দু’দেশের বন্ধুত্বের নতুন দিগন্ত
আনোয়ার আজমী, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ‘সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ নিয়ে যেতে একমত হয়েছেন। দুই নেতা নিজেদের মধ্যকার বৈঠককে ফলপ্রসূ অভিহিত করে বলেন, দু’দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের ফলে বন্ধুত্বের সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায় উপনীত হলো।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক এবং ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর গণমাধ্যমের সামনে দেয়া যৌথ বিবৃতিতে শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। আনুষ্ঠানিক আলোচনার পর গণমাধ্যমের সামনে শি জিনপিং তাঁর বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে চীন দীর্ঘস্থায়ী কৌশলগত অংশীদারিত্বের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়। দুই দেশের বন্ধুত্ব ও অংশীদারত্ব অত্যন্ত চমৎকার অভিহিত করে তিনি বলেন, ২০১৭ সাল হবে দুই দেশের মধ্যে আদান-প্রদান ও বন্ধুত্বের বছর।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমের সামনে দেয়া বক্তৃতায় বলেন, দুই দেশ সহযোগিতার নিবিড় সমন্বিত অংশীদারিত্বকে দুই দেশ সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বে নিতে রাজি হয়েছে। কৌশলগত অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের আর্থসামাজিক অগ্রগতিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শি জিনপিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, আমি খুব খুশি ছয় বছর পর বাংলাদেশের মতো একটি সুন্দর দেশ সফর করতে পেরেছি। চীন ও বাংলাদেশ ভালো প্রতিবেশী, ভালো বন্ধু এবং ভালো অংশীদার। আমি মনে করি, এই সফর সামগ্রিকভাবে দুই দেশের অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়ে নানা চুক্তি সই হয়েছে।
তিনি বলেন, কৌশলগত যোগাযোগের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক কীভাবে আরও উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। দুই নেতার বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতে নিজ নিজ দেশের পক্ষে দুই দেশের প্রতিনিধিরা ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছেন। এর মধ্য দিয়ে ওয়ান বেল্ট-ওয়ান রোড উদ্যোগ, অবকাঠামো, সড়ক, রেল, জলপথ, আইসিটি, তথ্য, মেরিটাইম সহযোগিতা ইত্যাদিসহ নতুন কয়েকটি ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। দুনেতা চুক্তি স্বাক্ষরের পর উদ্বোধন করেন ৬ প্রকল্প। প্রকল্পগুলো হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইনস্টিটিউট স্থাপন, কর্ণফুলী নদীর নিচে একাধিক লেনের টানেল নির্মাণ, পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, চার স্তরের জাতীয় তথ্যভান্ডার, চট্টগ্রামে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং শাহজালাল সার কারখানা নির্মাণ প্রকল্প। সমঝোতা স্মারক স্মারকগুলো হলো, দুর্যোগ মোকাবিলা ও হ্রাসকরণ, সেতু নির্মাণ, বিনিয়োগ ও উৎপাদন সক্ষমতা সহযোগিতা, বাংলাদেশ-চীন মুক্তবাণিজ্য চুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাই, সামুদ্রিক সহযোগিতা ও দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সহযোগিতা, ইনফরমেশন সিল্ক রোড, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সহযোগিতা এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা সহযোগিতা। সই হওয়া দুটি রূপরেখা চুক্তি হলো কর্ণফুলী নদীর নিচে একাধিক লেনের টানেল নির্মাণ ও দাশেরকান্দিতে সাগরকেন্দ্রিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট।
এ দুটি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য চারটি পৃথক ঋণচুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এ ছাড়া উৎপাদন সক্ষমতা সহযোগিতা চুক্তিও সই হয়েছে। সফরের সময় চারটি অর্থনৈতিক চুক্তি সই হয়েছে। এগুলো হলো পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, চীনের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল, ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে প্রশস্তকরণ প্রকল্প, ব্রডকাস্টিং লাইসেন্স প্রটোকল চুক্তি। এ ছাড়া দ্বিস্তরের পাইপলাইন-সমৃদ্ধ পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করা এবং ডিপিডিসি এলাকা ও পাঁচটি টেলিভিশন স্টেশনের মধ্যে পাওয়ার সিস্টেম বর্ধিতকরণ চুক্তি।