রমজানকে ঘিরে ফুটপাত বাণিজ্য
চট্টগ্রাম ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা: রমজানকে ঘিরে নগরে শপিং মলের সামনে সড়কের অংশ ও ফুটপাত বেচাকেনায় নেমেছে একটি চক্র। সরকারদলীয় লোক পরিচয়ে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে চক্রটি এমন তৎপরতা চালাচ্ছে।
সড়কের অংশ ও ফুটপাত বেচাকেনায় যারা জড়িত তাদের তালিকা থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না পুলিশ।
৮ জুন (বুধবার) স্থানীয় এক সংবাদ মাধ্যমে এমনই চিএ ফুটে উঠেছে ঢাকার পরে বৃহত্তম এ চট্টগ্রাম নগরীর ফুটপাত দৃশ্য।
উল্লেক্ষ, ৩০ মে পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার নগরের বিভিন্ন মার্কেটের সামনের সড়কে অংশ এবং ফুটপাতে হকার বসতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এবং এর প্রেক্ষিতে ফুটপাত দখলমুক্ত করার ব্যর্থ আভিযান পরিচালনাও করতে দেখা যায়। কিন্তু, সিএমপির শীর্ষ এ কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে নগর পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার সাংবাদিকদের বলেন, ‘রমজানে বিপনি বিতানের সামনে সড়কের জায়গা দখল করে এবং ফুটপাতে কোনো হকারের দোকান থাকতে পারবে না।’
রোজাকে সামনে রেখে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের একটি চক্র মার্কেটের সামনে সড়কের অংশ এবং ফুটপাত বাণিজ্যে লিপ্ত হওয়ার বিষয়টি জানা নেই।’ তবে সিএমপির উচ্চপদের এক কর্মকর্তা জানান, গোয়েন্দাদের কাছ থেকে তালিকা পেলেও ওই চক্রে বেশিরভাগ সরকারদলীয় লোক হওয়ায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছে না পুলিশ।
গোয়েন্দা সূত্রটি জানাচ্ছে, সরকার সমর্থক কিছু শ্রমিক সংগঠনের অসাধু নেতারা রমজানকে সামনে রেখে ফুটপাত বাণিজ্যে নেমেছে। পেশাদার ও মৌসুমি হকারদের কাছে চড়া মূল্যে ফুটপাত বেচাকেনা করছে তারা। তাদের তালিকা সিএমপিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।
মেট্রোপলিটন হকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘নগরবাসীর সুবিধার জন্য যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন তা আমরা করব। যারা ফুটপাত বাণিজ্যে নেমেছে তারা সংগঠনের কেউ নয়। বিষয়টি আমরা মনিটর করছি।’
অভিযোগ আছে, ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে মার্কেটের সামনে পসরা নিয়ে বসতে সহযোগিতা করছে অসাধু শ্রমিক নেতারা। গত এক সপ্তাহে ওই নেতারা অন্তত পাঁচ হাজার হকারের কাছে কোটি কোটি টাকার ফুটপাত বাণিজ্য করেছে।
৩০ মে সিএমপি কার্যালয়ে এক বৈঠকে রমজান মাসে যানজট নিরসন ও ঈদের কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের সুবিধার্থে মার্কেটের সামনে এবং রাস্তার উপর থেকে ফুটপাত তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা ব্যবসায়ী নেতাদের জানিয়ে দেন পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার।
সরেজমিন দেখা যায়, শুধু বিপনি বিতানের (নিউ মার্কেট) সামনের ফুটপাত নয়, রমজান শুরুর আগেই মূল সড়কও হকার ও ভাসমান ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সড়কের জায়গা ও ফুটপাত দখলে নিতে। নিউ মার্কেট, স্টেশন রোডের ফুটপাত দখলে আছে কাপড়, জুতা ব্যবসায়ীদের।
মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুলের সামনে থেকে শুরু করে শাহ আমানত মার্কেট পর্যন্ত দখলে আছে সিডি-ভিসিডি ব্যবসায়ীদের দখলে। নিউ মার্কেট থেকে কোতোয়ালি পর্যন্ত দখলে আছে ফল ব্যবসায়ীদের।
এদিকে ষোলশহর দুই নম্বর গেইট থেকে চিটাগং শপিং কমপ্লেক্স পর্যন্ত দখলে রেখেছে কাপড় ব্যবসায়ীরা।
চামড়া গুদাম থেকে নতুন ব্রিজ মোড় পর্যন্ত দখলে আছে ভাসমান নানা শ্রেণির ব্যবসায়ীদের। আন্দরকিল্লা থেকে লালদীঘি পর্যন্ত দখলে রেখেছে ফল ব্যবসায়ীরা। কেসিদে রোড দখল করে আছে ফার্নিচার ব্যবসায়ীরা। ইপিজেড এলাকায় আছে ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চকবাজার, কাজীর দেউড়ি, দেওয়ান হাট, আগ্রাবাদ, নাসিরাবাদ, কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ, লালদীঘির দুইপাড়, তিনপুলের মাথা, বন্দর ফকিরহাট, অক্সিজেন মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ফুটপাতে গত দুই দশকে এসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
শনিবার দুপুরে নিউ মার্কেটের সামনে ফুটপাতে ২৫-৩০ বর্গফুট জায়গায় কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন এক হকার। তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আর মাত্র দুইদিন পর রমজান শুরু হচ্ছে। সপ্তাহ আগে আলকরণের এক যুবলীগ নেতার কাছ থেকে এক মাসের জন্য ২০ হাজার টাকায় জায়গা ভাড়া নিয়েছি।’ তবে ওই নেতার নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একাধিক হকার জানান, রমজান মাস এলেই মার্কেটগুলোর সামনে ফুটপাত বাণিজ্যে মেতে উঠে শ্রমিক নেতারা। তারা আগেভাগে ভ্রাম্যমাণ দোকান-পাট গড়ে তুলে ফুটপাতে। এ কারণে পুরো রমজান জুড়ে মার্কেটগুলোর সামনে এবং আশপাশে যানজট সৃষ্টি হয়।
রমজান ঘিরে সড়কের অংশ ও ফুটপাত দখল প্রসঙ্গে গত ৩০ মে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে নগর পুলিশ কমিশনার বলেছিলেন, ‘আমি ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের পেটে লাথি মারতে চাই না। কিন’ ৫০ কিংবা ১০০ জন মানুষের উপকার করতে গিয়ে আমি ৫০ হাজার মানুষের ক্ষতি করতে পারি না। এ নিয়ে মানবিকতার কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না।’
সিএমপির এক কর্মকর্তা জানান, রমজানে নগরবাসীর ভোগান্তির অন্যতম কারণ শ্রমিক নেতাদের ফুটপাত বাণিজ্য। অবশ্য এতে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যও জড়িত। ফুটপাত দখলের নেপথ্যে আছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ।