রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি বাতিল চায় সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি
প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকাঃ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় পুনরায় রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বাতিলের দাবি জানিয়েছে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি।
১৩ জুলাই (বুধবার) বেলা ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
দেশের বাগেরহাটের রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পুনরায় বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল। আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে কমিটির আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হলে সুন্দরবন অংশে এভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে এগিয়ে যেতো না। দেশ-বিদেশে চরম উদ্বেগ প্রকাশের পরও সুন্দরবনের পরিবেশকে হুমকির মধ্যে রেখে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সংগঠনের বিরোধিতার মধ্যে বাগেরহাটের রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্প হিসেবে ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। ‘মৈত্রী সুপার থারমাল’ নামের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবনের ইউনেস্কো ঘোষিত হেরিটেজ অংশ থেকে ৬৯ কিলোমিটার এবং সুন্দরবনের প্রান্তসীমা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রাকৃতিক প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে দাবি করে তার বিরোধিতা করছে বিভিন্ন সংগঠন। ওই আশঙ্কা নাকচ করে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সুন্দরবনের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে ১২ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ১ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (বিএইচইএল)। এই কোম্পানির সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট কনস্ট্রাকশন-ইপিসি (টার্নকি) চুক্তি করে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)। বিআইএফপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল কান্তি ভট্টাচার্য এবং বিএইচইএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রেম পাল যাদব চু্ক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার এই কেন্দ্র নির্মাণে প্রয়োজনীয় ১ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করবে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয় অনুষ্ঠানে।
প্রসঙ্গত, আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ১২ জুলাই ভারতের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের দিনকে কালো দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ১২ জুলাই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাঁর এ ধন্যবাদ দেয়ায় আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, চুক্তিটি কি তবে ভারতের স্বার্থে হচ্ছে? তিনি বলেন, এখনো সময় আছে সরকার এ চুক্তি বাতিল করুক।
এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হবে না বলে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। আমরা বহুবার সরকারের কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ না করার দাবি জানিয়েছি। অথচ, সরকার তা আমলে নেয়নি। এ প্রকল্পে অর্থসহায়তা দিচ্ছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। ওই ব্যাংকের নীতি অনুসারে, তারা এসব প্রকল্পেই সহায়তা করে, যার মাধ্যমে ভারতের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সুবিধা থাকে। এ কারণে প্রশ্ন থেকে যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ব্যবহৃত কয়লা কি ভারত থেকে আমদানি করা হবে? নাকি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর তা ভারতে রপ্তানি করা হবে?
বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিম্নমানের কয়লা ব্যবহারের আশঙ্কা প্রকাশ করে সুন্দরবন জাতীয় রক্ষা কমিটির সদস্য শরীফ জামিল বলেন, বলা হয়েছিলো উন্নত মানের কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। অথচ, ভারতের যে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, এতে দেখা যাচ্ছে, সেখানে নিম্নমানের কয়লা ব্যবহারের প্রযুক্তি সক্ষমতা থাকার শর্ত দেয়া হয়েছে। এতে করে নিম্নমানের কয়লা ব্যবহারের আশঙ্কাই থাকে। আর তা হলে সুন্দরবনের পরিবেশ আরো হুমকির মধ্যে পড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সমালোচনা করে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, যে উন্নয়ন জনগণের বিপক্ষে যায়, সে উন্নয়ন আসলেই কোনো উন্নয়ন কি না, সে প্রশ্ন থেকে যায়।