জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিতে পাকিস্তান যাওয়া হলো না!
প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : পাকিস্তান যাওয়ার প্রস্তুতিকালে নব্য জেএমবির দুই নবদম্পতি গ্রেফতার হয়েছে। তাদের কাছ থেকে জঙ্গী কর্মকা- চালানো এবং জড়িত থাকার বহু আলামত উদ্ধার হয়েছে। পাকিস্তানে তারা উচ্চতর জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছিল।
৬ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) রাত সাড়ে বারোটার দিকে র্যাব-২ এর একটি দল ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের পশ্চিম দিকে অবস্থিত একটি রেস্তরাঁর সামনে অভিযান চালায়।
সেখান থেকে মারজিয়া আক্তার ওরফে সুমি (১৯), পিতা- মোঃ মনসুর আলী শেখ, গ্রাম- উলাট, থানা-সুজানগর, জেলা- পাবনা ও তার স্বামী মোঃ শরিফুল ইসলাম ওরফে সুলতান মাহমুদ তাপস ওরফে মাহমুদ (১৮), পিতা- মোঃ শহিদুল ইসলাম, গ্রাম- বাঘবাড়ি, থানা- মেলান্দ, জেলা- জামালপুর এবং মোঃ আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিনুলকে (৩৪), পিতা- মৃত আব্দুল হক, গ্রাম- নিশ্চিন্তপুর, থানা- নালিতাবাড়ী, জেলা- শেরপুর গ্রেফতার করা হয়।
উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তারা আইএসে না বাংলাদেশে ফিরে জঙ্গী কর্মকণ্ডে জড়িত হবে সে বিষয়ে পাকিস্তানেই সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল।
তাদের পাকিস্তানে পাঠানোর জন্য যারা কাজ করছিল, তাদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। দেশে আরও আত্মঘাতী স্কোয়াড রয়েছে। যারা হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।
গ্রেফতারকৃতদের তথ্য মতে মঙ্গলবার রাত তিনটায় নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লার একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় আমিনুলের স্ত্রী ও জেএমবির সক্রিয় সদস্য নাহিদ সুলতানাকে (৩০), পিতা- পিয়ার আলী। তাদের কাছ থেকে জিহাদী বই, লিফলেট, সিডি ও মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়।
বুধবার দুপুরে র্যাব-২ এর শেরে বাংলানগর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান এমন তথ্যই জানালেন। বললেন, আটক চারজনই অনলাইনের মাধ্যমে জঙ্গী কর্মকা-ে জড়িত। তারা অনেক দিন ধরেই জঙ্গী কর্মকা-ে জড়িত। রীতিমতো নব্য জেএমবির হয়ে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। সংগঠনের সিদ্ধান্তেই তারা বিয়ে করে। বিয়ের পর তারা দলীয় সিদ্ধান্তেই পাকিস্তান যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেখানে উচ্চতর জঙ্গী প্রশিক্ষণ নেয়ার কথা ছিল তাদের। প্রশিক্ষণ শেষে তারা পাকিস্তানে থাকবে না অন্য কোন দেশে জিহাদের জন্য যাবে নাকি দেশে ফিরে জঙ্গী কর্মকা-ে জড়িত হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল।
আটককৃত সুমি জানায়, ফেসবুকের মাধ্যমে সে জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর জেএমপির থ্রিমা ও টেলিগ্রাম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়। এই গ্রুপের কাজ হচ্ছে বাছাইকৃত সদস্যদের বাংলাদেশের ভেতরে একটি করে অভিযানে দায়িত্ব দেয়া। অভিযান সফল হলে বিদেশে নিরাপদ স্থানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা।
এই গ্রুপ থেকেই আফিফ, কাইফ, জাইশান ও মফিজ নামে আরও অনেকের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। কথাবার্তায় সে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। সংগঠনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সে গত ২০ আগস্ট বাড়ি থেকে পালিয়ে আসে। পরে সংগঠনের সিদ্ধান্তেই মাহমুদকে বিয়ে করে। তারা দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছিল।
আটককৃত মাহমুদ জানায়, সে জেএমবির সক্রিয় সদস্য। সে হিযবুতের সদস্য সংগ্রহ করত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়াতে তারা দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
আমিনুল জানায়, সে ও নাহিদ সুলতানা স্বামী-স্ত্রী। তারা জেএমবির সক্রিয় সদস্য। সে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে অপারেশনাল কমর্কা-ের লোক সংগ্রহ করত। পাশাপাশি জঙ্গীবাদে জড়িতদের নানা কর্মকা- চালাতে প্রভাবিত করত। দুই সন্তানের পিতা সে। কিন্তু তারপরও সংগঠনের সিদ্ধান্তেই দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে নাহিদ সুলতানাকে বিয়ে করে। এরপর দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছিল।
নাহিদ সুলতানা জানায়, সে ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গীবাদে জড়ায়। পরবর্তীতে দাওয়াতুল ইসলাম এ্যাপস ব্যবহার করত। আদর্শিক কারণে ও জঙ্গী মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে দলে যুক্ত হওয়ায় সাংগঠনিক সিদ্ধান্তেই সে গত ২২ মে আমিনুলকে বিয়ে করে। সে নারায়ণগঞ্জ সরকারী তুলারাম কলেজ থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে। সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে এবং জঙ্গী মতাদর্শে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে এইচএসসি পাস ও বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক আমিনুলকে বিয়ে করে। গত ২২ মে টঙ্গী কলেজ এলাকায় তাদের বিয়ে হয়। তাদের বিয়ের সময় সশরীরে উপস্থিত থেকে সাক্ষী দিয়েছিল মাদারীপুরে হিন্দু শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যাচেষ্টার প্রধান আসামি পরবর্তীতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ফাইজুল্লাহ ফাহিম।
নাহিদা সুলতানা আরও জানান, নব্য জেএমবির পরিচালনার সিংহভাগ টাকা আসছে বিদেশ থেকে। বাকি টাকা সদস্যরা ইয়ানত (চাঁদা) হিসেবে দিয়ে থাকে। আটককৃতরা আরও জানায়, দেশে চার-পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কয়েকটি সক্রিয় গ্রুপ রয়েছে। তারা হত্যাসহ আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছে। র্যাব বলছে, কয়েক জঙ্গী প্রশিক্ষক ও আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনাকারী সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।
র্যাব সূত্র জানায়, সম্প্রতি নব্য জেএমবিতে মহিলা শাখার কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়। গত ২১ জুলাই র্যাব জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলের আমির মোঃ মাহমুদুল হাসানসহ চারজন, ১০ আগস্ট দাওলাতুল ইসলামের এ্যাডমিনসহ ছয়জন, ১৫ আগস্ট নব্য জেএমবির নারী দলের নেত্রী আকলিমা রহমান ওরফে মনিসহ চারজন, গত ২৩ আগস্ট জেএমবির মহিলা শাখার প্রশিক্ষক কানাডা ফেরত রাশেদুজ্জামান রোজসহ পাঁচজন গ্রেফতার হয়। তাদের দেয়া তথ্যের সূত্রধরেই নব্য জেএমবি সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া গেছে। সে মোতাবেক কাজ চলছে।