ধর্মের বর্ম পরে জঙ্গিবাদ ঠেকানো যাবে না: মেনন

বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,

ঢাকা : বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন কোনো ব্লগারকে হত্যার পর ‘ধর্মের বিরুদ্ধে আঘাত সহ্য করা হবে না’ ঘোষণা দিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ‘ধর্মবিরোধী লেখা’ খুঁজে বেড়ানোর সমালোচনা করেছেন। ধর্মের বর্ম পরে জঙ্গিবাদ ঠেকানো যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

২১ জুন (মঙ্গলবার) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় সম্প্রতি কথিত বন্দুকযদ্ধে ‘জঙ্গি’ নিহত হওয়ার ঘটনাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ‘দুর্বলতা’ বলেও আখ্যা দেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি।

মেনন বলেন, “আমরা দেখি যখনই কোনো ব্লগার নিহত হন, তখনই পুলিশ কর্তৃপক্ষ তিনি ধর্মবিরোধী কিছু লিখেছেন কী না সেটা খুঁজে বেড়ান। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে উচ্চারণ করা হয় ধর্মকে আঘাত করে এমন কিছু সহ্য করা হবে না। এটা ঠিক যে ধর্মবিরোধী কোনো কিছু লেখা উচিত নয়। তেমনি আবার কেউ নিহত হওয়ার পর একথা উচ্চারিত হলে ওই হত্যা জাস্টিফায়েড হয়ে পড়ে।

“ধর্মকে বর্ম করে ধর্মের ধ্বজাধারী খুনি জঙ্গিদের বিরত করা যাবে না। বরং তাদের কাছে আত্মসমর্পণই করা হবে।”

নিহত সব ব্লগারের লেখা পড়েছেন জানিয়ে সংসদে মেনন বলেন, “সেখানে মুক্তমনের প্রতিফলন আছে, কিন্তু ধর্মবিরোধী কোনো কিছু আমার চোখে পড়েনি।”

কথিত বন্দুকযুদ্ধে জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আজকে প্রতিদিনই দেখছি ক্রসফায়ারে জঙ্গি নিহত হচ্ছে। ক্রসফায়ার এই সমস্যার সমাধান নয়। বরঞ্চ তার মধ্য দিয়ে আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা-ব্যর্থতা দেখছি।”

তিনি বলেন, “আমাদের দেশে আইএস নেই তবে তাদের অনুগামী রয়েছে, এরাই গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। তাদেরই গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছেন পুরোহিত, যাজক, বৌদ্ধভিক্ষু, মাজারের খাদেম, পীর, বাউল গবেষক, শিক্ষক, সমাজের সংখ্যালগিষ্ঠ অংশের মানুষ। এই আক্রমণ কোনো একক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়, সমগ্র বাংলাদেশের ওপর।

“এই আক্রমণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একটি সাম্প্রদায়িক আবহ তৈরি করা হচ্ছে এবং তা দুর্ভাগ্যজনকভাবে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে।”
আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর ভেতরেও সাস্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

মেনন বলেন, “যে অসাম্প্রদায়িকতা-ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি নিয়ে বাংলাদেশের জন্ম, সেই সেক্যুলার ডেমোক্রেসিই বাংলাদেশকে আধুনিক ও উন্নত বালাদেশে রূপ দিতে পারে।” সেজন্য মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষক মৌলবাদী অর্থনীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার উপর জোর দেন তিনি।

“গত নবম সংসদে আমি এই মৌলবাদী অর্থনীতির ধারকদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার বেসরকারি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব এনেছিলাম। সেটা নিয়ে আলোচনাও হয়েছিল। কিন্তু কোন মন্ত্রণালয় সেটা বাস্তবায়ন করবে সেই অজুহাতে তা হিমাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ যে কত বাস্তব সেটা আমরা সবাই অনুধাবন করছি।”

২০১৪ সালে দেশের মূল অর্থনীতির মধ্যে মৌলবাদী অর্থনীতির ২ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা নীট মুনাফা হয়েছে বলে সংসদে তথ্য দেন মেনন।

মেনন বলেন, “দেশি-বিদেশি অর্থ নিয়ে জঙ্গি গ্রুপ গঠন হয়েছে। এরাই গুপ্ত হত্যায় মেতে উঠেছে। এরই অজুহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইইউসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ বাংলাদেশে আগমনেচ্ছুদের জন্য ট্রাভেল অ্যাডভাইজরি দিচ্ছে যেন বাংলাদেশে না আসেন। বিনিয়োগ না করার আহ্বান জানাচ্ছে।”

সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যার কথা তুলে ধরে সংসদে জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, “আমরা অনেক দূর এগিয়েছি- সেটা সত্য। আমার ক্রমাগত ভাবনা এই যে, চাপাতির সন্ত্রাস শুরু হয়েছে এরা কারা? গুপ্তহত্যাকারীরা কারা? চৌদ্দপুরুষের সম্পর্ক নেই তাদেরকে হত্যা করছে। এরা রোবট। আমার কাছে মনে হয়, শিক্ষায় আমরা অনেক ভালো করেছি। কিছু চাকরিজীবী তৈরি হয়েছে, সংষ্কৃতিকর্মী তৈরী হয়নি।

“প্রতি তিন জনে একজন মাদ্রাসার ছাত্র। কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা বিশাল। কওমি মাদ্রাসার সংস্কৃতি কি? সে মুক্তিযুদ্ধের কি শিক্ষা গ্রহণ করে? মুক্তিযুদ্ধের মৃত্তিকাকে অগ্রহ্য করে বাংলাদেশে মানুষ হওয়া যাবে না।”

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ