ভৌগোলিক নির্দেশক আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ভৌগোলিক নির্দেশক আইন- ২০১৩’ প্রণয়ন করে এসব সম্পাদককে (নাটোরের কাঁচাগোল্লা, কুমিল্লার রসমালাই, ঢাকার জামদানী, মুক্তাগাছার মন্ডা, পোড়াবাড়ির চমচমসহ দেশীয় শিল্প সংক্রান্ত‘ মেধা সম্পদগুলো’ আইনী স্বীকৃতি পাচ্ছে) আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জিওগ্রাফিক্যাল ইন্টিগ্রেশন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সোমবার সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটির খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, কুমিল্লার রসমালাই, ঢাকার জামদানী, মুক্তাগাছার মন্ডা, পোড়াবাড়ির চমচমচিনিগুড়া চাল, পদ্মার ইলিশ বাংলাদেশের জিওগ্রাফিক্যাল ইন্টিগ্রেশন। এগুলো সুরক্ষার জন্য এই আইন প্রণীত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘মেধাসত্ব সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি ১৯৯৫ সালে সাক্ষরিত হয়েছে, বাংলাদেশ এতে সাক্ষর করেছে। এখন নতুন আইন করে নির্দিষ্ট স্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে পণ্য তার প্রতীক দেয়া হচ্ছে। এটাও এক ধরনের কপি রাইটের মত।’
এই আইনের মাধ্যমে মেধা সম্পদগুলোর স্বীকৃতি পেতে রেজিস্ট্রেশন করতে ট্রের্ডমাকের কাছে আবেদন করতে হবে জানিয়ে মোশাররাফ বলেন, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা সরকারি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবে। কোনো আপত্তি থাকেলে তা শুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
প্রক্রিয়ায় আপত্তি থাকলে রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে আপীল করতে হবে উল্লেখ সচিব বলেন, রেজিস্ট্রারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের হাই কোট বিভাগে আপীল করতে হবে। আধুনিক আইনি কাঠামো এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই আইন যখন কার্যক্রম হবে তখন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্য সমাগ্রী যেগুলো আছে এগুলোর গুডইউল সুরক্ষা করা সম্ভব হবে। ব্যবসায় এই গুডইউল খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক র্পায়েও গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সুরক্ষায়ও সুবিধা হবে।
মোশাররাফ বলেন, আমরা এখনো চেষ্টা করছি। এটা মূলত ঢাকার। দেরীতে উদ্যেগ নেয়ায় ক্ষতি হয়েছে তবে এখনো সময় আছে স্বার্থ রক্ষার করার। সে উদ্দেশ্যেই এই আইনটা হচ্ছে। “জামদানির ক্ষেত্রে যে ক্ষতি হয়েছে আশা করি ভবিষ্যতে এমন ক্ষতি হবে না।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন- ২০০১ যুগযোপযোগী করে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩’ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।এই আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন পায় এর আগে।
তিনি বলেন, আইনে জাতীয় র্পায়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি সমন্বয় কমিটি থাকবে। এছাড়া সমাজকল্যাণ সচিবের নেতৃত্বে একটি নির্বাহী কমিটি, জেলা র্পায়ে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি জেলা কমিটি, ইউএনওর নেতৃত্ একটি উপজেলা কমিটি এবং শহর এলাকায় সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার প্রধান নির্বাহীর নেতৃত্বে একটি কমিটি থাকবে।
“প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিবন্ধন করে তাদের পরিচয় পত্র দেয়া হবে। এতে তাদের অধিকার আদায় করা অনেক সুবিধা হবে।”
বৈষ্যম্য নিষিদ্ধকরণ করা হয়েছে। কেউ বৈষ্যম্যের শিকার হলে ক্ষতিপূরণ পাবে। ক্ষতিপুরণ না দিলে বা ভর্তি বা চাকরির ক্ষেত্রে বৈষ্যম্যের অবসান না করলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে বলে জানান মোশাররাফ।
তিনি বলেন, কেউ বৈষ্যম্য করলে প্রথমে বলা হবে বৈষ্যম্যের অবসান করতে। এর পরেও তা অবসান না করলে বা ক্ষতিপূরণ না দিলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের ‘একসেস’ নিশ্চিত করার বিধানও আইনে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল ও সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমান। তবে পরিচয়পত্র নেয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতি করলে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
কেউ যদি প্রতিবন্ধী নয় কিন্তু জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পরিচয়পত্র নিলে সর্বোচ্চ সাত বছর কারদন্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ড হবে।
এছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার (সংশোধন) আইন, ২০১৩ খসরার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সংশোধনী আইনে উপদেষ্টা কমিটিতে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন, বাংলাদেশ জুটমিল অ্যাসোসিয়েশন ও জুট মিলারস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানদের সদস্য হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত ৪-৫ মে সৌদী সফরের বিষয়ে মন্ত্রিসভাকে অবিহিত করেন।
“সৌদী আরেব যারা কাজ করছেন গত জুলাই পযর্ন্ত তাদের মধ্যে এক লাখ ১৫ হাজার শ্রমিককে নতুন পাসপোট দেয়া হয়েছে। এরা সেখানে পাসপোর্ট ছাড়া কাজ করতেন।
এছাড়া সৌদীতে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে ৫০ হাজার জনের পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া ৭১ হাজার জনকে ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।