প্রধান অর্থদাতাসহ মোট ১১ জঙ্গি নিহত
নিউজ ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : ঢাকার আশুলিয়ার গাজিরচট এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব-৪) সদস্যরা।
৮ অক্টোবর (শনিবার) সন্ধ্যায় চালানো এ অভিযানে পাঁচতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে নাজমুল হক ওরফে আবদুর রহমান নামের এক ‘জঙ্গি’ মারা গেছেন। নাজমুলকে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন নব্য জেএমবির মূল অর্থদাতা।
র্যাব সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে র্যাব শনিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে র্যাব গাজীরচটের বসুন্ধরা এলাকার আমির মৃধার বাড়ির পাঁচতলার একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালায়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে নাজমুল বারান্দার গ্রিল কেটে পাঁচতলা থেকে নিচে লাফিয়ে পড়েন। র্যাবের তত্ত্বাবধানে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশের বিশেষ অভিযানে একদিনে দেশে ১১ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। গাজীপুরের পৃথক দুই অভিযানে ৯ এবং টাঙ্গাইলের অন্য আরেকটি অভিযানে আরো ২ জঙ্গি নিহত হয়। গাজীপুরের দুটি অভিযানের মধ্যে পাতারটেকের অভিযানে ৭ এবং হাড়িনালে ২ জঙ্গি নিহত হয়েছে।
গাজীপুরের পাতারটেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে সাত জঙ্গি নিহত হয়েছে। জঙ্গিরা অবস্থান করছে এমন খবরে শনিবার সকালে গাজীপুরের ওই বাড়িতে অভিযানে নামে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান ‘অপারেশন শরতের তুফান’-এ ওই আস্তানায় থাকা সাত জঙ্গি নিহত হয়।
সকাল ১০টার দিকে অভিযান শুরুর পর জঙ্গিরাও পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছিল। কিন্তু কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, সোয়াত, বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও জেলা পুলিশের যৌথ অভিযানে শেষ পর্যন্ত ৭ জঙ্গি নিহত হয়। নিহত ৭ জঙ্গির মধ্যে একজন নিউ জেএমবি’র বাংলাদেশ প্রধান আকাশ। ঘটনাস্থলে থেকে বেশ কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধারের কথাও জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার।
এর আগে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটা-চারটার দিকে গাজীপুর হারিনালের পশ্চিমপাড়ায় একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এই অভিযান চলে বেলা তিনটা পর্যন্ত।
পরে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, হারিনালের পশ্চিমপাড়ায় ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে একটি বাড়িতে র্যাবের অভিযান চলাকালে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছেন। বাড়ির মালিক জানিয়েছেন, তাদের নাম রাশেদ মিয়া ও তৌহিদুল ইসলাম। তাদের বাড়ি নরসিংদীতে।
অন্যদিকে টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার কাগমারা মির্জামাঠ এলাকায় একটি ভবনে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালিয়েছে র্যাব। অভিযানে ২ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
র্যাব-১২-এর তিন নম্বর কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকীর ভাষ্য, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বাড়িটিতে সকাল ১০টার দিকে অভিযান চালানো হয়। ভেতরে ঢোকার পর এক ‘জঙ্গিকে’ গ্রেপ্তার করতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় অন্য ‘জঙ্গিরা’ র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার চেষ্টা চালায়। র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে দুজন ‘জঙ্গি’ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। বেলা দেড়টার দিকে বোমা বিশেষজ্ঞ দলকে নিয়ে ভেতরে ঢোকে র্যাবের দল। এরপর তারা লাশ দুটি বের করে নিয়ে আসে। এখন লাশ টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। ঘর থেকে একটি পিস্তল, একটি রিভলবার, ১০টি চাপাতি, দুটি ছুরি ও ৬৪ হাজার ৯০০ টাকা উদ্ধার হয়েছে।
ওই বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আজাহার আলী বলেন, ছাত্র পরিচয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর তারা বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষ ভাড়া নেয়। এ সময় তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হলে বলে দু–এক দিনের মধ্যে দিয়ে দেবে।
এদিকে নাজমুলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাভারের সাংসদ এনামুর রহমান। অভিযানের সময় র্যাব ওই বাড়ি থেকে নাজমুলের স্ত্রী সাহানাজ আকতার ওরফে রুমা এবং তাদের দুই ছেলে ও এক কন্য শিশুকে আটক করেছে। এ সময় ৩০ লাখ টাকাসহ একটি পিস্তল, মুঠোফোন জ্যামার, অস্ত্র বানানোর নকশা, বিপুল পরিমান জিহাদি বই ও ছোরা উদ্ধার করা হয়।
অভিযান শেষে ঘটনাস্থলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ বলেন, আইনুল পরিচয়ে নাজমুল ছয় মাস আগে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। বাড়ির মালিককে তিনি নিজেকে ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।
ব্রিফিংয়ে আরও বলা হয়, নাজমুল প্রতিটি জঙ্গি হামলায় অর্থের যোগান দিয়ে আসছিলেন।