রপ্তানি বাড়াতে নতুন বাজার খুঁজে বের করুন: প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা তা বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক বাজার খুঁজে বের করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার ঢাকায় জাতীয় রপ্তানি ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি সীমিত পণ্যের ওপর নির্ভরতা কাটানোর পাশাপাশি রপ্তানি বাড়াতে ব্যবসায়ীদের নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করার তাগিদ দেন।
রপ্তানি-বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০১১-২০১২ ও ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের জাতীয় রপ্তানি ট্রফি এক সঙ্গে বিতরণ করা হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ১১১টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় জাতীয় রপ্তানি ট্রফি।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সীমিত পণ্যের ওপর রপ্তানি নির্ভরতা দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম দুর্বলতা। রপ্তানি বাণিজ্যের এ সমস্যা দূর করার জন্য পণ্য তালিকায় নতুন নতুন পণ্যের সংযোজন এবং কম অবদান রাখছে- এমন পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
ব্যবসায়ীদেরও এজন্য উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা নতুন নতুন বাজার খুঁজে বেড়ান। কোন দেশে কী বাজার আছে। রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। কিন্তু বাজার খোঁজার উদ্যোগটা আপনাদের নিতে হবে।’
অধিক মূল্য সংযোজিত পণ্য উৎপাদনে ও দেশজ কাঁচামাল নির্ভর রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে ব্যবসায়ীদের মনোনিবেশ করার অনুরোধও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ছাড়া দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ জন্য সরকার বেসরকারি খাতের উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেওয়া। আর এ জন্যই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করি। আমি কারাগারে বসে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি তৈরি করি। যার ওপর ভিত্তি করে আমরা নির্বাচনের পর কাজ করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন হাওয়া ভবনে পাওনা বুঝিয়ে না দিলে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারতেন না। কিন্তু আমরা সরকার গঠন করার পর অনুকূল পরিবেশ তৈরি করি, যাতে ব্যবসায়ীরা সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন। মোবাইল ফোন, ব্যাংক, বিমা, হাসপাতাল সব ক্ষেত্রেই বেসরকারি খাতকে সুযোগ সৃষ্টি করে দিই।’
‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে আমরা যখন দায়িত্ব নেই তখন বিশ্বব্যাপী মন্দা চলছিল। তা সত্বেও বিগত সাড়ে সাত বছরে মাথাপিছু আয় প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে এক হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার হয়েছে।’
এ সময়ে রপ্তানি আয়ের গড় প্রবৃদ্ধি প্রায় ১২ দশমিক ৫২ থাকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পরিমাণগত দিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ইউনিট রপ্তানি করেছে, যা পূর্ববর্তী বছরে ছিল ২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ইউনিট।
অর্থনৈতিক সাফল্যের পেছনে শিল্প-উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কঠোর পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনশক্তির পাশাপাশি সরকারের ব্যবসাবান্ধব উদারনীতিমালার সহায়ক হিসেবে কাজ করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সরকার ব্যবসা করতে আসেনি। আমরা ব্যবসায়ীদের পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছি। আর এর মাধ্যমেই দেশের উন্নতি হচ্ছে। এখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। আমরা যেমন রপ্তানি করব, আবার দেশেও একটা বাজার সৃষ্টি করব। যাতে দেশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা যদি না হতো, ইউরোর দাম না কমলে আমাদের রপ্তানি হিসাবটা বেশি দেখাতে পারতাম। এখন ৩০ বিলিয়নের ওপর আমাদের রিজার্ভ। প্রায় ৯০ লাখ লোক বিদেশে কাজ করে। আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কাজেই আমি মনে করি দেশের সফলতায় আপনারাও অংশীদার।’