ওরা’ এখন ইসলামের বিরুদ্ধে: প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি,

ঢাকাঃ সরকার উৎখাতে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী জোট এখন ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লন্ডনে দলীয় এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘এই চক্রান্তকারী, খুনি, ষড়যন্ত্রকারী- আজকে যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে…এমনকি আমি বলব, ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করে দিয়েছে।’

ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির এক রাজনীতিকের সঙ্গে বৈঠকের সূত্র ধরে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে তিনি ষড়যন্ত্র করছিলেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাদের সাথে হাত মিলাচ্ছে? শুধু আমাকে সরানোর জন্য তারা এতো দূর গেছে।’

দখলদার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনি নারী-শিশু হত্যার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা অন্তঃসত্ত্বা নারীদের পর্যন্ত হত্যা করল, হাজার হাজার শিশুদের হত্যা করল…ভবিষ্যতে এই শিশু যেন তাদের অধিকার নিয়ে লড়াই করতে না পারে। যারা এভাবে খুন করল, আর তাদের সাথে হাত মিলাচ্ছে, সরকার উৎখাত করার জন্য, ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য।’

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যার জন্যও বিএনপিকে দায়ী করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আজ  পর্যন্ত জাতির কাছে ক্ষমাও চাননি। এখন গুপ্ত হত্যায় নেমে গেছে।’

শেখ হাসিনার ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে মঙ্গলবার রাতে লন্ডনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। বুলগেরিয়ায় অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড উইমেন লিডারস ফোরামে যোগ দিতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী দুই দিন লন্ডনে কাটান।

বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও হত্যার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় থেকে লুটপাট করে খেয়েছে, দুর্নীতি করেছে, মানি লন্ডারিং করেছে, মানুষ হত্যা করেছে। আর এখনও তাদের চরিত্র এতটুকু পরিবর্তন হয়নি।’

যুদ্ধাপরাধে বিএনপি ও জামায়াতের কয়েকজন নেতার ফাঁসি কার্যকরের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু ওই পরাজিত শক্তি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, একের পর এক বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে- এটা তাদের ভালো লাগে না। কারণ যাদের হাতে আমাদের লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তুলে দিয়েছিল, তারা যুদ্ধাপরাধী হিসাবে সাজাপ্রাপ্ত। আর সেই সাজাও আমরা কার্যকর করেছি।’

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমন নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো. কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লা এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

জামায়াত নেতাদের মন্ত্রিসভার সদস্য করায় বিএনপি নেতৃত্বকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘যারা ওই পতাকা যুদ্ধাপরাধীদের হাতে তুলে দিয়েছে, তাদেরও বিচার হবে বাংলাদেশে। কারণ তারা সমান দোষে দোষী। তারা আবার মুখ উঁচু করে কথা বলে কীভাবে? জাতির ঘৃণা তাদের ওপর হওয়া উচিত। আমি তো দেশবাসীকে বলব,অন্তত যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, তাদের ঘৃণা যেন এরা উপলব্ধি করতে পারে।’

বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ২০০১ সালে সরকার গঠনের পর নিজামী ও মুজাহিদকে মন্ত্রিসভায় রেখেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ভারতে নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসার স্মৃতিও বক্তব্যে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট দেশের বাইরে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচন করা হয়।

ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘রেহানার ছেলে ববির জন্মের পর আমি আবার ফিরে যাই দিল্লিতে। আমি সেই সময় জানতাম না, আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয় ’৮১ সালের কাউন্সিলে।’

১৯৮১ সালের ১৭ মের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেদিন আমি দেশে ফিরে যাই সেদিনটা ছিল অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ একটি দিন। আমি ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাংলাদেশে নেমেছিলাম।’

প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে ১৭ মে বিকালে তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করে শেখ হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজ। সামরিক শাসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী রাজধানীর পুরনো ওই বিমানবন্দরের টারমার্কে গিয়ে তাদের সভানেত্রীকে উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে আনে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনে হচ্ছিল, প্রকৃতিই যেন আমার সাথে একাকার হয়ে গিয়েছিল। ৩০ জুলাই ’৭৫ সালে যখন বাংলার মাটি ছাড়ি, তখন তো আমার সবাই ছিল। মা, বাবা, ভাই, তাদের তো রেখেই এসেছিলাম। কামাল, জামাল, রাসেল, আমার ছোট ভাইয়ের বউরা এয়ারপোর্টে এসেছিল আমাকে বিদায় জানাতে।৮১ সালে যেদিন আমি ফিরে যাই, সেদিন কিন্তু আমার আপন চেনা মুখগুলো পাইনি। তাদের আর আমি দেখতে পারিনি। বিনিময়ে দেখেছিলাম বনানী কবরস্থানে ওই সারি সারি কবর।’

দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ‘ভালোবাসার’ কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু আমি পেয়েছিলাম লাখো মানুষ। আমি ভাবতে পারিনি, এতো মানুষ আসবে। তারা কোনো নিয়ম মানেনি। প্লেন যখন নেমেছিল,হাজার হাজার মানুষ কিন্তু ছুটে এসেছিল।’

‘প্লেনের সিঁড়িও লাগাতে পারেনি। আমার জীবনের এটা একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। তখন একটা ট্রাক নিয়ে আসা হল। প্লেনের সাথে একটা মই দিয়ে দেওয়া হল। ওই মইটা পার হয়েই আমি ট্রাকে চড়ে আসলাম।’

জনতার ভিড়ে ওই বিমানবন্দর থেকে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে পৌঁছাতে চার ঘণ্টা লেগে যায় বলেও জানান তিনি।

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ