মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী বাংলাদেশে সক্রিয় আছে

নিউজ ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি,

ঢাকাঃ মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট অব দি ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভেন্ত (আইএসআইএল, সংক্ষেপে আইএস) বাংলাদেশে সক্রিয় আছে—আমেরিকানদের কাছে এমন তথ্য এবার সরাসরি তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

২৭ আগস্ট (শনিবার) বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ভ্রমণ পরামর্শবিষয়ক (https://travel.state.gov/content/passports/en/country/bangladesh.html) প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ভ্রমণ পরামর্শে দেখা গেছে, আইএস, জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের বাংলাদেশে সক্রিয় উপস্থিতির কথা যুক্তরাষ্ট্র তুলে ধরেছে।

এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় একিউআইএস, আইএসের সহযোগী ও লস্কর-ই-তৈয়বার মতো যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘোষিত সন্ত্রাসীগোষ্ঠী থাকার কথা উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য বড় ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পর্যবেক্ষণ হলো, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার বাস্তবসম্মত ও বিশ্বাসযোগ্য ঝুঁকি রয়েছে এবং বিদেশিদের ওপর আরো সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে।’

একই সঙ্গে পররাষ্ট্র দপ্তর আরো বলেছে, ভারতীয় উপমহাদেশের আল-কায়েদার (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখা আনসার-আল-ইসলাম এবং জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) মতো পশ্চিমাবিরোধী কয়েকটি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী বাংলাদেশে সক্রিয় রয়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিভিন্ন উগ্রবাদী হামলার পর আইএসের কথিত দায় স্বীকারের তথ্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি ওয়েবসাইটে ফলাও করে প্রচার করা হলেও ঢাকা তা জোর দিয়ে নাকচ করে বলেছে, হামলাকারীরা দেশেরই কোনো না কোনো গোষ্ঠী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল শনিবারও রাজশাহীর বাগমারায় জঙ্গিবাদবিরোধী এক সমাবেশে বলেছেন, বাংলাদেশে আইএস নেই। তবে আইএসের কথিত দায় স্বীকারের তথ্যগুলোর সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এসব দায় স্বীকারের তথ্যকে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বের সঙ্গে নেয়।

জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর দেশীয় এ জঙ্গিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর যোগসূত্র থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিশা দেশাই ঢাকা সফরের সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বাংলাদেশের ভেতরে বেড়ে ওঠা জঙ্গিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের যোগাযোগ আছে বলে তাঁর দেশ মনে করে। তবে এসব যোগাযোগ কিভাবে ঘটে এবং জঙ্গিদের লক্ষ্য কী, তা জানতে তাঁর দেশ বদ্ধপরিকর।

যুক্তরাষ্ট্র গত জুলাই মাসেই বাংলাদেশে ভ্রমণ সতর্কতা (ট্রাভেল ওয়ার্নিং) জারি করেছে। এরই মধ্যে আগামীকাল সোমবার কয়েক ঘণ্টার সফরে ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। এ সফরে নিরাপত্তা খাতে দুই দেশের সহযোগিতার বিষয়টিই বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ বিদেশের কাছে চাওয়া সহায়তা কারিগরি পর্যায়েই সীমিত রাখতে চায়। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো বাংলাদেশের নিরাপত্তাকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ ধরনের সহযোগিতার সম্পর্ক আছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা খাতে নতুন করে কী ধরনের সহযোগিতা দিতে চায় বা সহযোগিতার কাঠামো সৃষ্টি করতে চায় তা নিয়েই বিভিন্ন মহলে নানা জল্পনা-কল্পনা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আইএসবিরোধী সামরিক জোটে বাংলাদেশ যোগ দেয়নি। কারণ বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা কেবল জাতিসংঘের উদ্যোগেই বিদেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়। আইএসবিরোধী সামরিক জোটে বাংলাদেশকে ভেড়াতে যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

গণতন্ত্রের জন্য শক্তিশালী রাজনৈতিক দল এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা : যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ফ্যাক্টশিটে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক, মধ্যপন্থী ও সহনশীল রাষ্ট্র হিসেবে দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে এবং বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির নোঙর হিসেবে কাজ করবে বলে যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাশা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস, বাংলাদেশে সক্রিয় ও নিরাপদ গণতন্ত্রের সত্যিকারের সম্ভাবনা নিশ্চিত করতে শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি এবং গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা অপরিহার্য।

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ