকবে। এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই কার্যকর হয়ে যাবে। পাশাপাশি কক্সবাজারেও একটা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হবে।’
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে চলে যেতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় হাইকোর্টের রায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছে। কিন্তু মামলা শেষ হলে আর থাকতে পারবেন না।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যরিস্ট্রার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘একসময় বলা হয়েছিল বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুঁড়ি, আজ সেই বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা কারও কাছে হাত পাততে চাই না, আমরা গর্ব নিয়েই বাঁচতে চাই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একটা সময় বাংলাদেশের সমালোচনা করতেন, কিন্তু সেই তিনি এখন তার বক্তব্যে উন্নয়নের মডেল হিসেবে বাংলাদেশের উদাহরণ দেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাহরণ দেন।’
এছাড়া বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় ১৩ তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সেমিনার।