যুদ্ধের পথ থেকে সরে উন্নায়নের পথে মোদী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি,

ঢাকাঃ সম্প্রতি কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তপ্ত ভারত-পাকিস্থান। এনিয়ে শক্তিশালী দেশগুল শুরু করেছে রাজনীতি। তাই নিজেদের সার্থ রক্ষার্থে বিভিন্ন কর্ম পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে দু-দেশ। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভোটের আগে পাকিস্তান নিয়ে লাগাতার গর্জন করলেও বর্তমানে গোটাদেশ যুদ্ধের পথে হাটলেও তিনি শান্তির পথ বেছে নিয়েছেন।

২৫ সেপ্টেম্বর (রবিবার) কোঝিকোড়ের জনসভায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাকিস্থানেকে যুদ্ধের চ্যলেন্স না দিয়ে গরিবি হটানোর লড়াই হোক বলে চ্যালেন্স ছুড়ে দিয়েছে।

এ নিয়ে ভারতেই শুরু হয়েছে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা। এবিষয়ে আনন্দবাজার পএিকায়

দিগন্ত বন্দোপাধ্যায় কতৃক প্রকাশিত হয়েছে প্রতিবেদনটি এভাবেই,

”নিজেই নিজেকে আজ ‘ভুল’ প্রমাণ করলেন নরেন্দ্র মোদী!

লোকসভা ভোটের আগে পাকিস্তান নিয়ে লাগাতার গর্জন করে গিয়েছেন তিনি। জঙ্গি হামলার পরে মনমোহন সিং এর সরকারকে উপহাস করে বলেছেন, পাকিস্তানকে প্রেমপত্র নয়, তাদের ভাষাতেই কড়া জবাব দিতে হবে। ফলে পঠানকোট, উরির ঘটনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, কড়া জবাবের কী হল? এবং কোঝিকোড়ে দলীয় সভায় আজ নরেন্দ্র মোদীকে ঢোক গিলে বলতে হল, তাঁর সরকার পাকিস্তানকে কূটনৈতিক ভাবে একঘরে করার পথেই হাঁটবে। ঠিক যে পথে হাঁটত আগের কংগ্রেস সরকার।

উরির সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হানায় ১৮ জন সেনার মৃত্যুর পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি প্রবল হয়েছে গোটা দেশে। বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারের একাংশও সেই পথে চলার পক্ষপাতী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে মোদী বিলক্ষণ বুঝছেন, জনসভায় দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গরম গরম কথা বলা এক জিনিস। আর ময়দানে নেমে তাদের মোকাবিলা করা আর এক। উরির ঘটনার পরেই সেনাবাহিনীর কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অন্য শীর্ষ কর্তারা। সেই বৈঠকে সামরিক কর্তারা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন, দু’টি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ কোনও অবস্থাতেই সম্ভব নয়। সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে আমেরিকা, ব্রিটেন বা জার্মানির মতো শক্তিধর দেশ যতই ভারতের পাশে দাঁড়াক, যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে তারাই বাধা দেবে। এমনকী সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে জঙ্গি ঘাঁটি ভেঙে দিয়ে আসাও সম্ভব নয় বলে মোদীকে জানিয়ে দেন সেনাকর্তারা।

সুতরাং সুর নরম করতে হয়েছে মোদীকে। আজ সকালে দিল্লিতে সেনাকর্তাদের সঙ্গে আরও এক প্রস্ত বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। তার পর কোঝিকোড়ে বিজেপির জাতীয় পরিষদের বৈঠক উপলক্ষে জনসভায় বললেন, ‘‘শান্তি ও শুভবুদ্ধিই কেবল আমাদের ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করতে পারে। যুদ্ধে দুর্দশা বাড়ে।’’

আর মোদী এ কথা বলার পরেই প্রশ্ন উঠেছে ঘরে-বাইরে। মোদী-বিরোধীদের বক্তব্য, যুদ্ধ যে কোনও সমাধান নয়, সেটা তো জানা কথাই। তা হলে কেন এত দিন যুদ্ধের জিগির তুলতেন— জবাব দিন মোদী। হতাশা চাপা থাকছে না বিজেপির অন্দরেও। যে অস্ত্রে এত দিন কংগ্রেসকে আক্রমণ করা হতো, তা এ ভাবে মাঠে মারা যেতে দেখে। সরকারি ভাবে অবশ্য দল বলছে, প্রকৃত রাষ্ট্রনেতার মতোই আচরণ করেছেন মোদী।

নিজের হাত-পা যে বাঁধা, সে কথা বুঝতে পেরে মোদী আজ আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন কৌশলে যতটা সম্ভব জমি রক্ষা করার। এক দিকে বলেছেন, উরিতে ১৮ জন জওয়ানের বলিদান বৃথা যাবে না। পাকিস্তানকে গোটা বিশ্বে এক ঘরে করে তিনি বদলা নেবেন। অন্য দিকে আবার সে দেশের শাসনকর্তাদের এড়িয়ে সরাসরি আম-জনতার সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির চেষ্টা করেছেন। যার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের নেতারা সন্ত্রাসবাদীদের লিখে দেওয়া বক্তৃতা পড়েন, বিশ্ব তাদের কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা করে না। এর পরেই পাক জনতার উদ্দেশে মোদীর আহ্বান, ‘‘নেতাদের প্রশ্ন করুন— ভারত গোটা বিশ্বে সফ্‌টঅয়্যার রফতানি করে, আর আপনাদের দেশ কেন সন্ত্রাস?’’

কিন্তু সেই কৌশল ঘিরেও প্রশ্ন কম নয়। কংগ্রেস নেতা রেণুকা চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তো পাকিস্তানের বিরোধী দলনেতার মতো কথা বলছেন! পাকিস্তানের জনতাকে লড়িয়ে দিতে চাইছেন পাক সরকারের বিরুদ্ধে। নিজের দায় এড়াতে এ কী কৌশল?’’

আসলে জাতীয়তাবাদের হাওয়া ধরে রাখা এই মুহূর্তে মোদীর সবচেয়ে বড় দায়। কারণ জাতীয়তাবাদই তাঁর এবং বিজেপি-র অন্যতম বড় হাতিয়ার। আজ সেই অস্ত্র যদি ভোঁতা বলে প্রতিপন্ন হয়, তা হলে সামনের উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাতের বিধানসভা ভোটে তো বটেই, লোকসভা ভোটেও বড় ধাক্কা খেতে হতে পারে। বিরোধীদের মতে, তাই মোদী আজ কথার কারসাজিতে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, জাতীয়তাবাদের এজেন্ডা থেকে তিনি সরে আসেননি। মোদীর কথায় ‘‘সীমান্তে যে জওয়ানরা নিরন্তর লড়াই করছেন, তাঁদের আসল শক্তি অস্ত্র নয়। আসল শক্তি হল মনোবল। গোটা দেশ যদি সেই মনোবল আরও বাড়াতে পারে, তা হলে সেটিই হবে যথার্থ জাতীয়তাবাদ।’’

কিন্তু এহেন কৌশলী ডাকে কার্যোদ্ধার হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় শাসক দলের অন্দরেই। মোদীর বক্তৃতার গুছিয়ে জবাব দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে কংগ্রেস।  তাঁর অতীত বক্তৃতার প্রসঙ্গ তুলে কটাক্ষ যে আসতে চলেছে, সেটা জানা কথাই। কী ভাবে তার মোকাবিলা  করা হবে, সেই জল্পনা শুরু হয়েছে বিজেপি-তেও। কিন্তু তার থেকেও বড় চিন্তা আমজনতার মোহভঙ্গের ভয়। গত কয়েক দিন ধরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ চেয়ে দেশ জুড়ে প্রত্যাশা প্রবল হয়েছে। আজ তাতে জল পড়ে যাওয়ার পরে ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতির মোদী-ব্র্যান্ড কতটা টোল খাবে তা নিয়েই আশঙ্কা বিজেপি শিবিরে।

সেই আশঙ্কাই উস্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার পরে শহিদ জওয়ান দীনেশ গিরির স্ত্রী সরিতা বলেছেন, ‘‘মৃত জওয়ানের পরিবারই শুধু যন্ত্রণা বুঝতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, পাকিস্তানকে মোক্ষম জবাব দেওয়া উচিত।’’

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ