ব্যর্থ অভ্যূত্থানের পর গণতন্ত্রের জন্য তুরস্কজুড়ে গণসমাবেশ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকাঃ তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ‘গণতন্ত্র রক্ষায়’ কর্তৃপক্ষের ডাকা সমাবেশগুলোতে ব্যাপক লোক সমাগম হয়েছে।
শনিবার বিকেলে বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুল ও অন্যান্য শহরে এসব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি, বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এর ২৪ ঘন্টারও কম সময় আগে কর্তৃপক্ষের ডাকে অভ্যুত্থান পরিকল্পনা প্রতিহত করতেও হাজার হাজার মানুষ তুরস্কের রাজপথে নেমে এসেছিল।
প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান ইস্তাম্বুলের সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় তাকে চাপমুক্ত লাগছিল। হাস্যময় এরদোয়ান সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বৃদ্ধাঙ্গুলি উচিয়ে নিজের সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাটি সেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশের কাজ। সেনাবাহিনী আমাদের, ওই সমান্তরাল কাঠামোর না। আমি চিফ কমান্ডার।”
নিজের এক সময়ে মিত্র কিন্তু বর্তমান প্রতিপক্ষ ফেতুল্লাহ গুলেনের নেটওয়ার্কের দিকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা গুলেনকে এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার জন্য দায়ি করেছেন তিনি। এর আগেও গুলেন তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন এরদোয়ান।
ওই অভ্যুত্থান পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুলেনকে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন এরদোয়ান। কিন্তু এই অভ্যুত্থান পরিকল্পনার সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছেন গুলেন।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার আগে তুরস্ককে অবশ্যই গুলেনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে।
তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে ‘তুর্কি গণতন্ত্রে লাগা কালো দাগ’ বলে অভিহিত করেছেন। পরিস্থিতি এখন ‘পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে’ জানিয়ে তিনি বলেন, “সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব সরকার অনুগত কমান্ডাররা বুঝে নিয়েছেন।”
এর আগে ভারপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর প্রধান উমিত দানদার জানিয়েছেন, অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় প্রধানত বিমান বাহিনী, মিলিটারি পুলিশ ও সাঁজোয়া ইউনিটগুলো যুক্ত ছিল।
সেনা সদরদপ্তরে বিদ্রোহী সেনাদের হাতে জিম্মি সেনাপ্রধানকে উদ্ধার করা হলেও বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা তখনও জিম্মি ছিলেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
এ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় ২৬৫ জন নিহত হয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রী
ইলদিরিম জানিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৬১ জন সরকারি বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক নাগরিক বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাকি ১০৪ জন অভ্যুত্থানের চেষ্টাকারী সেনা সদস্য বলে ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান দানদার জানিয়েছেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থান চেষ্টার পর দানদারকে তুরস্কের সেনা প্রধানের দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি পাঁচজন জেনারেল ও ২৯ জন কর্নেলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। চাকরিচ্যুত করা হয়েছে দুই হাজার ৭৪৫ জন বিচারককে।
শুক্রবার রাতে তুরস্কের সেনাবাহিনীর একটি অংশ অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে। কিন্তু সামরিক বাহিনীর সব অংশ সাড়া না দেওয়ায় ও সরকারি নেতৃবৃন্দের তড়িৎ পদক্ষেপে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।