রমজানেও লাশ উপহার দিচ্ছে সরকার: রিজভী

নিউজ ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি,

ঢাকা: রমজান মাসেও সরকার দেশবাসীকে লাশ আর রক্তের হোলিখেলা উপহার দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, “পবিত্র রমজান মাস সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস হলেও ভোটারবিহীন সরকার দেশবাসীকে উপহার দিচ্ছে লাশ আর রক্তের হোলিখেলা।”

২৩ জুন (বৃহস্পতিবার) গণমাধ্যমে পাঠানো দলের সহ-দফতর সম্পাদক মোঃ আব্দুল লতিফ জনি স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ অভিযোগ করেন তিনি।

এবিসিনিউজ এর পাঠকদের জন্য বিএনপির এ নেতার বক্তব্য সরাসরি তুলে ধরা হল।

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
পবিত্র রমজান মাসে আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

ঢাকার গুলশানে ইটালী নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সাবেক কমিশনার আবদুল কাইয়ুমকে মুল পরিকল্পনাকারী এবং তার ভাই এম এ মতিনকে প্রধান সমন্বয়কারী বানিয়ে এই হত্যা মামলায় চার্জ শীট দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। এই ঘটনায় দলের পক্ষ থেকে আমরা তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

২৪ জুন শুক্রবার অনুষ্ঠিতব্য সরকারী তিতুমির কলেজ ছাত্রদল ইফতার পার্টির আয়োজন তদারকি করতে গতকাল ২২ জুন বুধবার বুধবার সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর মহাখালী কমিউনিটি সেন্টার দেখতে যায়। এসময় সেখান থেকে সরকারী তিতুমির কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি তছলিম হাসান মাসুম, সাধারণ স¤ক্সাদক আমিনুল হক হিমেল, সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরে আলম রাসেলসহ ৬ জনকে আটক করে আইন-শৃÍখলা রক্ষাকারী বাহিনী। আটকের পর তাদেরকে ৭টি ককটেলসহ গ্রেফতার দেখানো হয়। এ ঘটসায় আমি দলের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলাস্থ ছাতারপাইয়া ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান (তিন বারের) ও ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আবদুর রহমানের ওপর আওয়ামী লীগের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল হক মজুমদার ও তোফাজ্জল হক তফার নেতৃত্বে হামলা চালায়। এতে আবদুর রহমান চেয়ারম্যানসহ ৪০ জন বিএনপি নেতা কর্মী আহত হয়। আহতদের নোয়াখালী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। সন্ত্রাসীরা পুলিশের সামনে জয়বাংলা শে-াগান দিয়ে চেয়ারম্যানের ভাইদের ৪টি দোকান ভাঙচুর করে লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। উল্টো আবদুর রহমান চেয়ারম্যানসহ ৪০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বন্ধুরা,
বাংলাদেশের ভোটারবিহীন সরকার গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে কখনই কুন্ঠিত হয় না। কারন এই সরকারকে জনমতের তোয়াক্কা করতে হয় না। সরকারের অর্থনৈতিক দর্শণ হচ্ছে লুটপাটনির্ভর। তাদের আগ্রাসী লুটপাটে যদি দেশকেও বিক্রি করতে হয়, তাহলেও তারা তাই করবে। তার আলামত দেশবাসী ইতোমধ্যে দেখতে শুরু করেছে। এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশ বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে। বর্তমান নতজানু সরকার পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের কাছ থেকে যখন প্রতি টনে মাত্র ১৯২ টাকা ট্রানজিট ফি নিচ্ছে তখন নিজ দেশ বাংলাদেশে গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এবার গৃহস্থালিতে ব্যবহারের জন্য দুই চুলা ৬৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা এবং এক চুলা ৬০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। প্রতি ঘনমিটার সিএনজি ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৮ টাকা করা হয়েছে।

বিইআরসি (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) বিধান অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে দু’বার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার কোন সুযোগ নেই। এর আগে, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিকসহ কয়েকটি শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। তখন দুই চুলার বিল ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা এবং এক চুলার বিল ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছিল। বছর শেষ না হতেই আবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি অবৈধ সরকারে স্বেচ্ছাচারী মানসিকতারই প্রতিফলন।

সীমাহীন লুটপাটের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে গিয়ে জনগণের রক্ত চুষে নেয়া হচ্ছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এই প্রস্তাব “ডোমিনো ইফেক্ট”-এ অর্থনীতির সর্বত্র এর প্রভাব পড়বে। দেশের শিল্প ও কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এমনিতেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা চরমভাবে হ্রাস পেয়েছে, তার ওপর গ্যাসের দাম প্রস্তাব অনুযায়ী বৃদ্ধি পেলে তা জনগণের নিকট মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’র ন্যায় অনুভুত হবে। সরকারের এই ধরণের গণবিরোধী প্রস্তাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং এই গণবিরোধী উদ্যোগ থেকে সরে আসার জন্য আহবান জানাচ্ছে।

এই ভোটারবিহীন বর্তমান সরকার শুধুমাত্র তোষামোদ করতে গিয়ে দেশের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে বাংলাদেশকে পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত অভিন্ন ৩৭টি নদীর পানি প্রবাহের গতিপথ ভারতের উজানে ডাইভার্ট করে ভারতে শুস্ক অঞ্চলের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে প্রস্তুতি প্রয়োজন তা প্রায় সম্পন্ন। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র এই দুই বড় নদী এবং নদীগুলোর শাখা-প্রশাখা খাল দ্বারা সংযোগ করে বাংলাদেশের দিকে প্রবাহিত পানিকে সরিয়ে নেয়ার এক বিশালাকার প্রকল্প হচ্ছে ভারতের আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প। এইভাবে ভারত-বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন ৩৭টি নদীকে ৩০টি খাল দ্বারা সংযোগ করা হবে। ব্রহ্মপুত্র থেকে প্রথমে তিস্তা ও পরে তিস্তা থেকে ফারাক্কা বাঁধের উজানে পানি আনা হবে। ফারাক্কা পয়েন্ট থেকে খাল কেটে ভারতের বিভিন্ন শুস্ক অঞ্চলে নদীগুলোতে নিয়ে যাওয়া হবে। ভারতের এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষ হলে বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক অস্তিত্বই ভয়ংকর রকমের বিকৃত হয়ে উঠবে। সাগরের লোনা পানি উপরের দিকে উঠে আসবে। লবনাক্ততা ভয়ংকররুপে বৃদ্ধি পাবে, চাষের জমি নষ্ট হবে। এইরকম একটি বাংলাদেশ বিধ্বংসী মহা প্রকল্পের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের মৌনতা সম্মতিরই লক্ষণ। এ ব্যাপারে নতজানু সরকার টু শব্দটিও করছে না-কঠোর নিন্দা, প্রতিবাদ জানানো তো দুরে থাক। গত কয়েকদিন আগে আনন্দবাজার পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের ফেনী নদীর ওপর ভারত ব্রীজ নির্মান করছে, যাতে তারা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে সহজে বাংলাদেশ থেকে ভারতে মালামাল নিতে পারে। ইতোমধ্যে অবকাঠামো না থাকলেও আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে নামমাত্র ১৯২ টাকায় ট্রানজিটের নামে করিডোর দেয়া হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা সম্পূর্ণরুপে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। আসলে উগ্রবাদী জঙ্গীদের উৎপাত, তাদেরকে ধরার জন্য দেশের সাধারণ মানুষের ওপর ভয়াবহ নির্মম ক্র্যাকডাউন, পাইকারী হারে বিচারবহির্ভূত হত্যার বিভিষিকার ডামাডোল সৃষ্টি করে জনগণের দৃষ্টিকে এই দিকে নিবদ্ধ রেখে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, ভৌগলিক ও পরিবেশগত অস্তিত্ব এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে বিপন্ন করে তারা নিরবে দেশবিরোধী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

সাংবাদিক বন্ধুরা,
জনগণকে কপর্দকহীন করে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে জনসমস্যাকে ঢেকে দিতে আকস্মিক নতুন ইস্যু সৃষ্টি করে জনমনকে বিভ্রান্ত করার স্বৈরশাসকদের অতীতের সব রেকর্ড ‘ওভারটেক’ করে গেছেন শেখ হাসিনা। ক্ষমতার জন্য, দলীয় ও ব্যক্তিগত লাভের জন্য লোভ, প্রবঞ্চনা, অসততা, শঠতা ও বিপুল দুর্নীতি এই ভোটারবিহীন সরকারের ‘রাষ্ট্র-নীতি’ হওয়ার কারনে জনগণকে ভোগ করতে হচ্ছে অবর্ননীয় দুর্দশা। কারন নিজেদের লোকদের ‘অর্থনৈতিক কনসেশন’ দিতে গিয়েই লুটপাটকে উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং জনগণের ওপর অত্যুগ্র শোষন-শাসনের স্টীম রোলার চালানো হচ্ছে। তাই এই পবিত্র রমজান মাস সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস হলেও ভোটারবিহীন সরকার দেশবাসীকে উপহার দিচ্ছে লাশ আর রক্তের হোলিখেলা। চারিদিকে নির্বিঘেœ চলছে হত্যা, গুপ্তহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, পুলিশের গ্রেফতার বানিজ্য, চাঁদাবাজী ও লুটপাটের রাজত্ব। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই জনগণ গোল্লায় গেলেও তাদের কিছু যায় আসে না। জনগণের দুর্দশাকে উপেক্ষা করে জনগণের টাকা আত্মসাৎ করার জন্যই তারা জ্বালানী’র দাম বৃদ্ধি করে। লুটপাটধর্মী বিশৃঙ্খল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কারনেই সারাদেশে এখন দুর্ভিক্ষের ছায়া নেমে এসেছে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ