নিহত ৮ জঙ্গির পরিচয় মিলল
প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকাঃ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত আরেক ‘জঙ্গির’ পরিচয় মিলেছে। তার বাড়ি রংপুরের পীরগাছায় উপজেলার ইটাকুমারী ইউনিয়নের পশুয়া টাঙ্গাইল পাড়া গ্রমে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ তার নাম রায়হানুল কবির বললেও এলাকায় সে শাহীনুল নামে পরিচিত।
রংপুর পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান সাইফ জানান ঢাকা থেকে আসা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মতার সাথে রংপুর ও পীরগাছা থানা পুলিশ পশুয়া টাঙ্গাই পাড়ায় যান। সেখানে গিয়ে নিহত জঙ্গি রায়হানুল কবিরের ছবি দেখালে তার মা রাহেলা বেগম পরিচয় নিশ্চিত করেন। সে এলাকায় শাহীনুল ইসলাম নামে পরিচিত ছিল। তার পিতার নাম শাহজাহান আলী। সে স্থানীয় দামুর চাকলা দেওয়ান সালেহ আহমদ দাখিল মাদরাসা থেকে ২০১৩ সালে দাখিল পাশ করে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান পুলিশ যাওয়ার পর থেকে তার পিতা শাহজাহান আলী পলাতক আছে।
মাদরাসার সুপার গিয়াস উদ্দিন আশরাফী জানান, তার মাদরাসা থেকে ২০১৩ সালে রায়হান ‘এ’ গ্রেড পেয়ে দাখিল পাশ করে।
ইটাকুমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল কাদের প্রধান জানান, প্রথমে ছবি দেখে মা রাহেলা বেগম পরিচয় নিশ্চিত না করলেও আমি যাওয়ার পর ওর মা পরিচয় নিশ্চিত করেছে। ওর পিতা পুলিশ দেখে পালিয়ে গেছে। তারপক্ষে চাচা আবদুর রউফ লাশ গ্রহণ করবেন। তিনি আরো জানান, ওর পিতা বাজারে বাজারে গিয়ে ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করে।
পীরগাছা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, জাপানি নাগরিক কোনিও হোসিও পল্লী চিকিৎসক রহমত আলী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি জেএমবি কমান্ডার মাসুদ রানার বাড়ির পাশেই রায়হানের বাড়ি। মাসুদ রানাই তাকে জেএমবিতে নিয়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেয়।
এর আগে বুধবার রাতে পুলিশের সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট ডিএমপিনিউজে সাত জঙ্গির নাম পরিচয় তুলে ধরে। তারা হলেন, সাজাদ রউফ অর্ক, জোবায়ের হোসেন, আবদুল্লাহ, আবু হাকিম নাইম, তাজ-উল হক রাশিক, আরিফুজ্জামান খান এবং মতিয়ার রহমান। এছাড়া সাব্বিরুল হক কনিক নামে একজনের পরিচয় বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেলেও ডিএমপি সূত্র তার পরিচয় নিশ্চিত করেনি।
এদের একজন সাজাদ রউফ অর্ক। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর ছাত্র ছিলেন। অর্ক গুলশান হামলায় নিহত জঙ্গি নিবরাসের বন্ধু বলে জানা গেছে।
অর্কের বাবার নাম তৌহিদ রউফ। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি ব্লকে ৩০৪ নম্বর বাড়িতে তার পরিবারের বাস। তাদের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে। তিনি আমেরিকান নাগরিক। তার এনআইডি নম্বর ২৬২১৮৬০০০৫৩৬ এবং জন্ম তারিখ- ০৬-০২-১৯৯২।
র্যাবের হালনাগাদকৃত ৬৮ জনের নিখোঁজ তালিকায় অর্কের নাম ২ নম্বরে ছিল। চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি অর্ক নিখোঁজ রয়েছে উল্লেখ করে ভাটারা থানায় জিডি করা হয় বলে জানান ডিএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি, মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান।
নিহত জোবায়ের হোসেনের বাবা আব্দুল কাইয়ূম ও মা আয়েরা বেগম। তার স্থায়ী ঠিকানা- নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার পশ্চিম মাইজদী আব্দুল্লাহ মেম্বার বাড়ি। তার পরিবার নোয়াখালী জেলা হাসপাতালের অদূরে একটি বাসায় থাকে। তার এনআইডি নম্বর- ৭৫০৯৮১০০০৪৭৯ এবং জন্ম তারিখ- ০১-০১-১৯৯৬।
তিনি নোয়াখালী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। জোবায়ের নিখোঁজ ছিল বলে তার বাবা ১২ জুলাই সুধারাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। নোয়াখালী পুলিশের নিখোঁজ তালিকায় জোবায়েরের নাম এক নম্বরে ছিল।
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন এবং জোবায়েরের স্বজনরা নিহতের ছবি শনাক্ত করেছেন। নিহত জঙ্গিদের একজনের ছবির সঙ্গে জোবায়েরের চেহারার প্রায় ৮০ ভাগ মিল রয়েছে বলে তারা জানান।
আব্দুল্লাহর বাবা সোহরাব আলী ও মোসলেমা খাতুন। তার বাড়ি দিনাজপুর জেলার নবাবপুর থানার ভল্লবপুর গ্রামে। তার এনআইডি- ২৭২০৪৯০০০০৩০ ও জন্ম তারিখ- ১৫-০১-১৯৯৩।
আবু হাকিম নাইমের বাবার নাম নুরুল ইসলাম ও মায়ের নাম মোসা. হালিমা। তার বাড়ি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার কুয়াকাটা গ্রামে। তার এনআইডি নম্বর- ৭৮১১০৩০০০৩৬৯ এবং জন্ম তারিখ- ১৫-০১-১৯৮৩।
তাজ-উল-হক রাশিকের বাবা রবিউল হক এবং মা জাহানারা বেগম। তার ঠিকানা- ওয়ার্ড নম্বর-১৫, বাসা ৭২, রোড ১১/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা। তার এনআইডি- ২৬১৩৫০০০০৩৯৭ ও জন্ম তারিখ- ০৫-১২-১৯৯১।
আকিফুজ্জামান খানের বাবা সাইফুজ্জামান খান ও মা শাহানাজ নাহার। তার ঠিকানা- বাসা- ২৫, রোড- ১০, গুলশান, ঢাকা। তারা এনআইডি-২৬১১০৬০০১০০৬ ও জন্ম তারিখ- ১১-০৯-১৯৯২।
মতিয়ার রহমানের বাবা নাসির উদ্দিন সরদার ও মা খাইরুন্নেসা। তার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার ওমরপুরে। তারা এনআইডি-৮৭০১৮১০০০০০৩ ও জন্ম তারিখ- ০১-০১-১৯৯২।
অন্যদিকে বিভিন্ন সূত্র থেকে অন্য যে জঙ্গির পরিচয় পাওয়া গেছে তিনি হলেন চট্টগ্রামের আনোয়ারার সাব্বিরুল হক কনিক (২২)।
নিহত সাব্বির উপজেলার বরুমচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক চৌধুরী রাশেদের ছেলে।
সাব্বির ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি-চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) ইকনোমিক অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র ছিল। গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে সরকারি মুসলিম হাইস্কুল থেকে ২০১০ সালে এসএসসি এবং ২০১২ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে তিনি।
সাব্বিরের পরিবার চট্টগ্রাম শহরে বাস করে। তার বাবা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে চাকরি করতেন।
তবে সাব্বিরের পরিবার এখনো তার পরিচয় নিশ্চিত করেনি।
জানা গেছে, তাবলিগের কথা বলে মাঝে মাঝে সপ্তাহ-১০ দিনের জন্য উধাও হয়ে যেত সাব্বির। বছরখানেক আগে একবার তিন মাসের জন্য নিরুদ্দেশ থাকার পর তিনি আর বাসায় ফিরেননি।
সর্বশেষ ছয় মাস আগে রাউজানে এক বিয়েতে যাওয়ার কথা বলে বাবার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে বের হয় সাব্বির। তিনিই থেকে তার কোনো খোঁজ নেই।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কে তাজ মঞ্জিল নামের ছয় তলা একটি ভবনের পঞ্চম তলায় অভিযানে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে পুলিশ।
পরে মঙ্গলবার ভোরে সেখানে সোয়াটের বিশেষ অভিযানে নিহত হয় সন্দেহভাজন নয় জঙ্গি। উদ্ধার করা হয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক।
এ ঘটনায় নিহত ও আহত সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে।
বুধবার রাতে মিরপুর মডেল থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে এ মামলা করা হয় বলে ওসি ভূঁইয়া মাহবুব হোসেন জানান