মুসলিমদের সঙ্গে নিয়েই ট্রামকে পিছনে ফেলেন হিলারি

মিরু শিকদার, যুক্তরাস্ট্র প্রতিনিধি, এবিসিনিউজবিডি,

ঢাকাঃ প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে মুসলিমদের নিয়েই এগিয়ে গেলেন হিলারি ক্লিনটন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় সময় সোমবার (সেপ্টেম্বর ২৭) রাতে নিউইয়র্কের হফস্ট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে প্রথমবারের মত মুখোমুখি হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটন।

হিলারির মতে, সব মুসলিমকেই শত্রু ভাবাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ইসলামি সন্ত্রাসবাদের জন্য সব মুসলিমকে দোষারোপ করাটাও বিচক্ষণতার কাজ নয়। আমেরিকায় যে মুসলিমরা রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে নিয়েই ইসলামি সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করার কাজে তিনি নামতে চান বলে জানিয়ে দিলেন আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন।

হিলারি জানালেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ইসলামি সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করাটাই হবে মার্কিন প্রশাসনের ‘প্রাইম টার্গেট’। প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। আর জানালেন, সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)-কে চলতি বছরেই ইরাক থেকে ধুয়েমুছে সাফ করবেন তিনি। তার অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই মিত্র দেশগুলিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি আইএস-কে সিরিয়া-ছাড়া করবেন।

এদিকে, বিতর্ক পরবর্তী জনমত জরিপেও বিষয়টি প্রতিফলিত হচ্ছে। সিএনএন এর জরিপে দেখা গেছে, বিতর্ক উপভোগকারী ভোটারদের ৬২ শতাংশ হিলারি ক্লিনটনের বক্তব্যে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে মাত্র ২৭ শতাংশ ভোটার মনে করেন রাতটি ছিলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের।

কে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন হিলারি না ট্রাম্প, এমন প্রশ্নে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটার হিলারির পক্ষে রায় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে মাত্র এক তৃতীয়াংশ ভোটার ট্রাম্পে সন্তুষ্ট।

কে সবচেয়ে ভালো কর্মসংস্থান করতে পারবেন,এই প্রশ্নে ৫৭ শতাংশ ভোটার হিলারির বক্তব্যে আস্থা রেখেছেন, অপরদিকে মাত্র ৩৫ শতাংশ ভোটার এ ব্যাপারে ট্রাম্পকে যোগ্য মনে করছেন।

শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রশ্নেও হিলারি বিতর্কে পেছনে ফেলেছেন ট্রাম্পকে। ৫৬ শতাংশ ভোটার হিলারিকে এবং ৩৯ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে বিতর্কে শক্তিশালী নেতা হিসেবে রায় দিয়েছেন।

মঙ্গলবারের ডিবেটেই সঞ্চালক (মডারেটর) লেস্টার হল্টের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। কী ভাবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় নামবে তাঁর প্রশাসন, এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরাসরি বিঁধেছেন হিলারি। বলেছেন, ‘‘উনি (ট্রাম্প) দেশে (আমেরিকা) ও বিদেশে থাকা মুসলিমদের সম্পর্কে লাগাতার অপ্রীতিকর মন্তব্য করে চলেছেন। তাঁদের অপমান করে চলেছেন। আমি মুসলিমদের আস্থা ফিরে পাওয়ার ওপরেই বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছি। গুরুত্ব দেব। এই ভাবেই আমেরিকায় ইসলামি সন্ত্রাসবাদকে আরও বেশি করে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যাবে। যদি কিছু থেকেও থাকে, মার্কিন মুলুকে থাকা মুসলিমদের সেই ন্যূনতম সমর্থনটুকুও হারাবে ইসলামি সন্ত্রাসবাদ। আর এটাই ইসলামি সন্ত্রাসবাদকে অসাড় করে দেওয়ার সেরা হাতিয়ার হতে পারে। পাশাপাশি গোয়েন্দা-জালটাকে আরও নিখুঁত করে তুলব। আর সেই জালটাকে আরও বেশি করে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত ছড়িয়ে দেব। ছড়িয়ে দেব ইউরোপেও। যাতে খড়ের গাদা থেকেও ছুঁচ খুঁজে বের করা যায়।’’

এ ব্যাপারে কী ভূমিকা হবে ট্রাম্প প্রশাসনের?

মডারেটরের প্রশ্নের জবাবটা সুকৌশলে কিছুটা এড়িয়ে গিয়ে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘আমার মতামতটা আমি তো আগেই দিয়েছি। অনেক বার দিয়েছি। একই কথা…’’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের যাঁরা বিশেষজ্ঞ, তাঁরা বলছেন, সন্ত্রাসবাদ দমনের কৌশল বাতলে প্রথম দানেই বাজিমাত করে দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন।

মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে আরও বেশি করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা ও আয়কর প্রসঙ্গেও দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিলারি ও ট্রাম্পের অবস্থানের ফারাকটা ধরা পড়েছে এ দিনের বিতর্কে। যেমন ফারাক ধরা পড়ছে বন্দুক আইন কঠোরতর করার প্রশ্নেও। হিলারি স্পষ্টই জানিয়েছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ধনীদের ওপর অনেক বেশি করে আয়করের বোঝা চাপাবেন। নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাটাও হবে তাঁর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। আর এই প্রশ্নে মেক্সিকো নিয়ে ট্রাম্পের ‘রক্ষণশীলতা’ আরও বেশি করে প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। আর বন্দুক আইন কঠোরতর করার ব্যাপারে যতটা দৃঢ়তা হিলারির কথায় বেরিয়ে এসেছে, তার বিন্দুমাত্র লেশ ছিল না ট্রাম্পের জবাবে।

 

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ