‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’

বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,

ঢাকা : ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’- স্লোগানে এ কর্মসূচীর আওতায় হতদরিদ্রদের মাঝে বছরে সাড়ে সাত লাখ টন চাল বিতরণ করা হবে। ‘খাদ্যবান্ধব’ কর্মসূচীর আওতায় দেশের ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।

৭ সেপ্টেম্বর (বুধবার) কুড়িগ্রামের চিলমারী থানার হাট এ.ইউ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এক সুধী সমাবেশে এ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

চাল বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কুড়িগ্রাম জেলার সঙ্গে মঙ্গা শব্দটিও শুনতে হয়। বৃহত্তর রংপুরে মঙ্গা শব্দটা আর মুখে বলতে বা কানে যেন শুনতে না হয় এজন্য কাজ শুরু করা হয়েছে। এ অঞ্চলে আর দুর্ভিক্ষ হবে না। মঙ্গা থাকবে না। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, যারা হতদরিদ্র, কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই তাদের ১০ টাকা কেজি দরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর মাধ্যমে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে। সমগ্র বাংলাদেশে যে মাসে কাজ থাকে না, সেই সময়ে বছরে পাঁচবার চাল বিতরণ করা হবে। জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন করা হয়েছে। বাংলাদেশের একজন মানুষও না খেয়ে মরবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা গৃহহারা হয়েছে, যাদের ঘর নেই, তারা ঘর পাবে। এদেশে কেউ বিনা চিকিৎসায় মরবে না। সকল ছেলেমেয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। বুধবার এ কর্মসূচী উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে দরিদ্রদের মাঝে চাল বিতরণ করেন। একে একে ফাতেমা বেগম, হালিমা বেগম, বাসন্তি রানী, মালতি রানী, জিয়ারা খাতুন, রশিদা খাতুন, আঃ হক, আজিজুল হক, জাহাঙ্গীর আলম, আবু বকর সিদ্দিক, আলিফ উদ্দিন, আমজাদ হোসেন, মোস্তফা আলী, আঃ খালেক ও ফরিদ উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে এ চাল পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়েন। অনেকে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে চাল নিয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ সময় অনেকের মুখে বলতে শোনা যায় ‘আল্লাহ যেন তাকে (শেখ হাসিনা) দীর্ঘজীবী করেন।

থানার হাট এ.ইউ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্ধারিত আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি নিরাপত্তা বিভাগের কর্মীরা।

প্রধানমন্ত্রী দুপুর সোয়া ১২টা থেকে পৌনে ১টা পর্যন্ত প্রায় ৩০ মিনিট বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান শেষে দুপুর পৌনে ২টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে আরও বলেন, সারাদেশ ঘুরে দেখেছি। দেখেছি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা। আমরা সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের মানুষের উন্নতি হয়েছে। আমাকে বাংলার মানুষ সুযোগ দিলে দেশে সব দুঃখী মানুষের মুখে খাদ্য তুলে দিতে চাই। মানুষ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায় এজন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। তিনি বলেন, কুড়িগ্রামে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ও নদী ভাঙ্গনে যারা গৃহহারা হয়েছে, তাদের জমি দেব। ঘরবাড়ি দিব। যারা দরিদ্র-ক্ষুধার্ত তাদের মুখে অন্ন তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করব।

এ সময় বিএনপি-জামায়াত জোটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একদিকে আমরা দেশের দুর্ভিক্ষ দূর করার চেষ্টা করছি, অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, সৃষ্টি করছে। পরপর কয়েকটি সন্ত্রাসী ঘটনার পর মাত্র ১০ ঘণ্টার মধ্যে আমরা জঙ্গীদের প্রতিহত করে উদ্ধার কার্যক্রম সফল করেছি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ইসলামে কোথাও মানুষ খুন করার কথা বলা নেই। যারা মানুষ খুন করে তারা ইসলামের লোক হতে পারে না। এদের সম্পর্কে সজাগ হতে হবে। এজন্য জনমত তৈরি করতে হবে। যুবসমাজ আমাদের সম্পদ। তারা যাতে বিপথে না যায়, মাদকাশক্ত না হয় এজন্য বাবা-মা, শিক্ষক, নির্বাচিত প্রতিনিধি সকলকে সজাগ থাকতে বলেন শেখ হাসিনা। বাবা-মায়ের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনাদের সন্তানরা কে কোথায় যায় সে ব্যাপারে নজর রাখুন। তাদের কথা শুনুন।

ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের কাছে ছিটমহল বিনিময় ও সীমানা নির্ধারণের কথা উচ্চারণ করার সাহস পায়নি বিএনপি। কিন্তু আমরা শান্তিপূর্ণভাবে স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন করি। আমরা ছিটমহল বিনিময় করে সারাবিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। বাংলাদেশের জন্য এটি ঐতিহাসিক ঘটনা।

দেশের যুবসমাজকে কর্মক্ষম করতে বিনা জামানতে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে বেকারত্ব দূর হয়। দেশের কৃষকদের সহায়তায় ৩ দফা সারের দাম কমিয়েছি। এজন্য ভর্তুকি দিয়েছি। ১০ টাকায় ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ও বিনা জামানতে বর্গাচাষীদের কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করেছি। চিলমারী বন্দরের পুরনো ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জানান, এ বন্দরের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করা হবে। চিলমারী থেকে পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হবে। কুড়িগ্রামের ১৬টি নদীর নাব্য দূর করার জন্য ড্রেজিং করা হবে। এজন্য সমীক্ষার কাজ চলছে। এছাড়াও দ্বিতীয় ধরলা ব্রিজ ও রাস্তা নির্মাণে কাজ করা হচ্ছে। রেল সংযোগ আরও উন্নত করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ে তুলব। এ সময় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করুন। আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সমবেত হোন।

খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোঃ কামরুল ইসলাম এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেনÑ কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি, সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চিলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম প্রমুখ।

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ