এই অর্জন গোটা পৃথিবীর বিপক্ষে
ক্রিয়া ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : বিশ্বাস’; এই একটা শব্দে ভর করেই বিশ্ব টি-টোয়েন্টির শিরোপা জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইডেনের নাটকীয় ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারানোর পর পুরস্কার বিতরণের মঞ্চে এসে সঞ্চালক নাসের হুসেইনের প্রশ্নে এটাই জানালেন ড্যারেন সামি।
দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে, এই আসরে খর্ব শক্তির দলও পাঠানোর কথা ভেবেছিল ক্যারিবীয় বোর্ড। সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার মার্ক নিকোলাস বিশ্ব টি-টোয়েন্টি শুরুর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তাদের মাথায় মগজ কম।’
সব মিলিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের লড়াইটা মাঠে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে হলেও আদতে ছিল গোটা পৃথিবীর বিপক্ষেই। মাইকে নিজেদের সজোরে ‘চ্যাম্পিয়ন’ বলে ঘোষণা দিয়ে সামি যেন জানিয়ে দিলেন, গোটা বিশ্বকেই হারিয়ে দিয়েছে তাঁর দল। ফাইনালের ঠিক এক মাস আগে, ক্রিকইনফোতে ৩ মার্চ প্রকাশিত একটি লেখায় মার্ক নিকোলাস ওয়েস্ট ইন্ডিজের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের মাথায় বুদ্ধি কম, তবে তাদের আইপিএলের ইতিহাস ভালো।’ এই কথাটাই প্রচণ্ড অপমানিত করেছিল ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের, সেই রাগটাই যেন কার্লোস ব্রাথওয়েট ঝাড়লেন নিকোলাসের স্বদেশি বেন স্টোকসের ওপর! ম্যাচ জিতে পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চে এসে আরো অনেক অপমানের বিপ্লবী জবাবই দিলেন সামি, ‘লোকে ভেবেছিল আমরা হয়তো এই আসরে খেলব না। বোর্ডের সঙ্গে আমাদের ঝামেলা চলছিল, মার্ক নিকোলাস আমাদের বুদ্ধি কম বলেছে। সব প্রতিকূলতা জয় করেই আমরা এখানে এসেছি। আমরা ১৫ জন, প্রত্যেকে এক-একজন ম্যাচ উইনার। সবাই মিলে এই ক্রিকেটটা খেলেছি আমাদের আবেগতাড়িত ভক্তদের জন্য।’ একই সঙ্গে সামি জানিয়েছেন, সবই সম্ভব হয়েছে বিশ্বাস রাখার জন্য, ‘আমরা বিশ্বাস হারাইনি। আমাদের দলে একজন যাজক আছে, আন্দ্রে ফ্লেচার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সবাই প্রার্থনা করত, আমরা কেউই বিশ্বাস হারাইনি। এই জয় আমাদের পরম কাঙ্ক্ষিত। এমন এক জয় যা আমরা সারা জীবন মনে রাখব।’ সামি ধন্যবাদ জানিয়েছেন এই জয়ের পেছনের যাঁরা কারিগর, কোচ এবং সব সাপোর্ট স্টাফকেও। গোটা পৃথিবীর বিপক্ষে লড়াইয়ে একমাত্র তাদেরই যে পাশে পেয়েছেন ক্যারিবীয় ক্রিকেটাররা। কলকাতা থেকেই শুরু হয়েছিল ক্যারিবীয়দের বিশ্ব টি টোয়েন্টির অভিযান। এখানেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন স্যামুয়েলস। সেদিন ডাগআউটের যে চেয়ারে বসেছিলেন, কালও বেছে নিয়েছিলেন সেই চেয়ারটিই, ‘আমি এসে সেই চেয়ারটাতেই বসলাম। বললাম, এখানে বসে শূন্য করেছিলাম, এবার এখানে বসেই ভালো কিছু করব।’ সেই ভালো কিছু করাটাকে অবশ্য অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন স্যামুয়েলস, ২০১২ সালের বিশ্ব টি-টোয়েন্টির ফাইনালে ৭৮ রানের ইনিংস খেলে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। চার বছরে অভ্যাসটায় মরচে পড়েনি। দল আবার যখন টি-টোয়েন্টির ফাইনালে এবং বিপর্যয়ের মুখে, তখনই স্যামুয়েলসের নিজ মূর্তিতে ফেরা। অপরাজিত ৮৫ রানের ইনিংস খেলা স্যামুয়েলস ম্যাচ শেষে বললেন, ‘আমি জানি ফাইনালে কী করতে হয়, তাই যখন মাঠে নামি জানা ছিল দল কী চায়। এই জয় ক্যারিবিয়ানের মানুষের জন্য।’ সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে স্যামুয়েলসের আউট হওয়ার ধরনের কড়া সমালোচনা করেছিলেন ধারাভাষ্যে থাকা শেন ওয়ার্ন। অস্ট্রেলিয়ার এই লেগস্পিনারের সঙ্গে অবশ্য স্যামুয়েলসের সম্পর্কটা অনেক আগে থেকে তেতো। দুজনে যখন জাতীয় দলে খেলতেন, তখনই মাঠে কথার লড়াইয়ে জড়িয়েছেন বহুবার, যার জের দেখা গেছে বিগব্যাশেও। তাই মাইক্রোফোন হাতে ওয়ার্ন ঝাল মিটিয়েছিলেন সেমিফাইনালে! তারই শোধ নিলেন স্যামুয়েলস, ফাইনাল সেরার ট্রফি এই লেগস্পিনারকে উৎসর্গ করে, ‘আমি মাইকে কিছু বলি না, যা বলার ব্যাটের ভাষাতেই বলি। ওয়ার্ন, এই ট্রফিটা তোমার জন্য।’ শেষ ওভার শুরুর সময়েও জয়ের ব্যপারে আশাবাদী ছিলেন এউইন মরগান, ৬ বলে যে লাগত ১৯ রান! ম্যাচ শেষে পরাজিত সেনাপতি হিসেবে পুরস্কার বিতরণের মঞ্চে এসে প্রশংসাই করলেন প্রতিপক্ষের, ‘অভিনন্দন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যোগ্য দলই জিতেছে। অনেক উত্থান আর পতন ছিল ম্যাচে। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, খুব বিশেষ কিছু একটার শুরু হয়েছে। আমরা জয় একসঙ্গে উদ্যাপন করেছি, হারের দুঃখটাও একসঙ্গেই ভাগ করে নেব।’
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ