বন্ধুর মতো থাকতে চায়, বড় ভাইয়ের মতো নয়ঃ

বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,

ঢাকাঃ ভারতের লোকসভার সদস্য ও বর্তমান রাষ্ট্রপতির পুএ অভিজিৎ মুখার্জি সম্প্রতি সংকট মোকাবেলায় ব্যক্তিগত সফরে এসে বাংলাদেশেকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বড় ভাইয়ের মত নয়। দুদেশের ব্যবসা বাণিজ্যে ও মানুষের সম্পর্কের উন্নয়নসহ বেশি বেশি মানুষের যাতায়াতের প্রয়োজনিয়তা তুলে ধরেন। এবং ধর্মের কারনে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয় না বলে তিনি মত দেন ।

১৯ জুন  (রোববার) বিকেলে নিউ ইস্কাটনে সংগঠনের নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে আলাপকালে অভিজিৎ মুখার্জি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশে ধর্মীয় কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে বলে মনে করেন না ভারতের লোকসভার সদস্য অভিজিৎ মুখার্জি। তিনি বলেন, যে হামলা হচ্ছে, সেগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপরও হচ্ছে। একটি গোষ্ঠী তাদের উদ্দেশ্য বা মতের জন্য করছে। ধর্মের ভিত্তিতে সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। এটি উপেক্ষা করা উচিত।

বাংলাদেশে আইএস সম্পর্কে  রাষ্ট্রপতি পুএ বলেন, যে হত্যাগুলো হচ্ছে, তা খুবই খারাপ। কিন্তু কিছু না জেনে কারও ওপরে দোষ চাপানো উচিত নয়। সঠিক ঘটনা খুঁজতে হবে। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। আগে নিতে পারলে আরও ভালো। তবে যুক্তরাষ্ট্রেও অনেক ঘটনা ঘটছে। তাদের গোয়েন্দা তৎপরতা, অর্থ বাংলাদেশ বা ভারতের চেয়ে বেশি। সেখানেও হামলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতে মানুষের স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ আছে। গোপনীয়তা বজায় রাখার অধিকার আছে। তা ছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও সাম্প্রতিক হত্যাগুলো নিয়ে খুবই চিন্তিত। তবে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি প্রফেসর এ কে আজাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্ণেল (অব.) ফারুক খান, বেগম মাহজাবিন খালেদ এমপি, সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাফফর হোসেন পল্টু, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশে ঘটা সাম্প্রতিক বিভিন্ন হামলার প্রতি ইঙ্গিত করে ভারতের এই আইনপ্রণেতা বলেন, আগুন দেওয়া হবে, হুমকি দেওয়া হবে। এর মানে এই নয় যে সবকিছু শেষ হয়ে গেল। সরকার চেষ্টা করবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। একবারে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সেটা খুবই ভালো। বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে। উন্নয়ন হলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশে এ ধরনে ঘটনা ঘটে। এক-দুজন মারা যান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে একসঙ্গে ৫০ জন মারা যান।

অভিজিৎ মুখার্জী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সংস্কৃতি, ভাষা, ও আচার আচরণ এক। দুদেশের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য আরও প্রসার হলে এর মাধ্যমে দুদেশের মানুষের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রচেষ্টার ফলে বাংলা আন্তর্জাতিক ভাষার মর্যাদা লাভ করেছে। এজন্য বাংলাদেশের সাথে আমরা গৌরাবান্বিত।

বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ভিসা পাওয়ার নানা জটিলতার কথা উল্লেখ করে ভারতীয় প্রভাবশালী এ নেতা বলেন, এ সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। ইতিমধ্যে কিছু কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে কিংবা ভারত থেকে বাংলাদেশে বেশি বেশি মানুষের যাতায়াত করা প্রয়োজন। যত আদান-প্রদান হবে, তত ভুল ধারণাগুলো দূর হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রগুলো এক থাকতে পারলে অনেক ভালো কিছু করা সম্ভব।

এর আগে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভারতের লোকসভার এই সদস্য বলেন, বাংলাদেশে এটি তাঁর ব্যক্তিগত সফর। এখানে আসার আগে তিনি নিজ দেশের রাষ্ট্রপতি, লোকসভার স্পিকার ও কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা সবাই সরকার ও এ দেশের মানুষকে একটি কথা জানাতে বলেছেন। তা হলো ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে। বাংলাদেশের যেকোনো সমস্যা যেন সঙ্গে সঙ্গে ভারতকে জানানো হয়। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের পাশে বন্ধুর মতো থাকতে চায়, বড় ভাইয়ের মতো নয়।

তিনি বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলের সীমান্ত এলাকায় আরও বেশি সংখ্যক বর্ডার হাট চালু এবং একই সাথে সীমান্তবর্তী এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

অভিজিৎ মুখার্জী আরও বলেন, দুদেশের ভাষা সংস্কৃতি এবং আচার আচরণ এক। তাছাড়া বিশ্বেও সর্বাধিক লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে। এটা গৌরবের এবং অহংকারের।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ