হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন শরীফ:

প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,

ঢাকা :  আনসারুল্লাহ বাংলা টিম প্রগতিশীল লেখক, প্রকাশক ও ব্লগার হত্যার ‘যত ঘটনা ঘটিয়েছে’ তার প্রত্যেকটির সঙ্গে নিহত শরীফ ওরফে সাকিব কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। শনিবার রাত ২টার দিকে ঢাকার খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাঁশপট্টি এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে শরিফুল নিহত হন।

১৯ জুন (রোববার) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে লেখক অভিজিৎ হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন ৩০ বছর বয়সী এই যুবক। পুলিশ বলছে, সাকিব, শরিফ, সালেহ, আরিফ ও হাদী নাম ব্যবহার করে পরিচয় গোপন করে আসছিলেন শরিফুল। তাকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, “লেখক-ব্লগার হত্যার যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার প্রত্যেকটি শরীফের প্রত্যক্ষ মদত ছিল, তিনি আগেই জানতেন কখন কোথায় হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হবে।”

“শরিফ ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিল, প্রকাশক টুটুল হত্যাচেষ্টার দিন লালমাটিয়ায় বাড়ির বাইরে অবস্থান করছিল এবং ওয়াশিকুর বাবু হত্যা, আশুলিয়ায় রিয়াজ মোর্শেদ বাবু হত্যারও সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছিল,” বলেন তিনি।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে অভিজিত খুন হওয়ার পর একে একে খুন হয়েছেন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু, ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নীলয়, অভিজিতের বইয়ের প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদ।

এর আগে যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবিতে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর কয়েক দিনের মাথায় খুন হয়েছিলেন ব্লগার রাজীব হায়দার।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের ‘অপারেশন বিভাগ’ এর ‘গুরুত্বপূর্ণ সদস্য’ ছিলেন শরীফ, যে বিভাগ প্রত্যেক হত্যার পরিকল্পনা থেকে পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সাতারকুলসহ বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে সংগঠনটির বিভিন্ন নথিপত্র পান তারা। বিভিন্ন অভিযানে গ্রেপ্তার আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বিভিন্ন তথ্যও।

মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, “একজন আধ্যাত্মিক নেতা (বুজুর্গ বলে তারা) সংগঠনটির নেতৃত্বে থাকেন। তিনি সংগঠনের পক্ষে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন লোকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন। তার পরে থাকে সংগঠনটির একজন অপারেশনাল প্রধান। তিনি সব হত্যার পরিকল্পনা করেন ও নির্দেশনা দেন ও সার্বিক মনিটরিং করেন।

“সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে কর্মীদের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দিতেন শরীফ। তিনি বিভিন্ন হত্যার অভিযান সমন্বয়ও করতেন। হত্যা যেখানে করা হতো ওই এলাকায় অবস্থানও করতেন শরিফ।”

সেলিম নামে আনসারুল্লাহর ‘উচ্চপর্যায়ের এক সদস্য’ রয়েছেন জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মাশরুকুর বলেন, “কাকে হত্যা করতে হবে, কেন হত্যা করতে হবে, কোন এলাকায় কীভাবে গিয়ে হত্যা করতে হবে- তার তথ্য সংগ্রহ করে নির্দেশনা দেন সেলিম।

“এছাড়া যারা হত্যায় অংশ নেবেন তাদের মোটিভেশনাল ট্রেইনিং দেন। নিজেদের যুক্তি তুলে ধরে সংগঠনের পক্ষ থেকে কেন ওই লোককে হত্যা করা জরুরি- তাও সেলিম ব্যাখ্যা করেন। হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে শরীফ ও সেলিম তাদের একজন অপারেশনাল প্রধান (বড় ভাই) এর সঙ্গে বৈঠক করতেন। এজন্য তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের ভাড়া বাসায় বসতেন।”

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের এই রকম বেশ কিছু ভাড়া বাসার তথ্য গোয়েন্দারা সংগ্রহ করেছেন বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।

মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, “অপারেশনাল প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে হত্যায় সংগঠনের লক্ষ্য কীভাবে বাস্তবায়ন হবে সেটিও তুলে ধরতেন সেলিম ও শরীফ। এরপর যাকে হত্যা করতে হবে তার গতিবিধির উপর নজরদারি বাড়াতেন। তার বাসা ও কর্মস্থলের এলাকা তারা সাত দিন আগে রেকি করতেন।”

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির ছাত্র শরীফের বাড়ি খুলনা এলাকায়। তিনি একটি বেসরকারি এনজিওতে চাকরি করতেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল।

ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক, প্রকাশক হত্যায় জড়িত সন্দেহভাজন যে ছয় জঙ্গি সদস্যকে ধরিয়ে দিতে পুলিশ মাসখানেক আগে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, তাদের মধ্যে শরিফুল দ্বিতীয় জন, যার সন্ধান পাওয়ার খবর দিল পুলিশ।

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ