গ্রেপ্তার আসলাম চৌধুরী
প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
১৫ মে (রবিবার) সন্ধ্যায় রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে তাঁকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির এক নেতার সঙ্গে বৈঠক এবং সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে আঁতাত করে ‘বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে তাঁকে আটক করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আসলামকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ভারতে বসে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদের’ এজেন্টের সঙ্গে ‘সরকার উৎখাতের বৈঠকে’ আসলাম ছাড়া আর কে বা কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তথ্য-প্রমাণ জড়ো করে এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আসলামসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রথমে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী ছাড়াও আর কেউ জড়িত কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। আরো তথ্য সংগ্রহ করে অ্যাকশনে যাবেন বলেও জানান তিনি। গতকাল সকালে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার জানিয়েছেন, আসলাম চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তাঁকে আটকেরও চেষ্টা চলছে।
সম্প্রতি ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির সদস্য ও সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির প্রধান মেন্দি এন সাফাদি ভারত সফর করেন। সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ সম্পর্কে নানা মন্তব্য করেন সাফাদি। এতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। বৈঠক শেষে গ্রুপ ছবি তোলেন সবাই। ওই ছবিতে আসলাম চৌধুরীও রয়েছেন। এই বৈঠকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদের’ এজেন্টের সঙ্গে ‘সরকার উৎখাতের বৈঠকে’ আসলাম চৌধুরী ছিলেন বলে গণমাধ্যমে খবরও বেরিয়েছে। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহ দেশের রাজনীতিতে তোলপাড় চলছিল।
গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় আসলাম চৌধুরীর ভাই আলমগীর হোসেন চৌধুরী বলেন, কিছু সময় আগে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাঁর ভাইকে আটক করে নেওয়া হয়েছে। এ সময় আসলামের গাড়িচালককেও আটক করা হয়। তাঁদের ৩০০ ফুট রাস্তায় গাড়ি থেকে নামিয়ে নেওয়া হয়।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন ও ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আসলামকে আটক করা হয়। তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রাতে ডিবির ডিসি (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম বলেন, গোপন খবরের ভিত্তিতে আসলামকে খিলক্ষেত থানা এলাকার কুড়িল বিশ্বরোডের রাস্তা থেকে আটক করা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল বিকেলে মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আর কারা আসলামের সঙ্গে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করছি। আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে। তারা কিভাবে জড়িত, কোন পর্যন্ত ক্ষতি করেছে, সব কিছু জানিয়ে দেব।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তারা যে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে, তারই আরেকটা বহিঃপ্রকাশ মোসাদের সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের বৈঠক।’ বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কহীন একটি দেশের রাজনীতিকের সঙ্গে বিএনপি নেতার বৈঠকের বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মোসাদ বিভিন্ন কায়দায় আমাদের এখানে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে। তারা বিএনপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছে। এটা আমাদের নজরে আসছে। যাদের নাম আসছে, তাদের গতিবিধির ওপর আমরা নজরদারি করছি। তাদের সঙ্গে এখানে কারা কারা সম্পৃক্ত আছে সেগুলো আমাদের গোয়েন্দারা দেখছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন হত্যাকাণ্ড হয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বা টার্গেট কিলিং হয়, সেগুলো ঘটার সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যে সেই একটা ওয়েবসাইট থেকে প্রচারিত হয় যে এটা আইএস করেছে কিংবা আরেকটা জঙ্গি সংগঠনের নাম দিয়ে বলা হয়, ওটা ওমুকে করেছে। বাংলাদেশের জঙ্গিদের সঙ্গে আইএস কিংবা আল-কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর কোনো যোগাযোগ নেই। বর্তমান সরকারের আমলে এরা (জঙ্গিরা) সর্বতভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর থেকে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। একটি ছবিতে বাঁয়ে লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদি, মাঝে আসলাম চৌধুরীকে দেখা যায়। ছবিটি গত ১০ মার্চ মেন্দি এন সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনসের ফেসবুক পেজে আপলোড করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করছেন, শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে বিএনপি ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করছে। বিষয়টি জেনে ঢাকায় ফিলিস্তিনি চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন হবে ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’। তবে বিএনপি ইসরায়েল কিংবা মোসাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, আসলামের ওই সফর ছিল ‘ব্যক্তিগত’।
গত ১০ মে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আসলাম চৌধুরী দাবি করেন, তিনি ব্যক্তিগত সফরে ভারতে গিয়েছিলেন। সেখানে ইসরাইয়েলের কোনো নেতার সঙ্গে তিনি সরকার উৎখাতের বৈঠকে অংশগ্রহণ করেননি। তাঁর দাবি ছিল, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তবে তিনি সেখানে সাফাদির সঙ্গে পরিচয়, পর্যটন এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করেন। এমন দাবি করলেও আত্মগোপনে চলে যান চট্টগ্রাম বিএনপির এই নেতা।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এসব ব্যাপারে তদন্ত করা হবে। কাজ শুরু হয়েছে।’ আসলাম চৌধুরী প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে গাড়ি পোড়ানোর মামলাসহ ৩০ থেকে ৩৫টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার কারণেই তিনি আত্মগোপন করেছেন। ষড়যন্ত্রের বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পাওয়া গেলে দেশের প্রচলিত আইনে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসলাম চৌধুরী যেটা বলার চেষ্টা করছেন ঘটনাচক্রে তিনি সেখানে গিয়েছেন। তাহলে তিনি তাঁকে ডিফেন্ড করলেই তো পারতেন। পালাচ্ছেন কেন? বিষয়গুলো তদন্ত করা হচ্ছে।’
গতকাল আসলাম আটক হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে চট্টগ্রামে বিট পুলিশিং কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ‘আসলাম চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাঁকে যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই গ্রেপ্তার করা হবে।’