মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপিকে দমানো যাবেনা
সাইফুর রহমান, প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকাঃ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাতে বাংলাদেশে ফিরতে না পারেন সেজন্য একের এক মিথ্যা মামলা দিচ্ছে সরকার। তবে মিথ্যা মামলা দিয়ে আর পরোয়ানা জারি করে বিএনপিকে দমানো যাবে না।
৪ অক্টোবর (সোমবার) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে ঢাকা মহানগর বিএনপির আয়োজনে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ সমাবেশে দলটির নেতারা একথা বলেন।
তারেক রহমানকে নির্যাতন প্রসঙ্গে মির্জা আলমগীর বলেন, এই সরকার জনগণকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। এ জন্যই তারা একই সাথে তারেক রহমান যাতে ফিরতে না পারে, তাই বিগত ওয়ান ইলেভেনের মত বর্তমান সরকারও মিথ্যা মামলায় সাজা দিচ্ছে। তারা আসলে দেশে ভয়ঙ্কর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু আমরা জানি নমরুদ, ফেরাউন, হিটলার, মুসোলিনি, আইয়ুব খান এবং এরশাদও নির্যাতন করে ক্ষমতা থাকতে পারেনি। আমরা আবারো প্রমাণিত করবো, দমনপীড়ন করে অতীতে কেউ পারেনি, আওয়ামী লীগও পারবে না। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বক্তারা বলেন, তারেক রহমান যখন থেকেই রাজনীতিতে এসে তার পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন থেকেই এই কুচক্রি মহল এবং আওয়ামী লীগ তাকে বেশি ভয় পায়। সরকারের নির্যাতন উপেক্ষা করে দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষায় ঘরে বসে না থেকে আবারো রাজপথের আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে সরকার আলোচনায় বসতে বাধ্য হবে বলে তারা মনে করেন।
ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগরীর নেতা কাজী আবুল বাশার, মহিলা দলের নেত্রী হেলেন জেরিন খান, রফিকুল ইসলাম মজনু প্রমুখ।
এ ছাড়া মঞ্চের সামনের সারিতে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল ইসলাম বাবুল, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মহিলা দলের সেক্রেটারি সুলতানা আহমেদ, তানভীর আহমেদ রবিন, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুগ্ম সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, মহানগর বিএনপি নেতাদের মধ্যে জয়নাল আবেদীন রতন, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, আতাউর রহমান (চেয়ারম্যান), ফরিদ উদ্দিন, হারুনুর রশিদ, এ কে এম মোয়াজ্জেম হোসেন, মাহফুজ হোসাইন খান সুমন, আলী আহমেদ রাজু, সাইদুর রহমান সাইদ, মোয়াজ্জেম হোসেন খান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার অবলীলায় মানুষ হত্যা করছে। তাই তো আমাদের দলের কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যার বিরুদ্ধে মামলা নেই। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত একই অবস্থা। এভাবে এই সরকার দেশকে জেলখানা এবং মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করেছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে ভারতের এক মন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়েছেন। অর্থাৎ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করার মত একটা অবস্থান তৈরি করেছেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী অনেক কথার মধ্যে একটি কথা বলেছেন, তিনি খুব ক্লান্ত, তার বিশ্রাম দরকার। ক্লান্ত তো হবেনই। কারণ, এত শেয়ারবাজার, হলমার্কসহ নানা দুর্নীতির টাকা, খুন-গুম, হামলা-মামলা, নির্যাতনের হিসাব রাখা। এসব কিছু মিলে ক্লান্ত তো হওয়ার কথাই। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি কি মুক্তি চান? দেশের জনগণ আপনাকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আপনি মনে মনে কেটে পড়ুন। যাতে সামনের দিনে আপনি শান্তিতে বসবাস করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করুন। নির্বাচন কমিশনের সাথে আপনিও আপনার সরকারের মেয়াদ শেষ বলে ঘোষণা দিন।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বারবার আদালতে হাজিরা দিয়ে মজা পায়, বিএনপি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও রিজভী আহমেদসহ সিনিয়র নেতাদের বারবার কারাগারে নিয়ে সরকার আনন্দ পায়। তাদের এসব কর্মকাণ্ডে মানুষ আজ ক্ষুব্ধ।
সরকার দেশকে একটি পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সুকৌশলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে তারা সরকার গঠন করেছে। যার কারণে তারা দেশের স্বার্থ বিরোধী কাজ করতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে বিগত আন্দোলন প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, ব্যর্থতার দায় দায়িত্ব আমাদের ঘারে আসতে পারে, আমরা পারি নাই। অনেক কিছু পারি নাই- যা করা উচিত ছিলো। সরকার নির্যাতনের সীমানা দেখে বুঝছি, সরকার কতটা বিপদে আছে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়। হয়তবা আমাদের নেতৃত্বেই এ সরকারের বিদায় হবে।