আমার মাকে কখনও ভেঙে পড়তে দেখিনি

বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,

ঢাকা:জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটার পর একটা ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে। আমার মাকে কখনও ভেঙে পড়তে দেখিনি। মা বাবাকে কখনও বলেননি, তুমি রাজনীতি ছাড়ো, সংসার করো। এতো কষ্ট তিনি করেছেন। কখনও হতাশ হননি, হাল ছাড়েননি।

বঙ্গমাতার ৮৭তম জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার (০৮ আগস্ট) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী  বলেন, ‘আমার মা অভাব-অনটন বুঝতে দিতেন না। যেদিন ঘরে অন্য খাবার থাকতো না, সেদিন সামান্য চাল-ডালের খিচুড়ি রেধে আচা‍র দিয়ে খেতে দিতেন আমাদের। মা বলতেন, আসো আজকে আমরা গরিব খিচুড়ি খাবো, খুব মজা’।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘরে খাবার না থাকলেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অকাতরে সাহায্য করতেন বাবা। দলের কাজকর্ম, আন্দোলন-সংগ্রামে তার প্রয়োজনে নিজের সম্পদ দিয়ে সাহায্য করতেন মা। মা-বাবা কখনো আমাদেরকে অভাব বুঝতে দেননি। কৌশলে সেসব অভাব মেটাতেন আর আমাদেরকে ভিন্নভাবে বোঝাতেন’।

‘নিজের জন্য কখনও কিছু চাননি মা। অথচ সারাজীবন এই দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। এ দেশকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। আব্বার সঙ্গে থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন, এদেশের মানুষ ভালো থাকবে, সুখে-শান্তিতে বাস করবে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাবার পাশে থেকে সে স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করেছেন।’

‘মায়ের আত্মত্যাগ বাবাকে এগিয়ে নিয়েছে বলেই স্বাধীনতা এনে দিতে পেরেছেন তিনি। এ স্বাধীনতার জন্য মায়ের অবদান অবিস্মরণীয়’- বলেন বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার কন্যা শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘কখনও একটানা দুই বছর আমার বাবাকে কাছে পাইনি। এ নিয়ে আমার মা কখনও কোনো অভিযোগ-অনুযোগ করতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন তার স্বামী দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করছেন’- বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

শেখ হাসিনা তার নানার স্মৃতিচারণ করে বলেন, মাত্র তিন বছর বয়সে আমার মায়ের বাবা মারা যান। আমার নানা খুব সৌখিন ছিলেন। তিনি বলতেন তার মেয়েকে পড়ালেখা শেখাবেন। ওই সময় একটা অজপাড়া গাঁ থেকে এ ধরনের চিন্তা অনেক বড় বিষয়। আমার মায়েরও ছোটবেলা থেকে পড়ালেখা প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ ছিলো।

এই অগস্ট মাসে আমার মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্ম হয়েছে, এই মাসেই ঘাতকরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এই মাসেই ১৫ আগস্ট আমার ভাই কামাল, জামাল, রাসেলসহ ১৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এই প্রধান নেতা।

অতীতের চড়াই-উতরাই জীবন স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আব্বাকে গ্রেফতার করা হলো। তিনদিনের নোটিশে আমাদের বাড়ি ছাড়তে হলো। মালপত্র নিয়ে আমরা রাস্তায় আশ্রয় নিলাম। আমরা বাসা খুঁজতে শুরু করলাম। সে এক ভয়ংকর দিন।

দেশবাসীর কাছে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্য দোয়া প্রার্থনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এই দেশের স্বাধীনতা অর্জনে আমার মায়ের ভূমিকা ছিলো। এই বিষয়টি সবার জানা দরকার। তিনি এখন নেই। আমার মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ